আরামবাগ মহকুমাকে বাদ দিলে জেলার অন্যান্য এলাকা থেকে কলকাতাগামী সরকারি বাস পরিষেবা এতদিন কার্যত ছিল না। এই নিয়ে হুগলির মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভও দীর্ঘদিনের, সেই বাম আমল থেকে। বলাবাহুল্য, নতুন সরকারের আমলেও এতদিন সেই ক্ষোভ বজায় ছিল। অবশেষে জেলাবাসীর দাবি মিটতে চলেছে। বাস চালু করা নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা হয়েছে। সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। সম্ভবত সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই এ বার বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। আজ বৃহস্পতিবার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা কলকাতাগামী ৮টি ভিন্ন রুটের বাসের উদ্বোধন করার কথা ডানকুনির সভায়।
ট্রাম কোম্পানির চেয়ারম্যান ও জেলার বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে হুগলি থেকে মোট ২৯টি ট্রাম কোম্পানির নতুন বাস চলবে। আমাদের আশা, এই সব নতুন রুটের মাধ্যমে জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে। তাঁদের যাতায়াতেও সুবিধা হবে।’’
হুগলি থেকে সরকারি বাস সে ভাবে না মেলায় মানুষজন মূলত সড়ক ছেড়ে ট্রেনপথেই যাতায়াতে অভ্যস্ত। স্টেশন থেকে যাঁদের বাড়ির দূরত্ব অনেক বেশি সমস্যাও তাঁদেরই বেশি। নতুন বাসরুট চালু হলে হুগলি থেকে কলকাতা বা সল্টলেকে যাতায়াত সহজতর হবে। এতদিন কলকাতায় যেতে হলে ট্রেন ছাড়া বিকল্প পথ ছিল না।
তবে দীর্ঘদিনের দাবি পূরণে খুশির পাশাপাশি আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন অনেকে। উত্তরপাড়ার প্যারীমোহন কলেজ এলাকার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘উত্তরপাড়া থেকে সরাসরি সল্টলেক যেতে পারলে তো খুবই ভাল। কিন্তু সরকারি রুটের ক্ষেত্রে বহু সময় দেখা যায় কিছুদিন পর থেকেই বাসের সংখ্যা কমছে। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি যা দাঁড়ায় তাতে না চললেও কিছু এসে যায় না। আমরা আশা করব, মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখে নতুন রুটে বাস ভালভাবে চলবে।’’ যদিও এ ধরনের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন তপনবাবু। তিনি বলেন, ‘‘এখন মোট ২৯টি বাস দিয়ে সব রুটগুলি চালু করা হচ্ছে। পরবর্তী পর্যায়ে যে রুটে ভাল সাড়া মিলবে সেখানে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে। আমরা বাস রুটগুলি গুরুত্ব দিয়েই চালাতে চাইছি।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, নয়া রুটে জাঙ্গিপাড়ার ফুরফুরা থেকে ডানকুনি হয়ে বারাসত যাবে একটি বাস। বর্তমানে হুগলি থেকে একাধিক বাস বদলে তবে বারাসত যান অনেকে। নতুন রুটে এ বার সরাসরি বারাসতে পৌঁছতে পারবেন যাত্রীরা। এছাড়াও শ্রীরামপুর থেকে দক্ষিণেশ্বর হয়ে সল্টলেকের ইকো পার্ক যাবে আরও একটি রুটের বাস। এতদিন সাধারণত হুগলি থেকে শিয়ালদহগামী ডানকুনি শাখার ট্রেন ধরেই উল্টোডাঙা হয়ে সল্টলেকে যেতেন মানুষজন। ওই শাখায় ট্রেনের সংখ্যাও হাতে গোনা। ফলে অসুবিধা হতো। এখন নতুন ওই রুটে বাস চলাচলে য়োঘাযোগের সুবিধা হবে। এ ছাড়া, কলকাতা থেকে কামারপুকুর হয়ে জয়রামবাটিতে যাবে একটি রুটের বাস। সারা বছরই পর্যটকরা এই দুই জায়গায় ভিড় করেন। কামারপুকুর হুগলির গোঘাটে। জয়রামবাটি হুগলি লাগোয়া বাঁকুড়ায়। এ বার সরকারি বাস চালু হলে যাত্রীদের পাশাপাশি পর্যটকেরা উপকৃত হবেন।
একইভাবে জেলা সদর চুঁচুড়া থেকে সরাসরি কলকাতার ধর্মতলায় যাওয়া যাবে। জেলা সদর থেকে এবার কল্যাণী যাওয়াও সহজ হবে নতুন বাস রুট চালু হওয়ায়। বাসটি বাঁশবেড়িয়া হয়ে কল্যাণী স্টেশন পর্যন্ত যাবে। জেলার আরও দর্শনীয় স্থান জাঙ্গিপাড়ার আঁটপুর থেকে কলকাতার ধর্মতলা পর্যন্ত চালু হচ্ছে নতুন বাস। উত্তরপাড়া থেকে সল্টলেক পর্যন্ত চলাচল করবে ট্রাম কোম্পানির বাস। বাসটি উত্তরপাড়া কলেজের কাছ থেকে ছাড়বে।