প্রতীকী ছবি।
গত বছর ‘সাতে সাত’ হয়েছিল। এ বার প্রথম দিন বাংলার প্রশ্নপত্রও পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টাখানেক পরে বাইরে হোয়াটসঅ্যাপে পাওয়া গিয়েছে। তাই আশঙ্কা ছিল, বুধবার ইংরেজির ক্ষেত্রেও এমন কিছু ঘটবে না তো? আশঙ্কা সত্যি হয়নি, বরং পরীক্ষার হলে কড়া নজরদারিতে সাফল্য পেল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এ দিন পাঁচ জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। পরে তাদের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পর্ষদ। এক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। পর্ষদ জানিয়েছে, ইংরেজি পরীক্ষা নির্বিঘ্নে হয়েছে। একই সঙ্গে পুরনো একটি নির্দেশিকা ফের জারি করে পর্ষদ জানিয়েছে, মোবাইল-সহ ধরা পড়লে সব পরীক্ষা বাতিল হবে। যাকে ‘মেসেজ’ পাঠানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধেও এফআইআর হবে।
এ দিন মালদহের রতুয়ায় বৈদ্যনাথপুর হাইস্কুলে এক পরীক্ষার্থীকে মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলতে দেখে হাতেনাতে ধরে ফেলেন নজরদারির দায়িত্বে থাকা শিক্ষক। পরে প্রশ্নের মুখে সেই ছাত্র দোষ কবুল করে বলে দাবি পুলিশের। সে জানায়, প্রশ্নের ছবি তুলে সে তার খুড়তুতো দাদাকে পাঠিয়েছিল। পর্ষদ সূত্রে জানানো হয়েছে, তার পরীক্ষা বাতিল করা হয়। তাকে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে গ্রেফতার করে পুলিশ। মালদহের রাজনগরেও এক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন পান পরীক্ষার হলের নজরদারেরা। তার পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার আতপুরে অ্যাংলো ইন্ডিয়া হাইস্কুলেও তিন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন মিলেছে। তাদেরও আরএ করা হয়। পরে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দোষীদের চিহ্নিত করতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ প্রশ্নপত্র বাইরে চলে আসার দায়ে পার্থবাবুর ইস্তফা দাবি করেছে এবিভিপি। প্রশ্ন উঠেছে, এত কড়াকড়ি সত্ত্বেও কী ভাবে মোবাইল নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকছে ছাত্রেরা? মঙ্গলবার শিলিগুড়ির কাছে বাগডোগরার একটি স্কুল থেকে ১৯টি ফোন-সহ ১৮ জনকে পাকড়াও করা হয়েছিল। এ দিন তদন্তে জানা গিয়েছে, তারা অন্তর্বাসে মধ্যে ফোন লুকিয়ে নিয়ে ঢুকেছিল।
শিক্ষকদেরও মোবাইল নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া বন্ধ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি স্কুল শিক্ষক সমিতির বক্তব্য, এর পরেও তো বাংলার প্রশ্নপত্র বাইরে এসেছে। সমিতির সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, ‘‘অনেকে বাড়ি থেকে দূরে চাকরি করেন। বাড়িতে অসুস্থ বাবা-মা, ছোট সন্তান রেখে আসেন। ফোন না-থাকলে তাঁদের অসুবিধা হবে, তা কি ভাবার বিষয় নয়?’’ তাঁর কথায়, ‘‘সমিতিগত ভাবে পর্ষদের নির্দেশিকাকে সমর্থন করলেও শিক্ষকদের অকারণে সন্দেহ করায় অন্তর্নিহিত বক্তব্যের সমালোচনা করছি।’’
এর মধ্যে বুধবার ইংরেজি পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা পরেই ফের হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছিল প্রশ্নপত্রের কয়েকটি পাতা। ইংরেজি প্রশ্নের উত্তর প্রশ্নপত্রেই লিখতে হয়। হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্নের যে-পাতাগুলি ছড়িয়েছিল, পরীক্ষার শেষে সেই পাতাগুলি দেখে পরীক্ষার্থীরা জানিয়ে দেয়, তাদের প্রশ্নের সঙ্গে এগুলির কোনও মিল নেই।
এ দিন পরীক্ষা শুরুর আগে বেলতলা গার্লস হাইস্কুল এবং ভবানীপুর গার্লস হাইস্কুলে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই স্কুলের তরফেই জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানান।