ছবি: সংগৃহীত।
তৃণমূলকে ভোট না-দিলে কী হতে পারে, সোমবারই সেই ‘হুমকি’ শুনেছেন ভাঙড়ের ভোগালি-২ পঞ্চায়েতের চাষিরা। একই দিনে প্রায় একই ‘হুমকি’ শুনতে হয়েছে হাওড়ার আমতার মুক্তিরচক গ্রামের কিছু বাসিন্দাকেও। বৈঠকে ডেকে তাঁদের বলে দেওয়া হয়, ‘‘সরকারি প্রকল্পে সহায়তা পেতে হলে তৃণমূল করতেই হবে। অন্য দলের হয়ে কাজ করলে একটি আলপিনও মিলবে না।’’
ভাঙড়ের ওই পঞ্চায়েতের প্রধান মোদাসের হোসেনের বিরুদ্ধে তৃণমূলকে ভোট না-দিলে চাষিদের কৃষকবন্ধু প্রকল্পের কার্ড কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। মুক্তিরচকে অভিযুক্ত সেখানকার ৭৭ নম্বর বুথের তৃণমূল সভাপতি ও আহ্বায়ক বাপি মণ্ডল। তাঁর বাড়ির ছাদেই বৈঠক হয়। আরও কয়েকজন নেতাও ছিলেন। বৈঠকে অবশ্য প্রতিবাদ শোনা গিয়েছে। উপস্থিত গ্রামবাসীদের কয়েকজন জানিয়ে দেন, শর্ত তাঁরা মানবেন না।
সোমবারের বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য ক’দিন ধরেই তৃণমূলের বুথ কমিটির সিল মারা এবং বাপির সই করা চিঠি পাচ্ছিলেন গ্রামবাসীরা। চিঠিতে কাউকে ‘বাংলা আবাস যোজনা’য় পাকা বাড়ি, কাউকে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে জবকার্ড দেওয়া নিয়ে আলোচনার জন্য ডাকা হয়। বৈঠকে না-এলে তৃণমূল কর্মীরা তাঁদের বাড়িতে যেতে বাধ্য হবেন বলেও চিঠিতে জানানো হয়েছিল। বৈঠকে জনাপঞ্চাশ গ্রামবাসী হাজির হন। শুরুতেই তাঁদের চক্ষু চড়কগাছ!
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ওই গ্রামবাসীরা জানান, শুরুতেই তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে তা ফেরত দেওয়া হয়। বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ২০২৫ সালের মধ্যে সবাইকে ‘বাংলা আবাস যোজনা’ প্রকল্পে পাকা বাড়ি করে দেওয়া হবে। শর্ত হল, তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে থাকতে হবে। অন্য দলের পতাকা নেওয়া যাবে না। অন্য দলের মিছিলে হাঁটা যাবে না। গ্রামবাসীদের কয়েকজন সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা জানিয়ে দেন, তাঁদের জবকার্ড বা বাড়ি দরকার নেই।
পরে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘চিঠির বয়ানেই বুঝেছিলাম, এটা হুমকি ছাড়া কিছু নয়। যদি প্রকল্পের কিছু আমার প্রাপ্য হয়, তা তো পঞ্চায়েত দেবে। এ জন্য নেতারা বৈঠক করবেন কেন? সেখানে না-গেলে আবার তৃণমূল কর্মীরা বাড়িতেই বা আসবেন কেন? তবু কৌতূহল মেটাতে গিয়েছিলাম।’’ আর এক জন বলেন, ‘‘এতদিন গ্রামে বাস করছি। এমন শর্তের কথা শুনিনি। নেতাদের কথা শুনব না। তাতে বাড়ি না-পাই পাব।’’
বাপি অবশ্য হুমকির অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, ‘‘সবাইকে তৃণমূলের সঙ্গে থাকতে বলা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু অন্য দলের হয়ে কাজ করা নিয়ে কোনও হুমকি দেওয়া হয়নি।’’ কিন্তু প্রকল্পের যে কাজ পঞ্চায়েতের, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সে কাজে তিনি নাক গলাচ্ছেন কেন, বাপি এ প্রশ্নের উত্তর দেননি। জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূল সভাপতি পুলক রায় বলেন, ‘‘বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে মন্তব্য করব।’’
ভাঙড়ের মতো এ ক্ষেত্রেও সরব হয়েছে বিরোধীরা। বিজেপির হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা সহ-সভাপতি সোমনাথ ভুঁইয়া বলেন, ‘‘যে ভাবে চিঠি দিয়ে ডেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, পুরোটাই নির্বাচনী বিধিভঙ্গ। কমিশনে অভিযোগ জানাব।’’ একই বক্তব্য সিপিএমের আমতা-১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক আনন্দ মাজিরও। উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক তথা ওই লোকসভা কেন্দ্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার তুষার সিংলা জানিয়েছেন, অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে। নির্বাচনী বিধিভঙ্গ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।