সিএএ-আতঙ্ক ফর্মে, রক্তপাত হাইমাদ্রাসায়

মঙ্গলবার মাদ্রাসা খুলতেই বেলা ১১টা থেকে বাসিন্দারা দলে দলে এসে হাজির হন মাদ্রাসার সামনে। কয়েক হাজার মানুষ মাদ্রাসা ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৪৭
Share:

গোলমাল: হাওড়ার সাঁকরাইল এলাকার পাঁচপাড়ার হাইমাদ্রাসায়। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ রূপায়ণের জন্য পড়ুয়াদের দিয়ে ফর্ম ভর্তি করার গুজবকে কেন্দ্র করে তাণ্ডব চলল হাওড়ার একটি হাইমাদ্রাসায়। কয়েক হাজার মানুষের মারমুখী বিক্ষোভের জেরে স্কুলের মধ্যে প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে রইল পড়ুয়ারা। স্কুলের টিচার ইনচার্জকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে স্কুলের দরজা ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করল জনতা। বিশাল পুলিশবাহিনী ও র‌্যাফ এসে টিচার ইনচার্জকে স্কুল থেকে বার করতে গেলে ইটবৃষ্টি শুরু হয়। ইটের আঘাতে রক্তাক্ত হন ওই শিক্ষক এবং কিছু পুলিশ অফিসার।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত তিন সপ্তাহ আগে। হাওড়ার নাজিরগঞ্জ পাঁচপাড়ার হাইমাদ্রাসায় একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বাংলা হরফে লেখা একটি ফর্ম পড়ুয়াদের দেওয়ার জন্য মাদ্রাসার টিচার-ইনচার্জ বুদ্ধদেব দাসের হাতে দেয়। ওই ফর্মে পড়ুয়াদের সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য লিখে দিতে বলা হয়। পুলিশ জানায়, ওই ফর্ম নবম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের হাতে বুদ্ধদেববাবুই দেন বিলি করার জন্য। সোমবার এক অভিভাবক মেয়ের কাছে ফর্মটি দেখে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তাঁর বক্তব্য, ওই ফর্মের ভাষা দেখে মনে হচ্ছে, এটি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন সংক্রান্ত ফর্ম।

ওই ব্যক্তির এই ধারণা পরের দিন এলাকায় আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার মাদ্রাসা খুলতেই বেলা ১১টা থেকে বাসিন্দারা দলে দলে এসে হাজির হন মাদ্রাসার সামনে। কয়েক হাজার মানুষ মাদ্রাসা ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, মাদ্রাসার টিচার ইনচার্জ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে পড়ুয়াদের দিয়ে সিএএ-র ওই ফর্ম পূরণ করে কেন্দ্রের কাছে পাঠাতে চাইছেন। জনতা টিচার ইনচার্জকে সামনে পেয়ে গালিগালাজ দিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করার জন্য চাপ দিতে থাকে। অন্য শিক্ষকদের ঘরে বন্ধ করে রাখা হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: বিজেপি নেতাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘জবাব’ উদয়নের

বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান সাঁকরাইল থানার ওসি মধুসূদন মুখোপাধ্যায়। মাদ্রাসার পরিচালন সমিতির সম্পাদক আব্দুল ফারহা মোল্লা জানান, ওই ফর্ম বিলির কথা তিনি জানতেন না। পুলিশ প্রথমেই মাদ্রাসা থেকে পড়ুয়াদের বার করে দিতে বলে। ক্লাসঘরে আতঙ্কের মধ্যে প্রায় তিন ঘণ্টা কাটানোর পরে, বেলা ২টোয় পড়ুয়াদের স্কুল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

বুদ্ধদেববাবু জানান, পড়ুয়াদের নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাঁদের মাদ্রাসায় আসে। এমনই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তিন সপ্তাহ আগে একটি ফর্ম দিয়ে যায়। সেটিই পড়ুয়াদের মধ্যে বিলি করা হয়েছিল।

ওই সংস্থার ফর্ম পড়ুয়াদের মধ্যে বিলি করার আগে পরিচালন কমিটির অনুমতি নেওয়া হয়নি কেন? ‘‘আমি ওই ফর্মটি ঠিক করে দেখিনি। পড়ুয়াদের হাতে দিয়েছিলাম। এর জন্য পরিচালন কমিটির অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনি,’’ বলেন বুদ্ধদেববাবু।

বিকেল পর্যন্ত টিচার ইনচার্জকে স্কুল থেকে বেরোতে না-দেওয়ায় র‌্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারা। বুদ্ধদেববাবুকে নিয়ে মাদ্রাসার একটি ছোট গেট দিয়ে বেরোতে গেলে পুলিশকে বাধা দেয় ক্ষিপ্ত জনতা। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হতে থাকে। এক পুলিশকর্মীর হাত ভেঙে যায়। ওই শিক্ষককে টেনেহিঁচড়ে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। ইটের ঘায়ে তাঁর রক্ত ঝরতে থাকে। সেই অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে আন্দুল রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয় পুলিশ। গুরুতর আহত এক পুলিশকর্মীও সেখানে ভর্তি আছেন। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement