Madhuparna Thakur

বাগদায় ইতিহাস গড়লেন মধুপর্ণা ঠাকুর, বিধানসভার কনিষ্ঠতমা এই সদস্যই এখন তৃণমূলের শিবিরে মতুয়া-মুখ

প্রথম রাউন্ড থেকেই এগোতে শুরু করেন মধুপর্ণা ঠাকুর। ১৩ রাউন্ড গণনার শেষে বিজেপি প্রার্থীকে প্রায় সাড়ে ৩৩ হাজার ভোটে হারান তিনি। বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার দিন তাঁর বয়স ২৫ বছর ১ মাস ১৩ দিন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪ ১৮:২৯
Share:

বিধানসভা উপনির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর শংসাপত্র হাতে তৃণমূল প্রার্থী মধুপর্ণা ঠাকুর। ছবি: পিটিআই।

বাগদা বিধানসভার উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে ইতিহাস গড়লেন তৃণমূলের প্রার্থী মধুপর্ণা ঠাকুর। বর্তমান বিধানসভায় সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক নির্বাচিত হলেন তিনি। শনিবার উপনির্বাচনের ফলঘোষণার প্রথম রাউন্ড থেকেই এগোতে শুরু করেন মধুপর্ণা। ১৩ রাউন্ড গণনার শেষে বিজেপি প্রার্থী বিনয়কুমার বিশ্বাসকে ৩৩ হাজার ৪৫৫ ভোটে পরাজিত করেন মধুপর্ণা। বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার দিন তাঁর বয়স ২৫ বছর ১ মাস ১৩ দিন। ১৯৯৯ সালের ৩০ মে মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুরে জন্ম মধুপর্ণার। সেখানেই শুরু লেখাপড়া। মাধ্যমিক পাশ করেন নাগপুর থেকে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন বিধাননগরের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় থেকে। প্রপিতামহের নামাঙ্কিত পিআর ঠাকুর গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করেছেন। বর্তমানে বারাসত বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে এমএসসি পড়ছেন তিনি।

Advertisement

জয়ের পর মধুপর্ণা বলেছেন, ‘‘সবে দায়িত্ব পেলাম। অনেক কিছুই করে দেখানোর আছে। মুখে কিছু না বলে কাজে করে দেখাতে চাই।’’

আচমকাই রাজনীতিতে এসে পড়া, ভোটে দাঁড়ানো এবং জয়। বনগাঁর মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে প্রয়াত বীণাপাণি দেবীর দুই পুত্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব সর্বজনবিদিত। মধুপর্ণার বাবা কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর ভাই মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের বিবাদের কথাও সকলে জানেন। সেই বিবাদের ঐতিহ্য বহন করছে বর্তমান প্রজন্মও। ২০১৪ সালে প্রয়াত হন মধুপর্ণার পিতা কপিলকৃষ্ণ। তিনি ছিলেন বনগাঁর তৃণমূল সাংসদ। তাঁর প্রয়াণের পর উপনির্বাচনে মধুপর্ণার মা মমতাবালা ঠাকুর সাংসদ হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মমতাবালা পরাজিত হন মঞ্জুলকৃষ্ণের ছোট ছেলে শান্তনু ঠাকুরের কাছে। যিনি বিজেপি প্রার্থী হিসেবে ওই ভোটে লড়েছিলেন। বর্তমানে শান্তনু কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় বার বনগাঁ থেকে সাংসদ হয়েছেন। আর মধুপর্ণার মা মমতাবালা এখন তৃণমূলের রাজ্যসভার সংসদ। ঠাকুরবাড়ির রাজনীতি দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিভক্ত। লোকসভা ভোটের আগে খুড়তুতো দাদা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনুর বিরুদ্ধে ঠাকুরবাড়িতে দু’সপ্তাহ অনশন করেছিলেন মধুপর্ণা। ঠাকুরমা বীণাপাণি দেবীর ঘরে তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ জানিয়ে অনশন করেছিলেন মধুপর্ণা। অনেকে সেই সময়ই তাঁর রাজনীতিতে আসার ইঙ্গিত পেয়েছিলেন। কিন্তু লোকসভা ভোটে সে ভাবে তাঁকে দেখা না গেলেও বাগদা বিধানসভার উপনির্বাচনে যখন বিশ্বজিৎ দাসের বদলে মধুপর্ণার নাম ঘোষণা করে তৃণমূল, তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, ঠাকুরনগরের মতুয়া পরিবারের অভ্যন্তরীণ বিবাদ রাজনৈতিক যুদ্ধের আকার নেবে। বিজেপি যে হেতু শান্তনুকে সামনে রেখে মতুয়া রাজনীতির অস্ত্রে শান দিচ্ছে, তাই পাল্টা বাগদা বিধানসভার উপনির্বাচনে মধুপর্ণাকে প্রার্থী করে জবাব দিতে চেয়েছিল তৃণমূল।

Advertisement

অনেকের মতে, যে হেতু মতুয়া সম্প্রদায়ের উপর বনগাঁর ঠাকুরবাড়ির প্রভাব রয়েছে, তাই সাংসদ শান্তনুর সঙ্গে দাদা সুব্রত ঠাকুরকেও গাইঘাটা বিধানসভার বিধায়ক করেছে বিজেপি। মনে করা হচ্ছে, তারই ‘পাল্টা চাল’ হিসাবে মধুপর্ণাকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। শনিবার উপনির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর দেখা গেল, তৃণমূলের ‘মতুয়া তাস’ বাগদায় কাজ করেছে। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরবাড়ির সদস্য হিসেবে যে ভাবে মতুয়াদের বিরাট অংশের ভোট পেয়েছিলেন, তার বড় অংশ ঘুরে গিয়েছে মধুপর্ণার দিকে। কারণ, তিনি ঠাকুর পরিবারের অংশ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘বিজেপির মতুয়া ভোটের জবাব দেওয়ার মতো কোনও মুখ তৃণমূলে তৈরি হচ্ছিল না। মধুপর্ণার মতো উচ্চশিক্ষিতা একজন ঠাকুর পরিবারের মেয়ে যখন মতুয়াদের হয়ে কথা বলবেন, তখন তার রাজনৈতিক লাভ অবশ্যই তৃণমূল পাবে। তাই এই ভোটের ফলাফলে শান্তনু-সুব্রতের চিন্তিত হওয়ার কারণ আছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement