Lok Sabha Election 2019

কোথাও তৎপর, কোথাও গা-ছাড়া বাহিনী

এ দিন আধাসেনার বিরুদ্ধে যে-দুই মহিলা প্রার্থীকে বুথে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা তৃণমূলেরই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৯ ০২:৫৯
Share:

পঞ্চসায়রে বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনেই বহিরাগত।

নিউ টাউনে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলে তৃণমূলের ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ছেঁড়া— রবিবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা এটাই সব চেয়ে বড় অভিযোগ।

Advertisement

এ দিন আধাসেনার বিরুদ্ধে যে-দুই মহিলা প্রার্থীকে বুথে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা তৃণমূলেরই। দক্ষিণ কলকাতার মালা রায় এবং বারাসতের কাকলি ঘোষদস্তিদার। নিজের কেন্দ্রে বাহিনীর ‘অতিসক্রিয়তা’র বিরুদ্ধে কাকলি এ নিয়ে নিউ টাউন থানায় ধর্নায় বসেন। অভিযোগ, তাঁরই নির্বাচনী এলাকা কদমপুকুরে একটি বুথের কাছে এক তৃণমূল-সমর্থকের বাড়িতে রান্না হচ্ছিল। বেশ কিছু লোক ছিলেন সেখানে। কেন্দ্রীয় বাহিনী সেখানে ঢুকে রান্নার হাঁড়ি উল্টে দেয় এবং চেয়ার-টেবিল পুকুরে ফেলে দেয়। ব্যারাকপুরের কামারহাটিতেও তৃণমূলের ক্যাম্প অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে বাহিনীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, সেখানেও খাবার ফেলে দেওয়া হয়। বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাকি শাসানিও দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে পুলিশ ও তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বাহিনীর বচসা বাধে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর তরফে অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

এ দিনের নির্বাচনে ঘুরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ‘সক্রিয়তা’র দুই বিপরীত ছবি উঠে এসেছে ক্যামেরায়। কোথাও তারা অতিসক্রিয়। কোথাও একেবারে গা-ছাড়া ভাব। দিনের শেষে বাহিনীর কার্যকলাপে কংগ্রেস ও বিজেপি খুশি হলেও খুশি নন বাম নেতানেত্রীরা। তৃণমূল তো তাদের বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি অভিযোগ জানিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপি যে-ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে অত্যাচার করেছে, তা আগে দেখিনি।’’ রাজ্যের মুখ্য নিবার্চনী আধিকারিক আরিজ আফতাব বলেন, ‘‘কয়েকটি বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। তা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা নিয়ে এ দিন বড় ধরনের কোনও সমস্যা হয়নি।’’

Advertisement

বারাসতের নোয়াপাড়ায়।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সপ্তম ও শেষ দফায় এসে নির্বাচন কমিশনের দুই পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক এবং বিবেক দুবে এ দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ছ’টি লোকসভা কেন্দ্রে ঘোরেন। ষষ্ঠ দফার নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি)-এর ব্যবহার বদলে ফেলা হয়েছিল। তার পরেও হিংসা আটকানো যায়নি। কমিশন সূত্রের খবর, সেই জন্য কমিশনের নির্দেশ মেনে রবিবার সড়কপথে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার ঘুরে বেড়ান দুই পর্যবক্ষক। কখনও বারাসতের অধীনে সল্টলেকের বিকে ব্লক, কখনও উত্তর কলকাতার হেয়ার স্কুল, কখনও আবার দক্ষিণ কলকাতার শ্রী শিক্ষায়তন স্কুলে গিয়ে তাঁরা কথা বলেন সাধারণ ভোটার, ভোটকর্মী, রাজনৈতিক দলের এজেন্টদের সঙ্গে। দমদম, যাদবপুর এবং ডায়মন্ড হারবার লোকসভা এলাকাও গাড়িতে ঘোরেন তাঁরা। তবে ওই তিন জায়গায় তাঁরা গাড়ি থেকে কোথাও নামেননি। দুপুরে কলকাতার গেস্ট হাউসে ফেরার পরে দুই পর্যবেক্ষক ব্যস্ত হয়ে পড়েন মূলত ভাটপাড়া, কাঁকিনাড়া এবং ক্যানিংয়ের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ে। বিকেলের পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন কেন্দ্রে পুনর্নির্বাচনের দাবি নিয়ে গেস্ট হাউসে যেতে শুরু করেন। একই সময়ে দিল্লি থেকে উপ নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন সরাসরি ফোন করেন রাজ্যের মুখ্য নিবার্চনী আধিকারিক আরিজকে। কথা বলেন দুই পর্যবেক্ষকের সঙ্গেও। পরে দিল্লিতে ওই তিন এলাকার সবিস্তার রিপোর্ট পাঠানো হয়।

সাত দফা নির্বাচনের মধ্যে রবিবারেই সব চেয়ে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনে। সেই ৩৪৯৭টি অভিযোগের মধ্যে ৩১০১টির নিষ্পত্তিও হয়েছে সন্ধ্যা পর্যন্ত। তার মধ্যে বেশ কিছু অভিযোগ ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধেও। অতিসক্রিয়তার, নিষ্ক্রিয়তারও। বাহিনীর সামনেই বেলেঘাটায় একটি বুথের সামনের ভিড়কে অবজ্ঞা করতে দেখা গিয়েছে জওয়ানদের। সেখানেই বুথের লাইন সামলাতে দেখা যায় স্থানীয় লোকজনকে। অন্য জায়গা থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গাড়ি আসতে এ-গলি সে-গলির ভিতরে ঢুকে যান তাঁরা। ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনের ভিতরেই চেয়ার, বেঞ্চি পেতে আড্ডা জমিয়েছিলেন ‘নিজেদের তৃণমূল সমর্থক’ বলে দাবি করা স্থানীয় কিছু লোক। তাঁদের সরিয়ে দেওয়া তো দূরের কথা, পাশে বসে গল্প করতে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের। ওই বুথের গেটে স্লিপ-ও পরীক্ষা করতে দেখা যায় স্থানীয় লোকজনকে। পর্যবেক্ষক আসার পরে তাঁদের বাইরে যেতে বলা হয়।

যাদবপুরে বেশ কিছু এলাকায় বুথের আশপাশের জটলা সরাতে গিয়ে ভাষা বুঝতে সমস্যা হয় মিজোরাম থেকে আসা বাহিনীর জওয়ানদের। গার্ডেনরিচ, বেহালায় কাশ্মীর থেকে আসা বিএসএফ-কর্মীদের গরমে বেশ কাহিল দেখায়। রাজ্য পুলিশের এডিজি আইনশৃঙ্খলা সিদ্ধিনাথ গুপ্ত এ দিন বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোটগণনা কেন্দ্রে ইভিএম পাহারায় থাকবে। ভোট-পরবর্তী হিংসা আটকাতে বাহিনী পাওয়া যাবে কি না, সেই বিষয়ে এখনই নির্দিষ্ট কিছু বলা যাচ্ছে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement