লোকসভা নির্বাচনের মোদী হাওয়া আর নেই। ওই ভোটে ঝোড়ো ইনিংস খেলা তিনিও এখন আর বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদে নেই। কিন্তু বিধানসভা ভোট আসন্ন। তাই ফের প্রচারের আলো কাড়তে উদ্ভট তত্ত্ব দিলেন অধুনা বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ!
মেদিনীপুরে দলের জেলা কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার রাহুলবাবু দাবি করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শেই বাংলায় কংগ্রেস-সিপিএম জোট হতে চলেছে! কিন্তু এতে তো তৃণমূলেরই সমূহ বিপদ? তা মানতে নারাজ রাহুলবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘তৃণমূল নেত্রী নবান্নে ডেকে সিপিএম নেতাদের বন্ধ পার্টি অফিস খোলো, মাঠে নামো, কত পরামর্শ দিয়েছিলেন। এখন উনিই সিপিএমকে নির্দেশ দিয়েছেন, কংগ্রেসকে যে ভাবে হোক, জোটের মধ্যে আনো। জোটের হাওয়া তৈরি করে বিজেপি-র পাল থেকে বিরোধী ভোট টানতে তৃণমূলের এটা একটা চাল।” তাঁর বক্তব্য, ‘‘এখানে লড়াইটা তৃণমূলের সঙ্গে সরাসরি বিজেপি-র। সে জন্যই জোটকে সামনে এনে রাজনৈতিক পরিবেশ গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে তৃণমূল।’’ অর্থাৎ তাঁর কথার মানে, নিজের নাক কেটে বিজেপি-র যাত্রা ভঙ্গ করাবে বলে বাম-কংগ্রেস জোট করাচ্ছে তৃণমূল।
লোকসভা ভোটে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ভাল ফল করলেও গত বছর পুরভোট থেকেই তাদের জনপ্রিয়তা কমছে। এখন জনমত সমীক্ষা বলছে, বিধানসভায় বিজেপির ফল ভাল হবে না। এই অবস্থায় রাহুলবাবুর এই ব্যাখ্যায় বিস্মিত অনেকেই। বিজেপি-রই একাংশের ব্যাখ্যা, রাজ্য সভাপতি হিসেবে রাহুলবাবু লোকসভা ভোটের ভাল ফলের ফায়দা তুলতে পারেননি। উল্টে তাঁর বিরুদ্ধে সংগঠন মজবুত করতে না পারার অভিযোগ উঠেছে। গত ডিসেম্বরে তাঁকে সরিয়ে রাজ্য সভাপতি করা হয় দিলীপ ঘোষকে। সেই থেকে রাহুলবাবু অনেকটাই ম্রিয়মাণ। তাই ভোটের আগে বিস্ময়কর তত্ত্ব দিয়ে আলোড়ন ফেলতে চাইছেন। জেলা বিজেপি-র এক নেতা বলেন, ‘‘রাহুলবাবু নিজেও জানেন, হাতে হাতুড়ি উঠলে পদ্ম কুঁকড়ে যাবে। তবু ভোটের আগে বাজার গরম করছেন!’’ নতুন সভাপতি দিলীপবাবু অবশ্য রাহুলবাবুর এই তত্ত্বে বিস্মিত নন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এই ব্যাখ্যা অনেকটাই ঠিক। কারণ, আমরা যখন লড়াই করলাম, তখন বামেদের বিক্ষোভে লাঠিচার্জ করে তাদের গুরুত্ব দেওয়া হল। এখনও বিজেপি-র বিরুদ্ধে এই চক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে।’’ বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য রাহুলবাবুর তত্ত্ব নিয়ে মন্তব্য এড়িয়ে শুধু বলেন, ‘‘এই জোট হাঁসজারু জোট।’’
বিরোধীরাও রাহুলবাবুকে কটাক্ষ করেছে। কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘‘ওঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই হয়তো এ সব বলছেন!’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক সরকারের কটাক্ষ, “হয়তো মতিভ্রম হয়েছে! বিজেপি-র সঙ্গে এখন তৃণমূলের সম্পর্ক কী, তা মানুষ জানেন।” একই সুরে তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পদ ও পথ হারিয়ে রাহুল সিংহ মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। একটা শিশুও যা বলবে না, উনি তাই বলছেন।’’