প্রচার-ছন্দ: প্রচারে বেরিয়ে অন্য রূপে কাকলি ঘোষদস্তিদার। ছবি: সুজিত দুয়ারি
ভোর ৫টায় ঘুম ভাঙছে। বাড়িতে থাকা তিনশো বছরের প্রাচীন দুর্গা মন্দিরে পুজো সেরে মধ্যমগ্রামের বাড়ি থেকে প্রচারে বেরিয়ে পড়ছেন বারাসতের তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদার।
নিয়ম করে সাতটি বিধানসভা এলাকায় প্রচারে সারছেন কাকলি। এখন মূলত কর্মিসভার মাধ্যমে ও পায়ে হেঁটে প্রচার করছেন। পথচলতি মানুষের কাছ থেকে আশীর্বাদ চাইছেন। পাশাপাশি, যে সব ধর্মীয় বা সামাজিক অনুষ্ঠানে মানুষের সমাবেশ হচ্ছে, সেখানেও ছুটে যাচ্ছেন তিনি। সঙ্গে রাখছেন দুর্গা, কালী ও শিবের ছবি। শুক্রবার বিকেলে এসেছিলেন হাবড়া বামিহাটি এলাকায় একটি কীর্তনের অনুষ্ঠানে। সেখানে তখন চলছিল নাম সংকীর্তন। কাকলি করতালও বাজালেন সেখানে। পাশ থেকে তখন ফিসফিস করে কেউ বলছেন, ‘‘ভোটের জন্য প্রার্থীদের কত কিছুই না করতে হয়!’’
তবে কাকলি বললেন, ‘‘আমার বাপের বাড়িতে বহু বছরের পুরনো রাধাগোবিন্দের মন্দির রয়েছে। সেখানে নিয়িমিত ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়। আমিও আগেও করতাল বাজিয়েছি।’’ দিন কয়েক আগেও হাবড়ায় মতুয়াদের একটি অনুষ্ঠানে এসে কাকলি ডাঙ্কা বাজিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দেন।
তবে এ সব দেখে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। জেলা বিজেপির সহ সভাপতি বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘আমরা আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, হাবড়ায় এসে ডাঙ্কা বাজিয়ে নাচ করলেন বিদায়ী সাংসদ। অথচ সংসদে ওঁরা উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতা করলেন। মতুয়ারা সব বুঝতে পেরেছেন।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
হাবড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের অজিত সাহা বলেন, ‘‘মতুয়া ঠাকুরবাড়ি এবং মতুয়াদের উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী কী কী করেছেন, তা মতুয়ারা জানেন। মতুয়াদের পাশে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ভবিষ্যতেও থাকবেন। মুখ্যমন্ত্রীর সৈনিক হিসাবে কাকলিদি আগেও মতুয়া সভায় এসেছেন। এর সঙ্গে ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই।’’
প্রচারে কাকলি কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করছেন। বলছেন, ‘‘বারাসত পর্যন্ত মেট্রো রেলের সম্প্রসারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্র। নৈহাটি থেকে গঙ্গার জল হাবড়া-অশোকনগর পর্যন্ত নিয়ে আসার কাজও কেন্দ্রের উদাসীনতায় দীর্ঘদিন থমকে ছিল।’’
বারাসত লোকসভা কেন্দ্রে অন্যতম বড় সমস্যা যশোর রোডের যানজট। সড়ক সম্প্রসারণের দাবি এলাকার মানুষের বহুদিনের। ভোট এলেই বারাসত, অশোকনগর, হাবড়ায় উড়ালপুল তৈরির প্রতিশ্রুতি দেয় রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। কাকলি বলেন, ‘‘মধ্যমগ্রাম পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারিত হয়েছে। বাকি অংশের সম্প্রসারণের বিষয়টি বহুবার সংসদে তুলেছি। তিনবার সড়ক মাপজোকেরও ব্যবস্থা করেছি। যানজট সমস্যা মেটাতে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।’’
তাঁর দাবি, হাবড়া স্টেশনে তিনি চাষিদের আনাজ ও পান সংরক্ষণের জন্য একটি হিমঘর তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সিপিএমের বাধায় কাজ থমকে রয়েছে। কাকলি বলেন, ‘‘হিমঘর তৈরি হলে হাবড়া, অশোকনগর, দেগঙ্গার চাষিরা উপকৃত হতে পারতেন।’’ নিজের সাফল্য হিসাবে তুলে ধরছেন বারাসত ১২ নম্বর রেলগেট এলাকায় আন্ডারপাস তৈরির কাজ। প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে বলে তাঁর দাবি।