—ফাইল চিত্র।
সন্ত্রাসবাদ, ধর্ম বা জাতিবিদ্বেষ, নাকি বিভিন্ন নাগরিক সুযোগ-সুবিধা? ভোটে আমজনতার কাছে কোন বিষয়টি সব থেকে বেশি গুরুত্ব পায়?
একটি সমীক্ষা বলছে, ধর্ম, সন্ত্রাসবাদ বা জাতিবিদ্বেষ নয়, দেশের ভোটারদের একটি বড় অংশের কাছে অগ্রাধিকার পায় রাস্তাঘাট এবং উন্নত গণপরিবহণ ব্যবস্থা। ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’ (এডিআর) নামে একটি পর্যবেক্ষণ সংগঠনের ওই সমীক্ষা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, শহর ও গ্রাম, দুই জায়গার নাগরিকেরাই যথাযথ রাস্তাঘাট এবং উন্নত গণপরিবহণ ব্যবস্থাকে ভোটের বিষয় হিসেবে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
নির্বাচনী দামামা বাজার আগে থেকেই কখনও জাতিবিদ্বেষ, কখনও দুর্নীতি, কখনও বা সন্ত্রাসবাদকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক লড়াই আবর্তিত হচ্ছে সারা দেশে। রয়েছে কেন্দ্রের শাসক দলের সঙ্গে বিরোধীদের নিত্যদিনের তরজাও। এ রাজ্যের বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রে যে-প্রচার চলছে, তাতেও সে-ভাবে এই নাগরিক সুবিধা নিয়ে উচ্চবাচ্য নেই। এ প্রসঙ্গে সমীক্ষক সংস্থার অন্যতম কর্তা এবং আইআইএম-আমদাবাদের প্রাক্তন অধ্যাপক জগদীপ ছোকারের বক্তব্য, রাজনৈতিক দলগুলি মোটেই সাধারণ নাগরিকের দিক থেকে ভেবে ভোটের বিষয় ঠিক করে না। তারা প্রচারের বিষয় ঠিক করে নিজেদের স্বার্থে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা জানান, ভোটারেরা জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে বিভিন্ন পরিষেবা এবং নাগরিক সুবিধা চান। রাস্তা এবং গণপরিবহণ দেশের নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত ভোটারদের কাছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শহরাঞ্চলের বহু জায়গাতেই রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। কলকাতার ক্ষেত্রে মাঝেরহাট সেতু ভেঙে যাওয়ার পরে বেহালা-সহ দক্ষিণ-পশ্চিম শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই রাস্তা নিয়ে অসন্তুষ্ট। রাজ্য সরকার তড়িঘড়ি ‘বেলি ব্রিজ’ তৈরি করলেও বেহালা অঞ্চলে যানজটের সুরাহা হয়নি এখনও। এডিআরের সমীক্ষা জানাচ্ছে, দিল্লিতেও যানজটের সমস্যা ভোটে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
দেশের গ্রামাঞ্চলে বহু জায়গাতেই বেহাল রাস্তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। তবে রাজ্য সরকারের একটি সূত্রের দাবি, পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত এলাকায় গ্রামীণ সড়কের কাজ তুলনায় বেশি হয়েছে। তাই রাজ্যের ভোটে গ্রামের রাস্তা সে-ভাবে বড় প্রভাব ফেলবে না।
রাস্তাঘাট বা গণপরিবহণ লোকসভা ভোটে বিষয় হতে পারে কি না, রাজনৈতিক মহলও তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। কলকাতা পুরসভার ৩ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান অনিন্দ্যকিশোর রাউত বলেন, ‘‘রাস্তা বা গণপরিবহণের মতো নাগরিক সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলি পঞ্চায়েত, পুরসভা কি বড়জোর বিধানসভা ভোটের বিষয় হতে পারে। লোকসভা ভোটে এগুলো বিষয় হতে পারে না।’’ তাঁর দাবি, রাস্তাঘাট বা গণপরিবহণের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার যে-কাজ করেছে, তাতে এগুলো নিয়ে অসন্তোষ নেই এখানে। কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী অবশ্য ভিন্ন মত পোষণ করেন। ‘‘এগুলো সাধারণ মানুষের সমস্যা। তাই ভোটে বিষয়হবেই। আমরা রাজ্যের রাস্তাঘাট এবং গণপরিবহণের বেহাল দশা নিয়ে প্রচারও করছি,’’ বলেন অমিতাভবাবু।
গণপরিবহণের ক্ষেত্রে কলকাতায় কিছু অসন্তোষ রয়েছে। শহরের নিত্যযাত্রীদের একটি বড় অংশ মেট্রো রেলের উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু গত কয়েক বছরে মেট্রো পরিষেবা বারবার যে-ভাবে বেহাল হয়েছে, তাতে নাগরিকেরা অনেকেই ক্ষুব্ধ। এক নিত্যযাত্রীর কথায়, ‘‘মেট্রোয় প্রায়ই যান্ত্রিক বিভ্রাট দেখা দিচ্ছে। কয়েক বার তো বড় দুর্ঘটনা থেকে কোনও মতে রেহাই মিলেছে। সর্বদা মেট্রো সময় মেনে চলে না।’’ সরকারি বাস রাস্তায় থাকলেও হলুদ ট্যাক্সিচালককের দুর্ব্যবহার নিয়েও অনেকে ক্ষুব্ধ। তাঁরা বলেন, ‘‘এই ট্যাক্সির দাপট কমাতে রাজ্য প্রশাসনের তরফে তেমন কড়া পদক্ষেপ দেখা যায়নি।’’ গ্রামাঞ্চলে গণপরিবহণ অনেকটাই টোটো, ট্রেকার বা অটোর উপরে নির্ভরশীল। বহু জায়গায় সরকারি ও বেসরকারি বাসের দাবি এখনও পূরণ হয়নি।