স্বামীর সঙ্গে মোটরবাইকে করে যাওয়ার সময় দুষ্কৃতীরা গুলি ছোড়ে। ওই হামলায় গুলিবিদ্ধ হন আইনুল বিবি। —নিজস্ব চিত্র।
রোজগারের সমস্ত টাকাই স্ত্রীর কাছে জমা রাখতেন। সম্প্রতি গচ্ছিত অর্থ থেকে দফায় দফায় লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন স্ত্রী। তাতেই স্বামীর সন্দেহ হয় যে স্ত্রী নিশ্চয়ই বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত। এমনকি, প্রেমিকের সঙ্গে মিলে তাঁকে খুনও করতে পারেন। সেই সন্দেহের বশেই দুই সঙ্গীর সঙ্গে যোগসাজশে স্ত্রীকে খুন করিয়েছেন মালদহের এক যুবক। এই অভিযোগে শুক্রবার রাতে তাঁকে আটক করেছিল পুলিশ। তাদের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের সময় জানা যায় যে, স্ত্রীকে খুনের ষড়যন্ত্র করে সঙ্গীদের দিয়ে তাঁর উপর হামলা চালিয়েছেন। এর পর অভিযুক্ত স্বামী এবং তাঁর দুই সঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, মালদহ থানার রায়পুর এলাকার বাসিন্দা আইনুল বিবি (৩০)-কে খুনের অভিযোগে তাঁর স্বামী মাসু শেখকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, হজরত শেখ এবং বাজির শেখ নামে দুই সঙ্গীর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেন স্ত্রীকে খুন করান মাসু। ২৫ এপ্রিল মালদহ থানা এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে আইনুল বিবির উপর গুলির হামলা হয়েছিল। সে দিন রায়পুরে নিজেদের বাড়ি থেকে মোটরবাইকে চড়ে স্ত্রী ও দু’সন্তানকে নিয়ে মহিষবাথানি গ্রাম পঞ্চায়েতের রহমতনগর গ্রামে বাবার বাড়িতে যাচ্ছিলেন মাসু। সে সময় মোটরবাইকে চেপে দুষ্কৃতীরা গুলি ছোড়ে বলে অভিযোগ। ওই হামলায় গুলি লাগে আইনুল বিবির শরীরে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিতকুমার সাউ জানিয়েছেন, এই হামলার তদন্তে নেমেছিলেন মালদহ থানার আধিকারিকেরা। তিনি বলেন, ‘‘তদন্তে নেমে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি ধাবার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করা হয়। ওই ফুটেজে দেখা গিয়েছে, জাতীয় সড়কে অত্যন্ত ধীর গতিতে বাইক চালাচ্ছিলেন মাসু শেখ। তাঁর বাইকের পাশাপাশি আরও একটি বাইক একই ভাবে ধীর গতিতে চলছিল। তা দেখেই আমাদের সন্দেহ হয়। এর পর মাসু শেখের গোটা দিনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেন তদন্তকারীরা। তাতে দেখা যায়, মাসু শেখের বাইকটিকে গোটা দিন অনুসরণ করছে আর একটি বাইক। শুক্রবার রাতে মাসু শেখকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্তকারী পুলিশকর্তারা। তাতেই আইনুল বিবিকে খুন করার ষড়যন্ত্র ধরা পড়ে।’’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দাবি, ‘‘মাসু শেখের বাইকের পাশ দিয়ে যে বাইকটি চলছিল, সেটি চালাচ্ছিলেন হজরত শেখ। ওই বাইক থেকেই গুলি চালিয়েছেন বাজির শেখ। এই দু’জনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, মোবাইল টাওয়ার লাগানোর কাজ করেন মাসু শেখ এবং বাজির শেখ। অন্য দিকে, হজরত শেখ রঙের কাজ করেন। মাসুকে জেরা করে পুলিশকর্তারা জানতে পারেন, তাঁর রোজগারের সমস্ত টাকাই স্ত্রীর কাছে গচ্ছিত রাখতেন। সম্প্রতি ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা স্ত্রীর কাছে রেখেছিলেন মাসু। কিন্তু তা থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন আইনুল বিবি। কিন্তু, তার হিসাব দিতে পারেননি তিনি। শুধু তা-ই নয়, তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সঞ্চিত প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা থেকেও ৪০ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন আইনুল বিবি।
তদন্তকারীদের দাবি, লক্ষ টাকা খরচের হিসাব দিতে অপারগ হওয়ার কারণেই মাসুর সন্দেহ হয় যে, তাঁর রোজগারের টাকা ‘প্রেমিক’কে দিচ্ছেন স্ত্রী। শুধু তা-ই নয়, ‘প্রেমিকে’র সঙ্গে যোগসাজশ করে তাঁকে খুনও করতে পারেন আইনুল বিবি। তাই স্ত্রীকেই খুনের পরিকল্পনা করেন মাসু।
শনিবার মাসু শেখকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল বলে মালদহ থানার পুলিশ সূত্রে খবর। তাঁকে ৫ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বাকি দুই অভিযুক্তকে রবিবার আদালতে হাজির করানো হবে।