শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
পাহাড় এবং সমতল মিলিয়ে দার্জিলিং জেলার উন্নয়নে কোথায় কী কাজ করতে হবে, সেই নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-ভানু মঞ্চে দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ের বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ নিয়ে খোঁজ খবর নেন। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন কাজ করতে দেরি হচ্ছে, তা জানতে চান তিনি। কোথাও নির্দিষ্ট কাজের কথা বলে তা দ্রুত করতে নির্দেশ দেন। বৈঠকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এবং আবাসন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন স্বরাষ্ট্র, পূর্ত, পর্যটন, স্বাস্থ্য-সহ বিভিন্ন দফতরের সচিবরাও। রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় দুই দিনাজপুর জেলার উন্নয়ন বৈঠক সেরে ভলভো বাসে করে তাঁরা এ দিন রবীন্দ্র-ভানু মঞ্চের বৈঠকে যোগ দিতে আসেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই জেলা আমার বাড়ি ঘরের মতো হয়ে গিয়েছে। পাহাড়, সমতল জঙ্গল ভাল থাকুক এটাই আমি চাই। এ দিন উন্নয়ন কাজের পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছে। এই নিয়ে এটা ৯৭তম বৈঠক। এটা আমাদের একটা বড় সাফল্য। তৃণমূল স্তরে যারা উন্নয়ন কাজে যুক্ত তাদের প্রধানরা বৈঠকগুলিতে থাকছেন। উন্নয়ন যাতে আরও ভাল হয়, সেটাই দেখা হচ্ছে।’’ তিনি জানিয়ে দেন, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠক বছরে অন্তত দু’বার করতে হয়।
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রই জানিয়েছে, তার মধ্যে শিলিগুড়ি থেকে সেবকের রাস্তায় সোরিয়া পার্কে ৬০০ একর জায়গায় যে সাফারি পার্ক হচ্ছে তার প্রথম পর্যায়ের কাজ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে পর্যটন দফতর এবং বন দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কার্শিয়াঙে পিপিপি মডেলে যে হাসপাতাল তৈরির কথা, তা দ্রুত করার জন্য মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেন। দার্জিলিঙের ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল চত্বরের জায়গা আটকে পুলিশের ক্যাম্প থাকায় সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট চালুর জায়গা পেতে সমস্যা হচ্ছে। এ দিন পুলিশ সুপার অমিত জাভালগিকে ওই ক্যাম্প সরানোর ব্যবস্থা নিতে বলেন। যাতে দ্রুত দার্জিলিঙের ওই হাসপাতালে এসএনসিইউ চালু করা যায়।
পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে ওই বৈঠকে কার্শিয়াং এবং দার্জিলিঙের বিধায়ক রোহিত শর্মা এবং তিলক দেওয়ান ছিলেন। ছিলেন জিটিএ-র প্রধান সচিবও। পাহাড়ে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে দার্জিলিঙে ২০ কোটি, কার্শিয়াঙে ১৩ কোটি টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কার্শিয়াঙের বরাদ্দ মিললেও দার্জিলিঙের বরাদ্দ আটকে রয়েছে। সেই অর্থ বরাদ্দের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে তারা জানান। দ্রুত তা মিলবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাসও দিয়েছেন। তা ছাড়া দার্জিলিং মোড়ের কাছে জাতীয় সড়কের উপর সেতু চওড়া না হওয়ায় যানজটে দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে অভিযোগ। বিষয়টি দেখার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে জানান তিলক দেওয়ান। পাশাপাশি শালবাড়ি লাগোয়া এলাকা থেকে সুকনা পর্যন্ত রাস্তায় পথবাতির ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেন।
পাহাড়ে মাল্টি স্কিম ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এমএসডিপি) প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি হয়নি। জেলার ৬টি ব্লক ওই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে। তার মধ্যে সমতলের রয়েছে শুধু ফাঁসিদেওয়া ব্লক। সেখানে প্রথম দফায় বরাদ্দ প্রায় ৩ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পাহাড়ের টাকা খরচ না হওয়ায় তাঁরা দ্বিতীয় দফায় টাকা পাচ্ছেন না। পাহাড়ে কেন তা পিছিয়ে রয়েছে বৈঠকে তা জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। সংখ্যালঘু দফতরের প্রধান সচিব জানিয়ে দেন, প্রকল্পের টাকা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে খরচ করার বিরেধিতা করে জিটিএ-র তরফে একটি মামলা করা হয়েছে। হাইকোর্ট থেকে জানানো হয়েছে যে, ওই খাতে বরাদ্দ জেলাপ্রশাসনকে দেওয়া যাবে না। কিন্তু কাদের বরাদ্দ অর্থ দেওয়া হবে, তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট নির্দেশ আদালত না দেওয়ায় তা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। আইনি জটিলতা কাটিয়ে ওই উন্নয়ন কাজের অগ্রগতির জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
কন্যাশ্রী প্রকল্পে দার্জিলিং জেলার সমতলে ২১ হাজার পড়ুয়াকে সাহায্য করার লক্ষ্য ছিল। সে কাজে অনেকটাই সাফল্য মিলেছে বলে দাবি সরকারের। কিন্তু পাহাড়ে ওই কাজের অগ্রগতি খুব একটা হয়নি। সে জন্য জিটিএ-র মুখ্য সচিবকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। পাহাড়ে শৌচাগারের কাজেও অগ্রগতি কম। সেই কাজ সম্পন্ন করতে এবং পাহাড়ের স্কুলগুলিতে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচালয় তৈরির কাজ ভাল ভাবে করতে তৎপর হতে বলেন তিনি। মাঝখানে বন্ধ থাকার পর ১০০ দিনের কর্ম সংস্থান প্রকল্প সমতলের ব্লকগুলিতে শুরু হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ে তা শুরু করা যায়নি। পাহাড়ের উন্নয়ন নিয়ে মুখ্যসচিব বুধবার ফের বৈঠক করবেন দার্জিলিঙে। জেলাশাসক, জিটিএ প্রধান সচিব, বিভিন্ন ব্লকের বিডিও ও অন্য প্রশাসনিক আধিকারিকদের বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে।