ভোটপথে: নাকে অক্সিজেন নল নিয়ে রেণু মিশ্র। নিজস্ব চিত্র
প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকে প্রতিবারই ভোট দিয়েছেন তিনি। কোনও ভোট কখনওই বাদ যায়নি। কিন্তু এখন ফুসফুসের কঠিন অসুখে কাহিল। নাকে সব সময় অক্সিজেন নল লাগিয়েই থাকতে হয়। প্রথমে ভেবেছিলেন, এ বার আর হল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্রেফ মনের জোরেই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে কলকাতা থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিলেন। ৩৩০ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে দুমকা গিয়ে ভোট দিলেন খাজুরিয়া মিডল স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রেণু মিশ্র।
বাড়ি দুমকায় হলেও তাঁর ছেলে অভিষেক কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকেন। মা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে গত কয়েক মাস ধরে ছেলের কাছে কলকাতায় থাকেন। অভিষেক বলেন ‘‘মায়ের ব্রঙ্কাইটিস। চলতি বছরের গোড়ার দিকে দুর্গাপুরের হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মাস খানেক আগে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও দুটো ফুসফুসই অকেজো। সব সময় অক্সিজেন নল লাগিয়ে থাকতে হয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এ বার যখন মা বলল ভোট দেবে, তখন প্রথমেই মায়ের আবদার খারিজ করে দিয়েছিলাম।’’ তবে শেষ পর্যন্ত মায়ের জেদের কাছে হার মানতে হয় অভিষেককে। ছেলেকে মা বলেছিলেন, ‘‘আগামী বার ভোট দেওয়ার সুযোগ পাব কিনা জানি না। এ বার দিতে দে।’’ শুনে আর দেরি করেননি অভিষেক। মাকে নিয়ে ১৮ তারিখ সকালে গাড়িতে দুমকার দিকে রওনা হন। তার আগে দুমকার জেলাশাসক মুকেশ কুমারকে জানান মায়ের অবস্থার কথা। মুকেশবাবু আশ্বাস দেন, রেণুদেবী যাতে ভোট দিতে পারেন, তার ব্যবস্থা ভোট কেন্দ্রে থাকবে। অভিষেক জানান, ভোটের দিন সকাল ন’টা নাগাদ জেলাশাসক বাড়িতে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠান। বাড়ি থেকে মিনিট পনেরো দূরের দুমকা ক্লাব ভোটকেন্দ্রে পৌঁছন রেণুদেবী। অভিষেক বলেন, ‘‘মাকে লাইনে দাঁড়াতে হয়নি। পাঁচ মিনিটে ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসেন। ওই মিনিট পাঁচেক শুধু মায়ের নাকে অক্সিজেন নল ছিল না।’’