একুশে জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশের একুশ বছর পূর্ণ হল। এই প্রথম তিনি নেই।
এসএসকেএমের উ়ডবার্ন ওয়ার্ডের ‘সাড়ে বারো’ নম্বর ঘরে টেলিভিশনও নেই। মঙ্গলবার মদন মিত্র ঘুম থেকে উঠলেন দুপুর গড়িয়ে যাওয়ার পরে!
বেলা করে ঘুম থেকে ওঠাই অবশ্য মদনের চিরকালের অভ্যাস। কিন্তু একুশে জুলাই মানেই ছিল অন্য রকম সকাল। আগের দিন রাতে থেকে যেতেন চৌরঙ্গীর পার্টি অফিসে। ভোর সাড়ে চারটে-পাঁচটার মধ্যে উঠে পড়তেন। সুব্রত বক্সীর সঙ্গে হেঁটে চলে যেতেন ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সভামঞ্চ তদারকি করতে। জেলা থেকে লোক আসতে শুরু করে দিত ধীরে ধীরে। তাদের দেখভাল করা থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়ার কাজও করতে হত। বেলা হলে মানিকতলা থেকে নিয়ে আসতে হতো তেরোটি শহিদ স্তম্ভ।
সেই মদন মিত্র, একুশে জুলাইয়ের অন্যতম ডাকাবুকো সংগঠক সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ছ’মাসেরও বেশি বিচারবিভাগীয় হেফাজতে। চার মাস ধরে তাঁর ঠিকানা এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ড। তাঁর আইনজীবী এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর নাম নিয়েছিলেন আদালতে। মদনও ঘনিষ্ঠ মহলে আক্ষেপ করেছেন বারবার, দল আর তাঁর খোঁজ নেয় না! কিন্তু একুশের দিনটা অন্য রকম। ঘুম থেকে ওঠা ইস্তক পরিবহণ মন্ত্রীর মুখে ছিল শুধুই সমাবেশের আলোচনা। একুশ বছরের স্মৃতি!
ঘনিষ্ঠদের বলেছেন, সমাবেশে না থাকলেও তাঁর চোখে সমাবেশটাই ভেসে উঠছে। বলছেন, ‘‘নব্বইয়ের দশকে আমাদের সঙ্গে এত শিল্পী ছিল না। তখন ঠিক একটায় বেলেঘাটার সুরভি শিল্পীগোষ্ঠী গাইতে উঠত। তার পরে হয় পরীক্ষিত বালা কিংবা হিন্দি গানের এক মহিলা শিল্পী। যিনি ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগোঁ’ গাইতেনই। দু’টোয় সভায় ঢুকতেন নেত্রী।’’ এ দিন কত ভিড় হল, কে কী বললেন, নেত্রী কী বললেন বারবারই খুঁটিয়ে জানতে চাইছিলেন। শুনতে শুনতে ঘন হচ্ছিল দীর্ঘশ্বাস। কখনও বিড়বিড় করে বলে উঠেছেন, ‘‘দোষ কারও নয় গো মা...।’’ কখনও বলেছেন, ‘‘তুমি যাবে বঙ্গে, তো কপাল যাবে সঙ্গে..। মিছিলে পৌঁছতে পারলে মঞ্চের এক কোণে ঠিক জায়গা করে নিতাম!’’
মন্ত্রী না যেতে পারলেও তাঁর গুটিকয়েক ঘনিষ্ঠ অনুচর ছাড়া মদনের অনুগামীরা প্রায় সকলেই ছিলেন সমাবেশে। কামারহাটি থেকে মদনের সমর্থকেরা ঠিক করেছিলেন নেতার ছবি আঁকা ‘টি-শার্ট’ পরবেন। শীর্ষ নেতাদের অনুমতি না মেলায় তা হয়নি। তবে সমাবেশের শেষে তাঁদের অনেকেই ঘুরে গেলেন উডবার্ন ওয়ার্ডে। মন্ত্রীর খবর নিয়ে ফিরলেন। কামারহাটির এক কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘আমাদের ২১ জুলাই, সমাবেশ— সব কিছুই তো মদন মিত্র। তাঁকে তো এক বার দেখতে আসতেই হবে!’’
সমাবেশের সব খবর শুনে পোড়খাওয়া নেতা ঘনিষ্ঠ মহলে এ-ও বলেন, ‘‘এ দিন অভিষেকের সত্যিকার ‘অভিষেক’ হল। সকলের প্রতি সম্মান জানিয়েই বলছি, এত অল্প বয়সে যে ভাবে খেটেছে, ঘুরেছে— সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছে। অভিষেককে দেখতে লোক আসছে।’’ সভায় ভিড়ের বহর শোনার পরে বিধানসভা ভোটে জয়ের ব্যাপারেও অনেকটাই নিশ্চিত মদন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আজকের এই সমাবেশ প্রমাণ করল, অমিত শাহ মিথ্যা বলেননি। ২০১৯-এর আগে বিসমিল্লার শুরুয়াতই হবে না।’’