—ফাইল চিত্র।
নারদ কাণ্ডে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানানো হবে সুপ্রিম কোর্টে। জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার হাইকোর্ট নারদ স্টিং কাণ্ডের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু এই রায় মেনে নিতে রাজি নন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ‘‘রায় ঘোষণার আগেই একটি দলের (বিজেপি) রাজ্য সভাপতি কী করে বলেছিলেন যে উত্তরপ্রদেশের ভোট হয়ে গেলেই নারদ মামলার সিবিআই তদন্ত হবে?’’ শুক্রবার এই প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
নবান্নে এক সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেছেন, ‘‘অবশ্যই সুপ্রিম কোর্টে যাব। কেন যাব না? আমি যদি মনে করি আমি বিচার পাইনি, তা হলে অবশ্যই সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারি।’’
২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে নারদ নিউজের স্টিং ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছিল। সেই ভিডিওতে তৃণমূলের একাধিক মন্ত্রী, সাংসদ, নেতাকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল। এক পদস্থ পুলিশ কর্তাকেও এক তৃণমূল নেতার হয়ে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল। একটি ভুয়ো সংস্থার প্রতিনিধি সেজে স্টিং অপারেশন চালিয়েছিলেন নারদের প্রতিনিধি। তাঁর কাছ থেকে যাঁরা টাকা নিয়েছিলেন, তাঁরা ওই সংস্থাটিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলেন বলেও স্টিং ভিডিওয় দেখা গিয়েছিল। তৃণমূল তথা রাজ্য সরকার দাবি করেছিল ওই ভিডিও মিথ্যা। সরকারের নির্দেশে নারদ নিউজের সিইও ম্যাথু স্যামুয়েলের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। কিন্তু হাইকোর্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই তদন্ত থামিয়ে দেয়। আজ, শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিল, পুলিশ নয় সিবিআই ওই মামলার তদন্ত করবে।
সেই স্টিং ফুটেজের একাংশ। দেখা যাচ্ছে অপরূপা পোদ্দারকে। —ফাইল চিত্র।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে প্রসঙ্গে আজ উষ্মা প্রকাশ করেছেন। যিনি তৃণমূল নেতাদের টাকা দিতে এসেছিলেন, তিনি কী উদ্দেশে এসেছিলেন, তারও তদন্ত হওয়া দরকার বলে মুখ্যমন্ত্রী মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের তদন্ত করতেই দিল না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের তদন্ত হাইকোর্ট বন্ধ করে দিল।’’ নির্বাচনের আগে কারও কাছ থেকে অনুদান নেওয়া কোনও অপরাধ নয় বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এক লাখ-দু’লাখ টাকা কোনও ব্যাপার নয়। ভোটের সময় অনুদান নেওয়া যায়, নির্বাচন কমিশনই তার অনুমতি দেয়।’’ এর পর মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশের ভোটে কত টাকা খরচ হয়েছে? কত হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে?’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইঙ্গিত যে বিজেপির দিকেই, তা স্পষ্ট। সেখানে বিজেপির বিপুল জয়ের পিছনে কত হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, তারও তদন্ত করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন অনেকটা এমনই দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন: রাজ্যের আর্জি খারিজ, নারদ তদন্তের ভার সিবিআইকে দিল হাইকোর্ট
রাজ্য বিজেপিকেও আক্রমণ করেছেন মমতা। দিলীপ ঘোষের নাম তিনি নেননি। কিন্তু প্রশ্ন তুলেছেন, নারদ কাণ্ডের রায় হওয়ার অনেক আগেই একটি দলের রাজ্য সভাপতি কী ভাবে বলে দিলেন, উত্তরপ্রদেশের ভোটের পরেই নারদ কাণ্ডের সিবিআই তদন্ত হবে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, আদালতের রায় হওয়ার আগেই কী করে এক রাজনৈতিক দলের নেতা জেনে গেলেন রায় কী হতে চলেছে? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘খুব দুর্ভাগ্যজনক! এক জন আইনজীবী হিসেবে আমি বিস্মিত!’’
হাইকোর্ট এবং বিজেপি-র মধ্যে যোগসূত্রের ইঙ্গিত দিতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, এমনই মন্তব্য উঠে আসতে শুরু করেছে বিরোধী শিবির থেকে। মুখ্যমন্ত্রীর এই ইঙ্গিতের সমালোচনাও শুরু হয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন বিজেপির কোন নেতা নাকি আগেই বলেছিলেন রায় কী হবে। তার মানে কি উনি বলতে চাইছেন যে হাইকোর্ট বিজেপি নেতাদের কথায় চলছে?’’ মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের মন্তব্য, ‘‘আমরা বলছি বিজেপিই চায় না এই মামলার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির আঁতাত রয়েছে।’’
সমালোচনা যাই হোক, মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন, নারদ কাণ্ডের সিবিআই তদন্তের রায়ের বিরুদ্ধে তিনি সব রকম ভাবে লড়বেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা রাজনৈতিক ভাবেও লড়ব, আইনি পথেও লড়ব।’’