প্রাক্তন সাংসদের পুরনো (বাঁ দিকে) ও নতুন (ডান দিকে) পোস্ট।
প্রচারে বেরিয়ে মানুষের কাছে যা প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন, তার এক রকম নির্যাস ‘ফেসবুক’-এ লিখেছিলেন প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ। বাদ দেননি দল সম্পর্কে মানুষের সমালোচনার অংশও। গোল বাধল সেখানেই। নানা রকম মন্তব্যের পরে, শেষমেশ লেখার সেই অংশ পাল্টে দিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ সাইদুল হক।
বিষয়টি সামনে আসতেই বিঁধতে ছাড়েনি তৃণমূল। দলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘সিপিএম নেতাদের দম্ভ ও উন্নাসিকতা মানুষ ভুলতে পারবেন না। ভুল করে মাঝে-মাঝে ওঁদের কেউ সে কথা স্বীকার করে ফেললেও তার পরেই ভোল পাল্টান।’’ যদিও সাইদুলের ব্যাখ্যা, ‘বিভ্রান্তি’ এড়াতেই তিনি লেখার একাংশ পাল্টে দিয়েছেন।
সাইদুল হককে এ বার দলীয় ভাবে গলসি ১ ব্লকের চারটি পঞ্চায়েত এলাকায় ভোটের কাজকর্মের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, মন্তেশ্বর ও মেমারি ২ এলাকায় প্রচারের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। ২৬ মার্চ তাঁর নেতৃত্বে মোটরবাইকে দলের জনা দশেক কর্মী পারাজ স্টেশন থেকে গলিগ্রাম পর্যন্ত চালকল ও অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে অনুদান সংগ্রহে বেরোন। বিকেলে কর্মিসভা করেন তাঁরা। বাড়ি ফিরে রাত ৮টা নাগাদ সারা দিনের কাজের অভিজ্ঞতা ‘ফেসবুক’-এ ‘পোস্ট’ করেন প্রাক্তন সাংসদ। সেখানে লেখেন বাজারের দুরবস্থা, তৃণমূলের একাধিক ‘গ্রুপ’-এর বিরুদ্ধে চাঁদার জুলুম ও তাদের মারামারিতে অশান্তির মতো নানা অভিযোগ তাঁদের কাছে করেছেন মানুষ। কিছু লোক ‘আপনাদের দলের কিছু মুখকে সামনে না আনাই ভাল’, এমন কথাও বলেছেন বলে উল্লেখ করেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এর পরেই নানা মন্তব্য আসতে থাকে ওই ‘পোস্ট’-এ। কেউ সে সব ‘মুখের’ নাম প্রকাশের আর্জি জানান, কেউ আবার বলেন, এ সব কথা ‘ফেসবুক’-এ লেখার বিষয় নয়। দলের ভিতরে এ নিয়ে আলোচনার পরামর্শ আসে। বিতর্ক শুরু হওয়ার পরে, বুধবার দুপুরে ‘পোস্ট’টি ‘এডিট’ করেন সাইদুল। যে অংশটি নিয়ে বিতর্ক, সেটি পাল্টে লেখেন, ‘আমি-সহ আমাদের কয়েক জন সম্পর্কে কিছু প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছে’। বৃহস্পতিবার দুপুরে আরও কিছু অংশ বদল করেন তিনি। তবে এ দিন রাত পর্যন্ত রয়ে গিয়েছে—‘আপনাদের কেবল মিটিং আর মিটিং আর ভাষণ বেশি হচ্ছে’ বা ‘তৃণদের হাত থেকে বাঁচতে বিজেপির দিকে ঝোঁক বাড়ছে’র মতো কিছু মন্তব্য।
সিপিএম নেতা-কর্মীদের একাংশের মতে, ভাষা অদল-বদল করলেও দল সম্পর্কে মানুষের কী মনোভাব, তা এক রকম ওই ‘পোস্ট’-এ রেখেই দিয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ। সাইদুল অবশ্য দাবি করেন, তাঁদের কাছে কেউ দলের কারও নাম নিয়ে কোনও অভিযোগ করেননি। তাই তিনি বিভ্রান্তি এড়াতে ‘পোস্ট’-এর ওই অংশটি বদলে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ইতিবাচক ও নেতিবাচক, দু’রকম কথাই রয়েছে আমার পোস্টে।’’
‘পোস্ট’ বদল নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক। তবে তাঁর দাবি, ‘‘খারাপ ভাবমূর্তির কেউ এখন আর দলে নেই।’’