আগামী বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলই যে তাঁদের মূল প্রতিপক্ষ, তা আজ পশ্চিমবঙ্গে দলের নেতাদের সামনে স্পষ্ট করে দিলেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ। তাই এখন থেকে রাজ্যে পড়ে থেকেই তাঁদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইতিমধ্যেই বার্তা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় ধর্ম মেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে সব রকম সাহায্য করতে তিনি প্রস্তুত। তার প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাজ্যে রাজনৈতিক জমি দখলের জন্য যে কোনও রকম আপস করা হবে না, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এ বার সেই বার্তাও ফের স্পষ্ট করে দিল। এ দিন পরাজিত প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের উদ্দেশে রাজনাথ জানিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় স্তরে নতুন সভাপতি আসার পরেও একই অবস্থান নিয়ে চলবে দল।
দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “ভোটে জেতার পর সকলে জয়ী প্রার্থীদের নিয়ে ভাবেন। আমরা হেরে যাওয়া প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করছি, কারণ তাঁরাও দলের মুখ। ভোটের সময় তাঁরা মানুষের কাছে গিয়েছেন। নিজের সংগঠন তৈরি করেছেন। অনেক কেন্দ্রে খুব কম ব্যবধানে পরাজয় হয়েছে। ফলে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে যেখানে সাম্প্রতিক অতীতেও একজন বিধায়ক বা সাংসদ ছিল না, এখন সেখানে প্রভাব বাড়তে শুরু করেছে। বিধানসভার আগে সেটিকে পুঁজি করেই এগোনো দরকার।”
বিজেপি সূত্রের মতে, গত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি মাত্র দু’টি আসন পেলেও কলকাতার দু’টি ও মালদহের একটি আসনে তারা দ্বিতীয় স্থানে ছিল। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ১৬টিতে। আর লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভা কেন্দ্রের নিরিখে যদি দেখা যায়, তা হলে ৪৬টি আসনে বিজেপি রয়েছে প্রথম স্থানে। ৩০টি আসনে দ্বিতীয় স্থানে। এই ফলাফলকে সামনে রেখে বিধানসভায় তৃণমূলকে টক্কর দেওয়া যাবে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের নেতা শাহনওয়াজ হোসেন বলেন, “বিজেপির এই উত্থানে ভয় পাচ্ছে তৃণমূল। সে কারণেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপি কর্মীদের উপরে আক্রমণ করছে তারা। সে কারণে এখন নবান্নে আপ্যায়ন করে বাম নেতাদের ‘ফিশ ফ্রাই’ খাওয়াচ্ছেন মমতা!” যাঁরা এই প্রতিকূলতার মধ্যেও ভোটে লড়েছেন, তাঁদেরই ফের ময়দানে নামানোর দাবি উঠতে শুরু করেছে।
এ দিন দলের পরাজিত প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে রাজনাথ বলেন, পশ্চিমবঙ্গে যথেষ্ট প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও দলের প্রভাব অনেক বেড়েছে। তাই তৃণমূলের আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের কর্মীদের। কিন্তু মার খেয়েও তৃণমূলকে জমি ছাড়া হবে না। রাজনাথের বক্তব্য, হেরে গেলেও এই নেতারা কেন্দ্রের শাসক দলেরই প্রতিনিধি। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে তাঁদের সব রকম সাহায্য করা হবে। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোট এবং তার পর ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। রাজনাথের সঙ্গে এই বৈঠকে যোগ দিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির পরাজিত প্রার্থীরা আজ দিল্লিতে এসেছিলেন।
কেন্দ্রীয় স্তর থেকে মমতার উপরে চাপ বাড়াতে দু’বার রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল পাঠিয়েছেন রাজনাথ। এ ভাবে আক্রমণ চললে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবিও ধীরে ধীরে তোলবার প্রস্তুতি নিচ্ছে দল। বিজেপি নেতাদের মতে, একটি-দু’টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু ধারাবাহিক আক্রমণের ঘটনা একেবারেই সহ্য করা যায় না। আজ হেরে যাওয়া প্রার্থীদের অনেকেই দলীয় নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ করেছেন, রিগিং ও ভয় দেখানো না হলে তাঁদের অনেকেই লোকসভা নির্বাচনে জিতে যেতেন। মানুষকে ভয় দেখানোর পালা চলছে এখনও।
গত কাল রাতেই নরেন্দ্র মোদী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, প্রতি মাসে এক জন করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দিল্লিতে দলের সদর দফতরে বসে কর্মীদের সঙ্গে দেখা করবেন। কারা কবে বসবেন, সেই ঘোষণা আগে থেকেই করা হবে। সেই মোতাবেক দলের যে কোনও নেতা তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্রের অভাব-অভিযোগ নিয়ে দেখা করতে পারেন। আগামী পাঁচ বছরে তাঁদের কাজের মূল্যায়নও করা হবে। যার ভিত্তিতে পরের বার তাঁদের ফের প্রার্থী করা হবে কি না, সেটি নির্ধারণ করবে দল।