ছবি: সংগৃহীত।
করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে ‘গ্লোবাল অ্যাডভাইসরি বোর্ড’ বা আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা পর্ষদ তৈরি করল রাজ্য সরকার। মোট আট জনকে রাখা হয়েছে পর্ষদে। শীর্ষে রয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে ভিডিয়ো-সম্মেলন করেন অভিজিৎবাবু। করোনা-মোকাবিলায় এ দিন সরকারকে বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, বাধ্যতামূলক দূরত্ব নিশ্চিত করতেই হবে। যেখানে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি, সেখানে বেশি করে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার।
অভিজিৎবাবু ছাড়াও ওই পর্ষদে আছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) আঞ্চলিক অধিকর্তা স্বরূপ সরকার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি-র প্রাক্তন কর্ণধার টম ফ্রেডেন, বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদ জিষ্ণু দাস, পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের প্রাক্তন আইএএস অফিসার তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব জেভিআর প্রসাদ রাও, ইউএনএআইডিএস-এর কমিউকেশন স্পেশালিস্ট সিদ্ধার্থ দুবে। পর্ষদের আহ্বায়ক চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী। এই পর্ষদের সঙ্গে প্রশাসনিক সহযোগিতায় থাকবে স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ নজরদার গোষ্ঠী।
ভিডিয়ো-সম্মেলনে অভিজিৎবাবুর পরামর্শ চান মুখ্যমন্ত্রী। অভিজিৎবাবু প্রথমেই আবেদন জানান, আতঙ্কিত না-হয়ে সকলে সতর্ক থাকুন। মুখ্যমন্ত্রী যে-হেতু বাজার খোলা রেখেছেন, সেই প্রেক্ষিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের বক্তব্য, বাজারে ঢোকা ও বেরোনোর সময় যাতে সকলের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকে, সেটা নিশ্চিত করা উচিত। স্যানিটাইজ়ার বা হাতশুদ্ধির বন্দোবস্ত রাখতে পারলে ভাল হয়। কয়েকটি দেশ এই ব্যবস্থা চালু করে সুফল পেয়েছে। সেই সঙ্গে সংক্রমণ ঠেকাতে বাধ্যতামূলক ভাবে দূরত্ব বজায় রাখার আবেদন জানান তিনি। বাজারে লক্ষ্মণরেখা আঁকার পাশাপাশি বিক্রেতার সামনে ইট রেখে মানুষকে পারস্পরিক শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে বাধ্য করানো উচিত বলে মনে করেন ওই অর্থনীতিবিদ।
অভিজিৎবাবু মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, যে-সব জায়গায় সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে বেশি করে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। মানুষের ভয় ভাঙিয়ে রিপোর্টিং পরিকাঠামো তৈরি করা দরকার। প্রয়োজনে এই কাজে আশা-কর্মীদের ব্যবহার করা যেতে পারে। হাঁচি-কাশির তথ্য পেলে দ্রুত পরীক্ষা করানো দরকার। তা হলে সংক্রমণ ছড়ানোর আগেই সেখানে পৌঁছে যাওয়া যাবে। হঠাৎ অনেক জায়গায় অনেকে রোগাক্রান্ত হলে সমস্যা বাড়বে। ‘‘এখন তো আপনাদের উপরে অতটা চাপ নেই। তাই এই সব ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বাজার কমিটিগুলিকে জল-সাবানের ব্যবস্থা করতে বলুন। দরকারে মানুষের থেকে অনুদান নিন,’’ বলেন অভিজিৎবাবু।
অভিজিৎবাবুকে আশ্বস্ত করে মমতা জানান, প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মুখ্যসচিবকে। সরকার মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছে। আশা-কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে সরকার। আজ, বুধবার থেকে এই সব কাজ শুরু হবে। রাজ্য সরকার যে-করোনা ত্রাণ তহবিল গড়েছে, তার উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, অনেকেই কেন্দ্রের তহবিলে হাজার হাজার কোটি টাকা দিচ্ছেন। এ রাজ্যে অত শিল্পপতি বা ধনী মানুষ নেই। যে যেমন পারছেন, সহযোগিতা করছেন। তা দিয়েই সব করার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।
ওই অর্থনীতিবিদকে মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ, ‘‘বিকেল ৫টায় ভিডিয়ো-সম্মেলনের ব্যবস্থা হয়েছে। মাঝেমধ্যে আপনি যদি সেই সম্মেলনে থাকতে পারেন, ভাল হয়। আলোচনা করা যাবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আপনার পরামর্শও নিতে পারব।’’
নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা বিনিময় করেন অভিজিৎবাবু এবং মমতা। মুখ্যমন্ত্রীকে অভিজিৎবাবুর সনির্বন্ধ অনুরোধ, ‘‘আমি তো বাড়িতে থেকেই কাজ করছি। কিন্তু আপনাকে অনেক ঘুরতে হয়। সাবধানে থাকবেন।’’