ক্রাচে ভর, তবু ভোটের ভার

স্কুল তাঁর সমস্যার কথা ভাবলেও নির্বাচন কমিশনের কাছে অন্য ব্যবহার পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রকাশবাবু। ২১ বছর ধরে এই স্কুলে শিক্ষকতা করছেন।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৯ ০৩:৫৫
Share:

প্রকাশরঞ্জন দাস। —নিজস্ব চিত্র।

‘ভোট এলেই ভয়ে থাকি। এই বুঝি ডাক এল।’ ভয়ের সঙ্গে মিশে রয়েছে ক্ষোভ, কিছুটা অভিমানও।

Advertisement

ছোটবেলায় পোলিয়ো আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই থেকেই দু’পায়ে ভর দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে হাঁটাচলা করতে পারেন না। কিন্তু প্রবল ইচ্ছাশক্তিতে ভর করে আর পাঁচ জন সুস্থ মানুষের মতোই লেখাপড়া শিখেছেন তিনি। হাইস্কুলে শিক্ষকতার চাকরিও করছেন। তমলুকের কেলোমাল সন্তোষিনী হাইস্কুলের ইংরেজি শিক্ষক প্রকাশরঞ্জন দাস ছাত্রছাত্রীদের কাছেও জনপ্রিয় বলে জানালেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তিন চাকার মোটরসাইকেলে স্কুলে আসেন তিনি। ক্রাচে ভর দিয়ে দিয়েই এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাস যান। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মৃণ্ময় মাজি বলছেন, ‘‘প্রকাশবাবু শারীরিক ভাবে ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। তাঁর সমস্যার কথা ভেবে আমরা তাঁকে এক তলায় ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।’’

স্কুল তাঁর সমস্যার কথা ভাবলেও নির্বাচন কমিশনের কাছে অন্য ব্যবহার পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রকাশবাবু। ২১ বছর ধরে এই স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। জানালেন, ভোট এলেই ভোটের চিঠি আসে। প্রতিবারই স্কুলের তরফে তাঁর প্রতিবন্ধকতার কথা আগাম জানিয়ে দেওয়া হত সংশ্লিষ্ট দফতরে। কিন্তু তার পরেও তাঁর নামে ভোটের চিঠি আসত। অগত্যা নির্বাচনের কাজ থেকে অব্যাহতি পেতে প্রতিবার জেলা প্রশাসনের অফিসে তাঁকে যেতে হত। সব দেখে তখন তাঁকে ভোটের কাজ থেকে বিরত রাখা হত।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এ বার তাঁর প্রতিবন্ধকতার কথা স্কুল কর্তৃপক্ষ কমিশনে জানালেও ফের প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে প্রকাশবাবুকে নিয়োগপত্র পাঠানো হয়েছে। ওই সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের দিন ক্ষণও জানিয়ে দিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা নির্বাচন দফতর। আর নির্বাচন কমিশনের ওই চিঠি পেয়ে উদ্বেগে প্রকাশবাবু-সহ তাঁর স্কুলের সহকর্মীরা।

স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রকাশবাবুর শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কথা আগাম জানানো সত্ত্বেও বারবার তাঁকে কী ভাবে ভোটের কাজে নিয়োগের চিঠি দেওয়া হচ্ছে তা আশ্চর্যের। এই অবস্থায় এ বারও যে তাঁকেই কষ্ট করে জেলাশাসকের দফতরে গিয়ে ভোটের কাজ থেকে অব্যাহতি চাইতে হবে তা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বছর ৪৮-এর প্রকাশবাবু বলেন, ‘‘এই বিষয়ে জেলা নির্বাচন দফতর যাতে ব্যবস্থা নেয় সেই আবেদন করব।’’

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘নির্বাচনের সময় ভোটকর্মী নিয়োগের জন্যই বিভিন্ন দফতরের কর্মীদের বিষয়ে তথ্য নেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের তথ্য থাকে না। তাই হয়তো এমনটা ঘটে গিয়েছে। তবে উনি বা ওঁর পরিবারের কেউ এসে জানালেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement