অবাধ নির্বাচনই হবে, আশ্বাস পর্যবেক্ষকের

আজ, সোমবার চতুর্থ দফায় বীরভূম ও বোলপুর কেন্দ্রের পাশাপাশি বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর এবং আসানসোলে ভোট। তার আগের দিন  নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পুলিশ-পর্যবেক্ষকের এই জেলা সফর অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২৫
Share:

বিবেক দুবে। নিজস্ব চিত্র

অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে আশ্বাস দিলেন নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পুলিশ-পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে। রবিবার সিউড়িতে বিবেক জানালেন, প্রত্যেক ভোটার যাতে নির্ভয়ে ভোট দান করতে পারেন, তার নির্দেশ তিনি দিয়ে গেলেন জেলা পুলিশ-প্রশাসনকে।

Advertisement

আজ, সোমবার চতুর্থ দফায় বীরভূম ও বোলপুর কেন্দ্রের পাশাপাশি বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর এবং আসানসোলে ভোট। তার আগের দিন নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পুলিশ-পর্যবেক্ষকের এই জেলা সফর অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ। বুধবারই জেলায় ঘুরে গিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের স্পেশ্যাল অবজার্ভার অজয় ভি নায়েক। বিরোধীরা বলছেন, অতীতের একাধিক নির্বাচনের অভিজ্ঞতা মাথায় রাখলে বীরভূমে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করানোটা চ্যালেঞ্জ নির্বাচন কমিশনের কাছে। বিশেষ করে বিরোধীরা বলছেন, গত পঞ্চায়েত ভোটে এই জেলায় ভোট হয়নি বলেই চলে। জেলা পরিষদ বিরোধীশূন্য হয়ে দখল করেছে তৃণমূল। শাসকদলের বাধায় পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরেই বহু ক্ষেত্রে মনোনয়ন জমা করা যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল সে সময়।

এ দিন সকাল সাড়ে নটায় হেলিকপ্টারে সিউড়ি পৌঁছন বিবেক। সোজা চলে আসেন সার্কিট হাউসে। তার পরে নির্ধারিত সূচি মেনেই বেলা ১০টা থেকে বিবেক আলাদা আলাদা ভাবে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন। এর পরে প্রশাসনের কর্তা এবং জেলায় কমিশনের তরফে আসা পর্যবেক্ষকদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বিকেলে সিউড়ি ছাড়ার আগে বিবেক সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি তাঁদের পরামর্শ শুনেছি। তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেছি, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে। এই উদ্দেশ্য সার্থক করতে হলে কী ধরনের ভূমিকা আধিকারিকদের নিতে হবে, তার পরামর্শ দিয়ে গেলাম। যাতে প্রত্যেক ভোটার নির্ভয়ে ভোট দান করতে পারেন।’’

Advertisement

বিবেক এ কথা বললেও জেলার বিরোধী শিবিরের নেতারা গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, পঞ্চায়েত ভোট রাজ্য নির্বাচন কমিশন করায়। কিন্তু,২০১৪ ও ’১৬ সালের বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকার পরেও শাসক দলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের প্রভাবিত করা, হুমকি দেওয়া-সহ একাধিক অভিযোগ ওঠে। সিপিএম, বিজেপি এবং কংগ্রেসের দাবি, এ বারও ভোটের আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বীরভূমে। তলায় তলায় ভোটারদের ভয় দেখানো শুরু হয়েছে। তাই জেলার ভোটপর্ব কেমন কাটবে, তা নিয়ে নজর সব মহলেরই।

এমনিতেও নিরাপত্তার নিরিখে বীরভূম জেলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রাজ্য পুলিশ নয়, জেলার ৯৮.৮ শতাংশ বুথে ভোট হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই। তার জন্য ১২৮ কোম্পানি আধা সেনা জেলায় পৌঁছেছে। তার পরেও নানা প্রশ্ন থাকছে। সেই প্রশ্নই এ দিন কমিশনের বিশেষ পুলিশ-পর্যবেক্ষককে আলাদা আলাদাভাবে জানিয়েছেন বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। সিপিএম বিজেপি, কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা বলেন, ‘‘যতই কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকুক, কিন্তু রাজ্য পুলিশের তত্ত্বাবধানে থাকায় কতটা কাজ হবে, বাড়ি থেকে বুথ পর্যন্ত ভোটারের নিরাপত্তা কতটা সুনিশ্চিত কিংবা আদৌ আজ, ভোটারেরা আতঙ্ক ছাড়া নিজের ভোট দিতে পারবেন কিনা— সেই সব প্রশ্ন থাকছেই। সেগুলো আমরা বিশেষ পুলিশ-পর্যবেক্ষককে জানিয়েছি।’’

বিরোধীদের যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। বৈঠকে হাজির জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী এবং তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় আমরা খুশি। বিরোধীরা হারবে জেনে ভোটের আগে থেকে নানা অজুহাত তুলছে।’’

এমন আবহে, আজ সোমবার ভোট কেমন ভাবে কাটে, তা জেলা প্রশাসনের উপরেই নির্ভর করছে বলে জানাচ্ছেন বিরোধীরা। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু ও পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথ জানাচ্ছেন, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের ব্যবস্থা পাকা। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনেই নেওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement