সাংবাদিকদের মুখোমুখি সূর্যকান্ত মিশ্র। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
নানা ধরনের জনমত সমীক্ষায় তাদের কোনও আসন জয়ের ইঙ্গিত নেই। অথচ প্রচারে বেরিয়ে বারবার আক্রান্ত হচ্ছেন বাম প্রার্থীরাই। মুখ্যমন্ত্রী একের পর এক সভায় তাদের উদ্দেশে বলছেন বিজেপিকে ভোট দিয়ে সাহায্য না করতে। যাদের ‘জিরো’ হয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে, সেই বামেদের নিয়ে এত চিন্তার কারণ কী— সেই প্রশ্ন তুললেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।
লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষে কলকাতা প্রেস ক্লাবের ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে শনিবার সূর্যবাবুর কাছে বারবারই প্রশ্ন হয়েছিল, এ বার তো বামেরা বাংলায় ‘জিরো’ হয়ে যাবে! তাদের কাছে এই ভোট কি অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই? সূর্যবাবু বলেন, ‘‘যারা জিরো হবে, তাদের প্রার্থীদের উপরে এ পর্যন্ত পাঁচ বার হামলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তাদের বারবার আক্রমণ করছেন। তার মানে তো বামেদের ভোট আছে এবং সেটা নিয়েই তৃণমূল, কোথাও কোথাও বিজেপি চিন্তিত!’’ তৃণমূল বলছে, রাজ্যে তারা ৪২টি আসনই জিতবে। বিজেপি নেতাদের দাবি, তাঁরা জয়ী হবেন ২৩ আসনে। এমন কোনও দাবির দিকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক যাননি।
ঘরোয়া আলোচনায় সিপিএম নেতারা বলছেন, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে তামিলনাড়ুতে এম কে স্ট্যালিনের ডিএমকে বা উত্তরপ্রদেশে মায়াবতীর বিএসপি কোনও আসন পায়নি। তা-ই বলে তাদের অস্তিত্ব মুছে যায়নি। সূর্যবাবুও এ দিন বোঝাতে চেয়েছেন, কোনও রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব শুধু আসন জয়ের নিরিখে মাপা যায় না। তাঁর কথায়, ‘‘অস্তিত্ব বোঝানোর জন্য সাম্প্রতিক উদাহরণ ছিল ব্রিগেড সমাবেশ। তৃণমূল, বিজেপি এবং বামফ্রন্টের মধ্যে কারা কেমন ব্রিগেড করেছে, সবাই দেখেছে। সিঙ্গুর থেকে রাজভবন পর্যন্ত কৃষক পদযাত্রা হোক বা জেলায় জেলায় আইন অমান্য, ধারাবাহিক আন্দোলনে আছে বামপন্থীরাই।’’ বিজেপি এবং সঙ্ঘের মতাদর্শগত মোকাবিলা করার লড়াইয়ে বামেরা আছে বলেই দাবি করেছেন সূর্যবাবু। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ভোটের সময়ে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে বাগ্যুদ্ধ চলছে ঠিকই। কিন্তু নীতির প্রশ্নে নানা বিষয়েই দু’দলের অবস্থান এক। দুর্নীতির ক্ষেত্রেও ফারাক নেই!’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
টানা ১০ বছর ধরে বামেদের ভোটব্যাঙ্কে যে রক্তক্ষরণ চলছে, তা নিয়ে অবশ্য সূর্যবাবুরা চিন্তিত। উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা ও কাঁচরাপাড়ায় সভা করতে গিয়ে এ দিনই দলের কর্মীদের ‘মাথা নিচু করে’ মানুষের কাছে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। গাইঘাটায় তিনি বলেন, ‘‘মানুষ নিজেরা না-ও আসতে পারেন। তাঁদের মান আছে, অভিমানও থাকতে পারে। মানুষের কাছে আমাদের মান-সম্মান-অভিমান কিছু না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মানুষের কাছে মাথা নিচু করে যান। গরিব মানুষ যদি আমাদের বিরুদ্ধে যান, তাঁদের দোষ দেবেন না। আমাদেরই দুর্বলতা খুঁজতে হবে।’’