পাশাপাশি: (বাঁ দিক থেকে) মৌসম নুর, আবু হাসেম খান চৌধুরী এবং ইশা খান চৌধুরী র প্রচার-গাড়ি। মালদহের কোতোয়ালি ভবনে। ছবি: তথাগত সেনশর্মা।
দুধসাদা রঙের নয়া গাড়ি। নম্বর প্লেটও হয়নি। সামনে তৃণমূলের ঝাণ্ডা। এই গাড়ি ঘেঁষেই রয়েছে কংগ্রেসের পতাকা লাগানো আরও একটি সাদা রঙের গাড়ি। তার পাশে টুকটুকে লাল একটি হুড খোলা জিপ।
রাজনৈতিক ‘সৌজন্যের’ এমনই নজির মালদহের কোতোয়ালি ভবনের গ্যারাজে। এক সারিতেই সহাবস্থান যুযুধান দু’পক্ষ হাত-ঘাসফুলের পতাকা দেওয়া গাড়ি। সব গাড়িই বেরোচ্ছে কোতোয়ালি ভবনের সিংহদুয়ার দিয়েই। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা কালীসাধন রায় বলেন, ‘‘এক সময় এই সিংহদুয়ার দিয়েই বেরোতো বরকত গনি খানের মার্সিডিজ। তাঁর মৃত্যুর ১৩ বছর পরেও এই বাড়ি মালদহের রাজনীতিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা ওই গ্যারাজটি দেখলেই বোঝা যায়।’’
দুধসাদা গাড়িটি উত্তর মালদহের প্রার্থী গনি খানেরই ভাগ্নি মৌসম নুরের। জিপটি ওই কেন্দ্রেরই কংগ্রেস প্রার্থী এবং গনি খানের ভাইপো ইশা খান চৌধুরীর। আর মাঝের গাড়িটি দক্ষিণ মালদহের কংগ্রেস প্রার্থী গনির ভাই আবু হাসেম খান চৌধুরী বা ডালুবাবুর। কোতোয়ালি ভবন থেকেই এ বার লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করছেন তিন প্রার্থী। এর মধ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন মৌসম ও ইশা। দু’জনের যে খুব দেখা হচ্ছে, তা অবশ্য নয়।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
দলবদলের আগে নিজের গাড়ির জন্য বাড়িতে আলাদা একটি দরজা করে রেখেছিলেন মৌসম। তবে এখনও সেই গেট খোলেনি। তাই বাড়ির সাবেক সিংহদুয়ার দিয়েই বেরোতে হচ্ছে তাঁকেও। শনিবার সকাল ৮টা নাগাদ গাড়ি নিয়ে হবিবপুরে প্রচারে বেরোলেন তিনি। ঠিক আধ ঘণ্টা পরেই হুড খোলা জিপ নিয়ে হবিবপুর লাগোয়াই বামনগোলা ব্লকে গেলেন ইশা। আর দুপুরের দিকে মাঝের গাড়িটি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন ডালুবাবুও।
রাজনীতির বদল কতটা প্রভাব ফেলেছে কোতোয়ালি ভবনে? মৌসমের কথায়, “রাজনীতিগত মতাদর্শে ফারাক থাকতেই পারে। তবে ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। ভোটে সকলে ব্যস্ত থাকায় ঠিক মতো দেখা হয় না।” তবে দেখা হলে একে অপরের সঙ্গে কথা হয় বলে জানান তিনি। তাঁর সুরেই সুর মিলিয়ে ইশাও বলেন, “ভোটের ময়দানে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়া হবে না। তবে তার জন্য ব্যক্তিগত সম্পর্ক চিড় ধরবে না।” ডালুবাবু বলেন, “দল বদলে ঠিক করেনি মৌসম। তাই দলের নির্দেশে রাজনৈতিক ভাবে তার বিরুদ্ধে লড়াই হচ্ছে। কিন্তু ইশা, মৌসম দু’জনেই আমার স্নেহের।”
রাতে আলাদা আলাদা ভাবে তিনটি গাড়ি ফেরে। পাশাপাশি থাকে। মালদহ এখন তাকিয়ে, ২৩ মে কোনটি বা ক’টি গাড়ি বিজয় মিছিলে বেরোবে, তার দিকে।