Madhyamik Examination 2023

শ্রমিক আন্দোলনে জড়াতে চাননি গান্ধী! মাধ্যমিকের প্রশ্নে বিতর্ক

শিক্ষকদের একটা অংশের আবার আশঙ্কা, এমন প্রশ্নে ভারতের ইতিহাসে গান্ধীজির ভূমিকা নিয়ে পড়ুয়াদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৩ ০৬:১৪
Share:

আবার বিতর্কে মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র। প্রতীকী ছবি।

বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না মাধ্যমিকের। প্রথমে ইংরেজি প্রশ্নপত্র বাইরে বেরনোর অভিযোগ। অঙ্কের দিন গ্রাফ পেপার না দেওয়ায় বিভ্রান্তি। এ বারে প্রশ্ন উঠেছে ইতিহাসের প্রশ্নপত্র নিয়েও।

Advertisement

প্রশ্নপত্রের ষষ্ঠ পাতায় বিবৃতিমূলক প্রশ্নের বিভাগে ২.৫.৩ ক্রমিক নম্বরের প্রশ্নটিতে বিবৃতি হিসেবে লেখা হয়েছে, ‘গান্ধীজি কখনওই শ্রমজীবীদের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হতে চাননি’। এর ব্যাখ্যা হিসেবে রয়েছে তিনটি বাক্য— ১) গান্ধীজি ছিলেন মিল-মালিক শ্রেণির প্রতিনিধি, ২) গান্ধীজি পুঁজি ও শ্রমের মধ্যে সংঘর্ষ এড়াতে চেয়েছিলেন, ৩) গান্ধীজি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিতছিলেন। পরীক্ষার্থীদের ‘যথাযথ’ জবাবটি বেছে নিতে হবে।

শিক্ষক মহলের মতে, মূল বিবৃতিটিই ভিত্তিহীন। ব্যাখ্যা হিসেবে যে তথ্যগুলি দেওয়া হয়েছে, স্বাভাবিক ভাবে সেগুলিও যথাযথ নয়। বাঁকুড়ার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক বলছেন, “গান্ধীজি শ্রমজীবীদের আন্দোলনে যুক্ত হতে চাননি— এমন তথ্য মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়েও নেই।” বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র রাজ্য সম্পাদক সুকুমার পাইনেরও বক্তব্য, “প্রশ্নকর্তার সঙ্গে সিলেবাসের যে কোনও যোগাযোগ নেই, তা স্পষ্ট।”

Advertisement

ইতিহাস বলছে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে ফেরার পরে যে তিনটি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধী, তার অন্যতম ১৯১৮ সালে আমদাবাদ সত্যাগ্রহ। এটি ‘আমদাবাদ মিল ধর্মঘট’ নামেও পরিচিত। ধর্মঘট সফল হয়। মিল মালিকেরা শ্রমিকদের মজুরি ৩৫ শতাংশ বাড়াতে বাধ্য হন। তাই, গান্ধীজি শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত হতে চাননি— এই বিবৃতির ভিত্তিতে মাধ্যমিকের মতো বড় পরীক্ষায় প্রশ্ন দেওয়া হল কী ভাবে, ভারতের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করা অধিকাংশ শিক্ষকের কাছে সেটাই প্রশ্ন। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ট্রেড-ইউনিয়ন কংগ্রেস তৈরি হওয়ার পরে দেশ জুড়ে যখন কৃষক-শ্রমিক বিক্ষোভ হচ্ছে, তখন ব্রিটিশ সরকার দমনমূলক নীতি প্রয়োগ করে। ১৯৩০ সালে সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অহিংস আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করে কংগ্রেস, যার দায়িত্ব ছিল গান্ধীজির হাতে। ফলে, মাধ্যমিকের প্রশ্নটি ভুল বলেই জানাচ্ছেন ইতিহাসের অধিকাংশ শিক্ষক।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতের মধ্য যুগ ও আধুনিক যুগের ইতিহাস বিষয়ক আশুতোষ অধ্যাপক অমিত দে-ও মনে করেন, মাধ্যমিকের প্রশ্ন এবং তার সম্ভাব্য উত্তর গান্ধী বিষয়ে পড়ুয়াদের মনে অহেতুক বিভ্রান্তি তৈরি করবে, যা অনভিপ্রেত। তিনি বলেন, ‘‘গান্ধী শ্রমজীবীদের বিশেষ শ্রদ্ধা করতেন এবং শ্রমজীবীরাও তাঁকে ভালবাসতেন, শ্রদ্ধা করতেন ইতিহাসে তার নানা প্রমাণ রয়েছে। সেই সঙ্গে জাতীয়তাবাদী বুর্জোয়া শ্রেণি বা শিল্পপতিদের শ্রমিক দরদি করে তুলতেও গান্ধী নানা চেষ্টা করেন। কিছুটা সফলও হয়েছিলেন। অর্থাৎ গান্ধী শিল্পপতি, শ্রমজীবীদের মধ্যে কিছুটা সমন্বয় তৈরির পক্ষপাতী ছিলেন। এ জন্য গান্ধীকে কখনওই শ্রমিক আন্দোলন বিরোধী বলে দাগিয়ে দেওয়া যায় না। এ সব ইতিহাসের অপব্যাখ্যা।’’

মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সূত্রে দাবি, অন্তত ১৫ বছর ধরে মাধ্যমিকস্তরে শিক্ষকতা করছেন এমন শিক্ষকদের দিয়েই প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে। প্রশ্নটি সিলেবাসের মধ্যে থেকেই নেওয়া হয়েছে বলে দাবি পর্ষদের। পর্ষদ সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, “ইতিহাসের প্রশ্নপত্র পর্যালোচনা করা হয়েছে। ছাত্রস্বার্থ মাথায় রেখেই উত্তরপত্র দেখা হবে। পরীক্ষার্থীদের ফলাফল কোনও ভাবেই প্রভাবিত হবে না।”

শিক্ষকদের একটা অংশের আবার আশঙ্কা, এমন প্রশ্নে ভারতের ইতিহাসে গান্ধীজির ভূমিকা নিয়ে পড়ুয়াদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। ওয়েবকুটার রাজ্য সম্পাদক কেশব ভট্টাচার্যের মতে, “এতে ছাত্রছাত্রীদের মানসিক বিকাশ প্রভাবিত হতে পারে।” পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির বাঁকুড়া জেলা সভাপতি গৌতম দাসের পাল্টা ব্যাখ্যা, ‘‘অনেক সময়ই পড়ুয়াদের বোধ যাচাইয়ে একটু অন্য ধরনের প্রশ্ন করা হয়। এটিও তেমন প্রশ্ন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement