—ফাইল চিত্র।
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মালদহ চষে ফেলে তিন জায়গায় সভা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেখানেই না থেমে হঠাৎ সিদ্ধান্তে বিকেলে ইংরেজবাজারে পদযাত্রাও করলেন তিনি। বিরোধীরা তো বটেই, তৃণমূলের তরফেও বলা হচ্ছে, ভোটপ্রচারে এসে এই ধরনের পদযাত্রা মমতা সচরাচর করেন না।
মমতা প্রথম সভা করেন সামসিতে। তার পরে কালিয়াচকের সুজাপুরে এবং শেষ সভাটি করেন পাকুয়াহাটে। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সুজাপুরের সভা শেষ করে নেত্রী যখন পাকুয়াহাটের দিকে রওনা হন, তখনই ইংরেজবাজারে স্থানীয় নেতাদের কাছে খবর আসে, তিনি পদযাত্রা করবেন। বিকেল পাঁচটায় শহরের রবীন্দ্র অ্যাভিনিউ থেকে শুরু হয়ে এই যাত্রা। তার
পরে কেজে সান্যাল রোড, গৌড় রোড, বিজি রোড, নেতাজি রোড হয়ে তা শেষ হয় পুরাতন
মালদহের সেতু মোড়ে। স্থানীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, তড়িঘড়ি হলেও এই পদযাত্রায় লোক উপচে পড়েছে। তৃণমূল সূত্রে দাবি, সেই ভিড় সামাল দিতে কার্যত নাকানিচোবানি খেতে
হয় পুলিশকে।
কেন হঠাৎ এই পদযাত্রা, তা নিয়ে শাসক ও বিরোধী, দু’পক্ষে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, চাপে পড়ে বাধ্য হয়েই পথে নেমেছেন মমতা। কংগ্রেস জেলা সভাপতি মোস্তাক আলম বলেন, “উনি রাস্তায় নেমেছেন কি এমনি? দু’টি আসন নিয়ে চাপে আছেন বলেই বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামতে হয়েছে। কিন্তু তাতেও
শেষ রক্ষা হবে না।” বিজেপির
মালদহ জেলা সভাপতি সঞ্জিত মিশ্র বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ভয় পেয়েছেন। তাই তিনটে সভাতেও কাজ হয়নি বুঝে তিনি অলিগলিতে মিছিল করে বেড়াচ্ছেন। তাতেও লাভ হবে না।’’
এই কথা মানতে চাননি মৌসম নুর। উত্তর মালদহ আসনে তৃণমূলের প্রার্থী মৌসম বলেন, ‘‘নেত্রীর চাপের কিছু নেই। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সভাগুলিতে জনজোয়ার আছড়ে পড়েছে। তা দেখে কংগ্রেস তো বটেই, এমনকি বিজেপিও প্রমাদ গুনছে। তার উপরে নেত্রীর ইংরেজবাজারের পদযাত্রায় কয়েক হাজার মানুষ সামিল হওয়ায় বিরোধীদের মাথা ঘুরে গিয়েছে। তাই এ সব চাপের
কথা বলছে।’’
রাতে অবশ্য এই পদযাত্রা নিয়ে কমিশনের পর্যবেক্ষকের কাছে নালিশ করেন কংগ্রেস নেতা মোস্তাক আলম। তাঁর অভিযোগ, এই
পদযাত্রার অনুমতি ছিল না। যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল জানিয়েছে, তারা আগেই অনুমতি নিয়েছিল। সেই কাগজও তারা কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে।
হঠাৎ পদযাত্রা নিয়ে মালদহবাসী দু’পক্ষের কারও কথাকেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তাঁদের কথায়, এ দিন দু’টি লোকসভা কেন্দ্রের জন্য যে তিনটি জনসভা করেন মমতা, তাতে বারবার করে তিনি মালদহবাসীদের উদ্দেশে বলেছেন— আমাদের জেতান।
একই সঙ্গে তাঁর গলায় ছিল অভিমানের সুর। সামসিতে তিনি বলেন, “আমি মালদহকে খুব ভালবাসি। অনেক আগে থেকেই মালদহে আসি। কিন্তু তৃণমূল তৈরি হওয়ার পর থেকে দেখলাম, মালদহের মানুষ আমাকে একটুকুও ভালোবাসে না। সে জন্য খুব দুঃখ হত। তবু
আমি বারবার মালদহে আসি। বরকতদার (গনি খান চৌধুরী) কাছেও অনেকবার এসেছি।’’
এর পরের জনসভাগুলিতেও মমতা বলেন, ‘‘গত বারের ভোটে আমাদের জেতাননি আপনারা।
তবু আমি এখানে এসেছি। মালদহের জন্য কাজ করেছি। কারণ, আমরা না জিতলেও আসি। আমাদের মনুষ্যত্ব আছে। এ বারে আমাদের জেতান। বাকি কাজও করে দেব।’’
মমতার জবাব
দলত্যাগের পর মৌসম নুরকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেছে কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার তারই জবাব দিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মৌসম ভুল করেনি। ও লড়াকু মানুষের সঙ্গে এসেছে।’’ মমতা বলেন, ‘‘আমিও কংগ্রেস করতাম। কিন্তু দেখেছি কংগ্রেস দিনে, আর রাতে সিপিএম। আমি দল ছেড়ে আসি।’’ মমতা মালদহে পদযাত্রাও করেন।
নিজস্ব সংবাদদাতা