আপনজন: জেঠিমা দুর্গা অধিকারীর সঙ্গে দেব। বৃহস্পতিবার কেশপুরের বাড়িতে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
প্রতিপক্ষের প্রতি সৌজন্য দেখিয়ে ভোট-যাত্রা শুরু করেছিলেন। এ বার বাড়তি সংযোজন নিজের বিরুদ্ধে ওঠা প্রশ্নের জবাব দেওয়া। জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া।
বৃহস্পতিবার ঘাটালের তারকা তৃণমূল প্রার্থী দেব এসেছিলেন কেশপুরে। পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকায় দেবের দেশের বাড়ি। সেই মাটিতে দাঁড়িয়েই বিদায়ী সাংসদ কবুল করেন, ‘‘আমি মানছি, আমার হয়তো পার্লামেন্টে হাজিরায় কম শতাংশ রয়েছে। তার জন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু ঘাটালের মানুষের জন্য আমি একশো শতাংশ কাজ করার চেষ্টা করেছি।’’
প্রতিপক্ষ বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের কটাক্ষের জবাবও এ দিন দিয়েছেন দেব, সৌজন্যের সঙ্গেই। দেবের কথায়, ‘‘আমি না কি পাঁচ বছরে পাঁচ বারও ঘাটালে আসিনি। যখন বন্যা হয়েছে, আমি আমার বোনের বিয়ে ছেড়ে বন্যাতে এসেছি। ন’টা ট্রাকে ত্রাণ নিয়ে এসেছি। উনি (ভারতী) তখন জেলার পুলিশ ছিলেন। উনিই সিকিউরিটি দিয়ে ট্রাকগুলোকে নিয়ে এসেছিলেন ঘাটালে।’’ এরপরই ভারতীর উদ্দেশে দেবের বার্তা, ‘‘থ্যাঙ্ক ইউ ভারতীদি। আমি বিশ্বাস করি, কাউকে ছোট করে বড় হওয়া যায় না। আমি চাইলে ভারতীদিকে নিয়ে অনেক কিছু বলতে পারি। কিন্তু তাতে
নিজেই নিজের সম্মান হারাব। রাজনীতিতে সৌজন্য থাকা উচিত।’’ ভারতী অবশ্য বলছেন, ‘‘দেব আমার ছোট ভাইয়ের মতো। তবে ব্যক্তিগত সম্পর্ক আর রাজনৈতিক লড়াইয়ের ময়দান আলাদা দু’টো জায়গা। রাজনীতিতে লড়াই হবেই।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ বার প্রচারের গোড়া থেকেই নতুন রূপে পাওয়া যাচ্ছে দেবকে। সেই ভূমিকা যত না নায়োকোচিত, তার থেকে বেশি নেতাসুলভ। গত বারের মতো রোড শো নয়, এ বার দেব প্রচার শুরু করেছেন কর্মিসভা দিয়ে। তাঁর কথাবার্তাও আগের তুলনায় অনেক বেশি রাজনৈতিক। এ দিনও কেশপুর ও দাসপুরের পলাশপাই দু’জায়গায় কর্মিসভা করেছেন দেব। কর্মীদের বার্তা দিয়েছেন, ‘‘উন্নয়ন নিয়ে কথা বলুন। আপনি যে দলে দাঁড়িয়েছেন, সেই দলের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলুন। আমি আমার নেত্রীর কথা বলব, আমার সরকারের কথা বলব।’’
এ দিন গোড়াতেই কেশপুরের মহিষদায় দেশের বাড়িতে যান তৃণমূলের তারকা প্রার্থী। জেঠিমা দুর্গা অধিকারী ভাইপো রাজুকে (দেবের ডাক নাম) বরণ করে নেন। জেঠিমাকে বুকে জড়িয়ে আশীর্বাদ নেন দেব। পরে মহিষদার কালী মন্দিরে পুজো দেন তিনি। প্রথম ভোট-যুদ্ধের আগেও মহিষদায় এসে জেঠু শক্তিপদ অধিকারীর আশীর্বাদ নিয়েছিলেন দেব। গত বছর সিপিএম নেতা সেই জেঠু মারা গিয়েছেন। এ দিন স্মৃতি উস্কে দেব বলেন, ‘‘২০১৪ সালে প্রার্থী হওয়ার পরে যখন এসেছিলাম, জেঠু বলেছিলেন ২ লাখ ভোটে জিতব। থ্যাঙ্ক ইউ কেশপুর। দেবকে এমপি বানানোর স্বপ্ন আপনারা সফল করেছেন।’’
কেশপুরে ঢোকার মুখে এক সংস্থার বিজ্ঞাপনে দেবের ছবির পাশে লেখা, ‘ডায়লগে নয়, ভরসায় টপ’। দেব কিসে সেরা? মহিষদার বাড়িতে বসে দেবের জবাব, ‘‘পাঁচ বছরে অনেক কিছু শিখেছি। ছবির দর্শক, ঘাটালের মানুষ আমাকে ভালবেসেছেন। এই ভালবাসা রক্ষার দায়িত্বটাই তো আসল।’’