আদর। সোমবার বাঁকুড়ার রাইপুরের ফুলকুসমায় ‘সবুজশ্রী’ প্রকল্পের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী। — নিজস্ব চিত্র
রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে সরকারের বার্তা পৌঁছে দিতে আগামী ৭ জানুয়ারি সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই সভায় উপস্থিত থাকার জন্য রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ইতিমধ্যেই সরকারি নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে। সম্মেলন হবে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। এই প্রথম রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই ধরনের সম্মেলনের ডাক দিলেন।
সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যে শিক্ষার মান উন্নয়নের পথ খুঁজতেই ওই সম্মেলন ডাকা হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রের নানা সমস্যার মোকাবিলা করে কী ভাবে বাংলাকে শিক্ষার শীর্ষে নিয়ে যাওয়া যায়, সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে সেই বিষয়েই আলোচনা চান মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি নির্দেশে বলা হয়েছে, রাজ্যকে ‘উচ্চশিক্ষা হাব’ করে তোলাই মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য। বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক মতে বিশ্বাসী শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁদের সকলেরই মুখোমুখি হতে চান তিনি। ওই সম্মেলনে ডাকা হয়েছে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদেরও। শিক্ষাজগতের ধারণা, নতুন বছরের ওই সম্মেলনে বড় ধরনের কোনও ঘোষণাও করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণ দৃঢ়তর করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত বিল মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেই পিছিয়ে গিয়েছে বলে রাজনৈতিক শিবিরের খবর। ঘোষণা সত্ত্বেও সেই বিল নির্দিষ্ট দিনে বিধানসভায় পেশ করা হয়নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চশিক্ষা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অভূতপূর্ব সম্মেলন নিয়ে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে সব স্তরেই।
ওই সভা ডাকা হয়েছে শনিবার। কলকাতা এবং জেলার সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষই আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর ৭ জানুয়ারির সভায় যাওয়ার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, ওই দিন রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অলিখিত ছুটি থাকবে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সম্মেলনে উপস্থিত সকলে যেন ‘অন ডিউটি’ বা কর্তব্যরত অবস্থায় রয়েছেন বলে ধরা হয়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো নির্দেশে বলা হয়েছে, সব শিক্ষক ও আধিকারিক যাতে সময়মতো সম্মেলনে পৌঁছতে পারেন, তার জন্য যাতায়াতের বন্দোবস্ত করতে হবে। প্রয়োজনে তাঁদের ভ্রমণ-ভাতাও দিতে বলা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান জেলায় জেলায় কী রকম সাড়া ফেলেছে এবং সভায় সামিল হওয়ার জন্য কলেজে কলেজে কেমন সাজো সাজো রব পড়ে গিয়েছে, অধ্যক্ষ-সহ কর্তৃপক্ষের বক্তব্যেই সেটা পরিষ্কার। ময়নাগুড়ি কলেজের অধ্যক্ষ দেবকুমার মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁরা আগের দিন অর্থাৎ ৬ জানুয়ারিই রওনা হয়ে যাবেন। পাশের জলপাইগুড়ি প্রসন্নদেব মহিলা মহাবিদ্যালয় এবং তাঁরা যৌথ ভাবে একটি বাস ভাড়া করছেন। একসঙ্গে ওই বাসে সকলে মিলে পৌঁছবেন সভায়। ‘‘এই প্রথম এমন সভা হচ্ছে। সকলকেই নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি,’’ বললেন দেবকুমারবাবু। সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য পুরুলিয়ার বিক্রমজিৎ গোস্বামী মেমোরিয়াল কলেজ এবং জে কে কলেজও একসঙ্গে বাস ভাড়া করার পরিকল্পনা করছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেকেই ইতিমধ্যে ট্রেনের টিকিট কেটে ফেলেছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর ওই সম্মেলনের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দলীয় শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার সঙ্গে আগেই কথা বলেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই সরকারের সমর্থক শিক্ষক সংগঠন ওই সম্মেলনে যোগ দিতে পা বাড়িয়ে আছে। পার্থবাবু নভেম্বরে ওয়েবকুটার সভায় গিয়ে ওই সংগঠনেরও সকলকে সভায় যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে ওই শিক্ষক সংগঠনের সদস্যেরা মুখ্যমন্ত্রীর শিক্ষা-সম্মেলনে যাবেন কি না, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।