দক্ষিণেশ্বরে ভবতারিণীর মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। ছবি: সুমন বল্লভ।
৪০০ মিটার লম্বা এবং রাস্তা থেকে সাড়ে পাঁচ মিটার উঁচু। দশ মিটার চওড়া। সঙ্গে ত্রিমাত্রিক আলকসজ্জা। এমনই আধুনিক ধাঁচের একটি স্কাই ওয়াক তৈরি হতে চলেছে দক্ষিণেশ্বরে। ভারতে যা প্রথম।
মঙ্গলবার দক্ষিণেশ্বর মন্দির চত্বরের মঞ্চে এই প্রকল্পেরই সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই এলাকা কামারহাটি পুরসভার অন্তর্ভুক্ত। ক’দিনের মধ্যেই এখানকার নির্বাচন নির্ঘণ্ট ঘোষিত হবে।
কলকাতা পুরভোট ঘোষণার আগে ইতিমধ্যে তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের সূচনা করেছেন। এ বার রাজ্যের অন্যান্য পুরসভার নির্বাচন ঘোষণার আগে স্কাই ওয়াকের সঙ্গে আরও দু’টি প্রকল্পের সূচনা করেন তিনি। একই মঞ্চে জাতীয় গেমস্-এ পদক জয়ীদের এই প্রথম রাজ্য সরকারের তরফে পুরস্কার ও অর্থ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান শেষে মা ভবতারিণীর মন্দিরে গিয়ে পুজোও দেন মমতা।
দক্ষিণেশ্বর রেল স্টেশন এবং বাস স্ট্যান্ড চত্বর থেকে মন্দিরে ঢোকার একমাত্র পথ হচ্ছে সঙ্কীর্ণ রানি রাসমণি রোড। সেই রাস্তার দু’ধারে হরেক রকমের দোকান। দখল হয়ে গিয়েছে ফুটপাথ। ফলে সরু রাস্তায় অনবরত চলাচল করে যানবাহন। তার ভিতর দিয়েই রোজ হেঁটে মন্দিরে যান হাজার-হাজার দর্শনার্থী। যার জেরে দিনভর যানজট রোজের সমস্যা দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের সামনে।
দীর্ঘ দিন ধরেই ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য রাজ্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছিলেন দক্ষিণেশ্বর মন্দির কর্তৃপক্ষ। ২০১২ সালে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে এক অনুষ্ঠানে এসে মুখ্যমন্ত্রী ওই যানজট সমস্যা মেটাতে কেএমডিএ-কে একটি ‘আন্ডার-পাস’ তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই এলাকায় তেমন আন্ডার পাস তৈরি সম্ভব কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরবর্তী কালে কেএমডিএ-ও প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে আন্ডার পাস তৈরির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। তখনই পরিকল্পনার বদল করা হয়। সিদ্ধান্ত হয় দক্ষিণেশ্বরে ঢোকার রাস্তায় যানজট কমাতে ‘স্কাই ওয়াক’ তৈরি করা হবে। এ দিন প্রকল্পের সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যাঁরা সঠিক দাবিদার, তাঁদের পুনর্বাসন দিয়েই স্কাই ওয়াক তৈরি করা হবে।”
কেএমডিএ সূত্রে খবর, দক্ষিণেশ্বর রেল স্টেশন থেকে শুরু করে মন্দিরের মূল গেট পর্যন্ত যাবে ওই স্কাই ওয়াক। স্কাই ওয়াকে ওঠার পথ থাকবে অটো স্ট্যান্ড এবং বাস স্ট্যান্ডের দিকেও। পথচারীদের হাঁটার জন্য ৬ মিটার জায়গার সঙ্গে স্কাই ওয়াকের উপরেই চার মিটার মতো ছাড়া থাকবে দোকানের জন্যও। গোটা স্কাই ওয়াক ঢাকা থাকবে বিশেষ ছাউনি দিয়ে।
নীচে রানি রাসমণি রোড দিয়ে শুধুমাত্র যানবাহন চলাচল করবে। সেই রাস্তার দু’ধারে রিকশা, সাইকেল চলাচলের জন্য তৈরি হবে আলাদা লেন। তৈরি হবে অটো ও রিকশার নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডও। স্কাই ওয়াকে ওঠা-নামার জন্য ৬টি জায়গা মিলিয়ে ১২টি চলমান সিঁড়ি, চারটি লিফ্ট থাকবে। এ ছাড়াও থাকবে আটটি সিঁড়ি। গোটা প্রকল্পে খরচ হবে ৬৫ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা। কাজ শেষ হবে দেড় বছরে। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ দিন বলেন, “এমন আধুনিক স্কাই ওয়াক প্রকল্প ভারতে এই প্রথম।”
মুখ্যমন্ত্রী এই প্রকল্পের সূচনা করে বলেন, “দক্ষিণেশ্বর ও বেলুড় মঠ আর্ন্তজাতিক মানের দর্শনীয় স্থান। যত দ্রুত সম্ভব এই কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হবে। দক্ষিণেশ্বর জেটি তৈরি হয়ে গিয়েছে। লঞ্চ পরিষেবা চালু হয়েছে। এর ফলে দক্ষিণেশ্বরের সঙ্গে বেলুড় মঠ সংযুক্ত হয়ে গিয়েছে।”
মন্দির এলাকার উন্নয়নের প্রসঙ্গে দমদম থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রো রেল সম্প্রসারণ নিয়েও কৃতিত্ব দাবি করেন মমতা। তিনি বলেন, “দক্ষিণেশ্বর থেকে নোয়াপাড়া হয়ে দমদম পর্যন্ত মেট্রো রেল কিন্তু আমিই করে গিয়েছিলাম।” মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও এ দিন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ, পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বরাহনগরের বিধায়ক তাপস রায়, স্থানীয় চেয়ারম্যান গোপাল সাহা-সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের পরে মা ভবতারিণীর মন্দিরে গিয়ে পুজো দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “আজ মঙ্গলবার, মায়ের বার। তিনিই আমাকে আজ এখানে টেনে এনেছেন।” ভবতারিণী মন্দিরে নীল বেনারসী, মিষ্টি দিয়ে পুজো দেন মমতা। মা ভবতারিণীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে ফুল দিয়ে তিনি বলেন, “মা আমাকে শক্তি দাও।” সেখানে অন্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের অছি পরিষদের সম্পাদক কুশল চৌধুরী।