মকরসংক্রান্তি উপলক্ষে অন্যান্য রাজ্যেও অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সব বিশ্ববিদ্যালয়কে এই উৎসব পালন করতে বলা হয়েছে। ফাইল চিত্র।
বৈদিক অঙ্কশাস্ত্র-সহ নানান প্রাচীন বিষয়কে উচ্চশিক্ষার অন্তর্ভুক্ত করার তৎপরতার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্তরে দেশের বিভিন্ন লোকিক আচার-অনুষ্ঠান-উৎসবকেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে। ইউজিসি বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নবতম নির্দেশ, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে মকরসংক্রান্তি পালন করতে হবে। প্রযুক্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে একই নির্দেশ দিয়েছে এআইসিটিই বা অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন। এর প্রতিবাদে মুখর হয়েছে বাংলার শিক্ষা শিবিরের একটি বড় অংশ।
মকরসংক্রান্তি উপলক্ষে অন্যান্য রাজ্যেও অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সব বিশ্ববিদ্যালয়কে এই উৎসব পালন করতে বলা হয়েছে। জানানো হয়েছে, কেন্দ্রের ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ উদ্যোগের অঙ্গ হিসেবেই এই নির্দেশ।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু শুক্রবার বলেন, ‘‘জানি না, কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরাসরি মকরসংক্রান্তি বা হজ পালন করুক বা ২৫ ডিসেম্বর চার্চে যাক— এই ধরনের অনুজ্ঞা তারা (ইউজিসি) দিতে পারে কি না। এখন সংবিধানের নতুন নতুন সব মানে, ভাষ্য এবং ব্যাখ্যা তৈরি হচ্ছে তো! হয়তো মনুসংহিতায় এমন আছে। দেখতে হবে। আমি মনুসংহিতা পড়ে এই বিষয়ে জানাতে পারব।’’
এমন নির্দেশ চাপিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ মানা যায় না বলে শিক্ষা মহলের একাংশের অভিমত। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জুটা)-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘কেন্দ্র এক দিকে প্রাদেশিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে কোনও রকম অর্থসাহায্য করছে না। অন্য দিকে নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শ জোর করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির উপরে চাপিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্রের শাসক দল।’’
নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (কুটা)-র সভানেত্রী মহালয়া চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মকরসংক্রান্তি নানা রাজ্যের ফসল কাটার লৌকিক উৎসব। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ এতে যোগ দেন। ইউজিসি বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলের বৈচিত্র খর্ব করে লৌকিক উৎসবগুলিকে হিন্দুত্ববাদের মোড়কে ঢোকাতে বাধ্য করাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে।’’ সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক তরুণকান্তি নস্কর বলেন, ‘‘উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে এই অনুষ্ঠান চাপিয়ে দেওয়ার ফলে ধর্মান্ধতারই সৃষ্টি হবে।’’