ভোটে বাধা, লাঠি হাতে মারমুখী নানুরের মেয়েরা

বাম জমানায় বীরভূমের নানুর রাজনৈতিক হিংসার কারণে বরাবর শিরোনামে থেকেছে।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

নানুর শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৩৭
Share:

—ফাইল চিত্র।

ভোটদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে ধুন্ধুমার বাধল নানুরের বন্দর গ্রামে। প্রতিরোধে লাঠি তুলে নিলেন মহিলারা। তাড়া করলেন দুষ্কৃতীদের। ওই দুষ্কৃতীরা তৃণমূলের মদতপুষ্ট বলে অভিযোগ বিজেপি-র। পরে তৃণমূলের কিছু সমর্থকের বাড়িতে চড়াও হওয়া এবং তৃণমূল নেতার গাড়ি ভাঙচুরের পাল্টা অভিযোগ ওঠে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। একই অভিযোগে এ দিন অশান্ত হয়েছে রামপুরহাটের দখলবাটি, মুরারইয়ের হাবিশপুর ও সিউড়ি থানার কোমা গ্রামও। দখলবাটিতে বাধা পেয়ে রাস্তায় বসে প্রতিবাদ জানান বছর সত্তরের এক বৃদ্ধ। প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন ভোটার

Advertisement

বাম জমানায় বীরভূমের নানুর রাজনৈতিক হিংসার কারণে বরাবর শিরোনামে থেকেছে। পালাবদলের পরে অবশ্য নানুরে তৃণমূলের দাপট। বিরোধী প্রার্থী না থাকায় এই ব্লকে পরপর দুটি পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটই হয়নি। গত লোকসভা নির্বাচনেও বহু মানুষ ভোট দিতে পারেননি। এ বার ১০০ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর আশ্বাস পেয়ে ভোট দেওয়ার জন্য এককাট্টা হয়ে উঠেছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ বন্দর গ্রামের দক্ষিণপাড়ার দুই বিজেপি কর্মী নয়ন লোহার ও বাবু লোহার ভোট দিতে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, কিছু তৃণমূল কর্মী লাঠি নিয়ে তাঁদের তাড়া করে। তাঁরা আশ্রয় নেন নয়নের কাকা, দৃষ্টিহীন সন্ন্যাসী লোহারের বাড়িতে। সেখানে তিন জনকেই লাঠিপেটা করা হয়। বিজেপি-র দাবি, নয়নের মাথা ফাটে। বাবুর হাত ভেঙে যায়।

কিন্তু, জনরোষ বেশি ছড়ায় বছর পঁয়ষট্টির সন্ন্যাসীবাবুকে মারধর করার অভিযোগে। তাঁর দাবি, ‘‘মুড়ি খাচ্ছিলাম। সেই সময় ওরা (নয়ন, বাবু) ছুটে এসে আমার বাড়িতে এসে আশ্রয় নেয়। সেই আক্রোশে তৃণমূলের লোকেরা আমাকেও পেটায়।’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এর পরেই মহিলারা লাঠিসোটা হাতে পথে নামেন। তৃণমূলের গ্রাম কমিটির অফিস এবং দলের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যের গাড়ির কাচ ভাঙচুর করা হয়। ফেলে ছড়িয়ে দেওয়া হয় তৃণমূল কর্মীদের জন্য রান্না করা তরকারি ও মুড়ি। পুকুরে ফেলে দেওয়া হয় গ্যাস ওভেন, সিলিন্ডার এবং রান্নার বাসনপত্র। মৌ পাল নামে এক তৃণমূল সমর্থকের বাড়িতে ঢিল পাটকেল ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। বাড়িতে তখন মৌদেবী ও তাঁর মেয়ে। দু’জনে হাতজোড় করে তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার আর্জি জানাতে থাকেন মারমুখী মহিলাদের কাছে।

এত কিছু হওয়ার পরেও সেখানে পুলিশ বা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দেখা যায়নি। সংবাদমাধ্যম পৌঁছে যাওয়ায় হইচই হওয়ায় ছবিটা বদলায়। পুলিশ ও বাহিনী এলে তাদের ঘিরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বিজেপি কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘বুড়ো (সুব্রত ভট্টাচার্য) ইন্ধন দিয়ে যাওয়ার পরেই আমাদের উপরে হামলা চালানো হয়। পুলিশ ও বাহিনীকে জানিয়ে কোনও লাভ হয়নি। এখন সংবাদ মাধ্যমের উপস্থিতি টের পেয়ে ছুটে এসেছে।’’ গ্রামবাসী তুলসী লোহার, পাঁচু লোহার, দেবী লোহারেরা বলেন, ‘‘আমরা সবাই তৃণমূল ছিলাম। কিন্তু, ওরা আমাদের দেখেনি। বাড়ি তৈরির অনুদান মেলেনি। বার্ধক্য ভাতা ও বিধবা ভাতা পান না বহু মানুষ। তাই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলাম। সেই রাগেই ভোট দিতে বাধা দিয়েছে।’’

তৃণমূলের ব্লক সভাপতি প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, ‘‘ওরাই আমাদের লোকের উপর চড়াও হয়েছিল। আমাকেও হেনস্থা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু না পেরে পার্টি অফিসে ভাঙচুর করে কর্মীদের খাবার ফেলে দেয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement