—ফাইল চিত্র।
শুক্রবার রাজ্যে এসেছে ১০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। আরও ৩৫ কোম্পানি আসতে চলেছে বলে শনিবার রাজ্য প্রশাসনকে বার্তা দিল নির্বাচন কমিশন। আর এ দিনই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় একাধিক পুলিশ কর্তার ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন।
নতুন করে আধা সামরিক বাহিনী কবে রাজ্যে আসবে, এ দিন সে ব্যাপারে কিছু জানায়নি কমিশন। তবে সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই আরও ১০ কোম্পানি বাহিনী রাজ্যে চলে আসতে পারে।
প্রথম দফায় ১১ এপ্রিল ভোট হবে কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে। ভোটের ২৫ দিন আগে বাহিনী পাঠিয়ে কমিশন পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা এবং ভোটারদের মনোবল বাড়াতে চায় বলেই প্রশাসনের একাংশের অভিমত।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তবে শুক্রবার আসা ১০ কোম্পানি বাহিনী দুই ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান এবং কলকাতার কিছু এলাকায় টহল দিতে শুরু করেছে। পরের ধাপে আসা বাহিনীর বড় অংশকে উত্তরবঙ্গে পাঠানো হবে বলেই মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা।
বাহিনী নিয়ে তৎপরতার মধ্যেই এ দিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তা এবং জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও পুলিশ কমিশনারদের
সঙ্গে বৈঠক করেন উপ নির্বাচন কমিশনার।
বিজেপি ইতিমধ্যেই এ রাজ্যের সব বুথকে ‘অতি স্পর্শকাতর’ করার দাবি জানিয়েছে। একই কথা বলেছে কংগ্রেস। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বামেরাও। এই পরিস্থিতিতে এ দিন একাধিক জেলার পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন সুদীপ। জলপাইগুড়ি থেকে কেন এত অভিযোগ আসছে তা পুলিশ সুপারের থেকে জানতে চান তিনি। স্পর্শকাতর বুথের তালিকা না দেওয়ায় উষ্মাও প্রকাশ করেন তিনি।
সম্প্রতি ডায়মন্ড হারবারে বেড়াতে গিয়ে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় দুষ্কৃতীদের হামলার শিকার হন বলে অভিযোগ। সে বিষয়েও জানতে চান সুদীপ।
ডায়মন্ড হারবারে আধিকারিকদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ আসছে। পুলিশ কর্তারা অধস্তনদের দিকে আঙুল তুললে নির্দেশ না-মানা কর্মীদের তালিকা সুদীপ তলব করেছেন বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। উপ নির্বাচন কমিশনার জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও অধস্তন কর্মীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ উঠলে তার দায় সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকেই নিতে হবে।
সূত্রের খবর মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপারের ভূমিকা সন্তুষ্ট করতে পারেনি সুদীপকে। বাঁকুড়া পুলিশ সুপারকে নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে কমিশনের। ভিডিয়ো কনফারেন্সে কোচবিহারের জেলাশাসকের গরহাজিরা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন সুদীপ। তাঁর নিরপেক্ষতা প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। মালদহের জেলাশাসক কার অনুমতি নিয়ে গণনাকেন্দ্র বদল করেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সুদীপ।
তাঁর হুঁশিয়ারি, প্রশাসন ও পুলিশ কর্তারা নিজেদের ভূমিকা না বদলালে প্রয়োজনে বিকল্প ভাবতে হবে। কলকাতার গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করার বিষয়ে আরও তৎপর হওয়ার জন্য পুলিশ কমিশনারকে বলেছেন সুদীপ। জোর দিতে বলেছেন বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের উপরে।
নিয়মিত ভাবে স্পর্শকাতর বুথের তালিকা তৈরি পাশাপাশি, কোন বুথে কত পুলিশ লাগবে, তা দ্রুত সিইওকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন সুদীপ।
বিজেপি এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এ দিনও সুদীপের কাছে রাজ্যের সব বুথ অতি স্পর্শকাতর বলে ঘোষণার দাবি জানানো হয়। সিপিএমের তরফ থেকে সেই দাবি না করা হলেও স্পর্শকাতর বুথের তালিকা রাজনৈতিক দলের থেকে নেওয়ার কথা বলা হয়। সেই দাবি মান্যতা পেয়েছে বলে জানিয়েছেন সিপিএম নেতা রবীন দেব।
তৃণমূলের তরফে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘সিপিএম সবে কয়েকটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। কংগ্রেস ‘আয় রে’ বলেছে। আর আমাদের উচ্ছিষ্টেরা বিজেপিতে। নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতেই তারা ছল চাতুরী করছে।’’
এ দিন সন্ধ্যায় সুবোধ সরকার, অরিন্দম শীল-সহ বিশিষ্টজনেরা অতি স্পর্শকাতর ঘোষণার করার বিষয়টি নিয়ে সুদীপের সঙ্গে দেখা করেন। পরে তাঁরা বলেন, ‘‘সব বুথ অতি স্পর্শকাতর ঘোষণার দাবির ফলে বাংলার মানুষ হিসেবে আমরা অপমানিত বোধ করছি।’’