মনিরুল ইসলাম ও গদাধর হাজরা
এক সময় দু’জনেই ছিলেন দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ-বৃত্তে। আজ তাঁরাই দলের প্রচারে কার্যত ব্রাত্য!
এক জন মনিরুল ইসলাম। বীরভূমের লাভপুরের বর্তমান বিধায়ক। অন্য জন গদাধর হাজরা। নানুরের প্রাক্তন বিধায়ক এবং জেলার যুব সভাপতি। স্থানীয় সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত ওই দুই নেতাewকে নিজেদের এলাকায় ভোট-প্রচারে দেখা যায়নি। দলের অন্দরমহলের খবর, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এমন কাণ্ড। যদিও তা প্রকাশ্যে মানতে চাইছেন না জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
একটা সময় ছিল, যখন লাভপুর আর মনিরুল ইসলাম ছিলেন সমার্থক। একদা ফরওয়ার্ড ব্লকের এই নেতার তৃণমূলে আসা অনুব্রতের হাত ধরেই। জেলার সহ-সভাপতি পদও পেয়ে যান। তবে, রাজ্য রাজনীতিতে তাঁর বেশি পরিচিতি, লাভপুরের নবগ্রামে সিপিএম সমর্থক তিন ভাই খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত হিসাবে। ২০১০-এর ৪ জুনের ওই ঘটনায় মনিরুল-সহ মোট ৫১ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়। পরের বছর ভোটে জিতে বিধায়ক হন মনিরুল। ২০১৩ সালে সাঁইথিয়ার এক সভায় প্রকাশ্যে ওই তিন জনকে ‘পায়ের তল দিয়ে মেরে ফেলার’ কথা শোনা যায় তাঁর মুখে। সে নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি। যদিও পরে চার্জশিট থেকে তাঁর নাম বাদ যায়।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ হেন মনিরুল এখন জেলার অধিকাংশ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে ব্রাত্য। অনুব্রতের পাশে তাঁকে শেষ কবে দেখা গিয়েছে, মনে করতে পারেন না মনিরুলের অনুগামীরা। সম্প্রতি এক বিজেপি নেতার মেয়েকে অপহরণের ঘটনার পরে এলাকায় জনরোষের মুখেও পড়তে হয়েছিল মনিরুলকে। দলীয় সূত্রে খবর, মনিরুলের বদলে লাভপুরের অভিজিৎ ওরফে রানা সিংহকে দলীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ করেন অনুব্রত মণ্ডল। এলাকাবাসীর অনেকের বক্তব্য, সেই জন্যই মনিরুল লোকসভা ভোটের প্রচারের কর্মসূচি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। এলাকায় কোনও প্রচার অভিযানে তাঁর দেখা মেলেনি। দলের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, অসুস্থতার কারণেই প্রচারে শামিল হতে পারেননি এই বিতর্কিত বিধায়ক।
মনিরুল ফোন ধরেননি। এসএমএসের জবাবও আসেনি। তবে তৃণমূলের লাভপুর ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘অসুস্থতার কারণেই উনি এখনও পর্যন্ত প্রচারে যোগ দিতে পারেননি।’’
গোলাগুলির লড়াইয়ে বারবার উত্তপ্ত হয়েছে লাভপুরের পড়শি ব্লক নানুরও। গত লোকসভা নির্বাচনে নানুরে প্রায় ৬০ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। সেখানেই সিপিএমের কাছে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে হেরে যেতে হয় গদাধর হাজরাকে। এর পিছনেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব উঠেছিল। আবার ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেখানে বিরোধীরা কোনও প্রার্থী দিতে পারেনি, সেখানেই নানুরে জেলা পরিষদের একটি মাত্র আসনে লড়ে সিপিএমের কাছে হারতে হয় অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী হিসেবে পরিচিত, তৃণমূল ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যকে। ওই ঘটনার পরে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েন গদাধর।
তৃণমূল সূত্রে খবর, ভোটের আগে গদাধরকে ব্লক কোর কমিটি থেকে বহিষ্কার করে নানুরে প্রচার থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গদাধর বলেছেন, ‘‘দল আমাকে নানুর বাদে বোলপুর কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা এলাকায় প্রচারের দায়িত্ব দিয়েছে। আমি সেই দায়িত্ব পালন করছি।’’