অনিয়ম: এলাকা সিল করা হয়েছে, কে বলবে! কেনাকাটা করতে পথে নেমে পড়েছেন স্থানীয়েরা। রবিবার সকালে, সালকিয়ার হরগঞ্জ বাজারে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
করোনা-সংক্রমণ ঠেকাতে হাওড়ার বেশ কিছু এলাকা সিল করে দিয়েছে পুলিশ। যার অর্থ, ওই সব এলাকায় বসবাসকারী লোকজন পুলিশের অনুমতি ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোতে পারবেন না। প্রশাসনের সেই তৎপরতাকে কার্যত তুড়ি মেরে উড়িয়ে রবিবার পথে নামলেন দলে দলে মানুষ। সিল করে দেওয়া এলাকায় ব্যারিকেড সরিয়ে দেদার চলল কেনাকাটা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য পুলিশ ব্যবস্থা নিতে শুরু করতেই বদলাতে থাকে ছবিটা। বেলা ১২টার পরে ফের সুনসান হয়ে যায় রাস্তাঘাট। হাওড়া পুরসভা ও পুলিশের দাবি, সম্পূর্ণ লকডাউন এলাকাগুলিতে এ দিন হোম ডেলিভারি আংশিক শুরু হওয়ায় সমস্যা হয়েছে। কিছু বাজার খুলে রাখতে হয়েছিল। তবে প্রশাসনের আশা, আজ সোমবার থেকে মানুষ সম্পূর্ণ ঘরবন্দি থাকবেন।
এ দিন সকাল থেকেই শহরের বেশির ভাগ বাজার-হাটে কেনাকাটা করতে বেরিয়ে পড়েন মানুষ। একটি এলাকার যে তিনটি ওয়ার্ডে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করেছিল, সেখানেই ভিড় ছিল সবচেয়ে বেশি। জেলা প্রশাসন থেকে সালকিয়ার হরগঞ্জ বাজার বন্ধ করার কথা জানানো হলেও সেখানকার সব দোকান ছিল খোলা। মুদির দোকানে চোখে পড়েছে কয়েকশো মানুষের লাইন। অনেকে ভিড় করেছিলেন নীলষষ্ঠীর বাজার করতে। সকালের দিকে বেলুড়, কদমতলা, শিবপুর, কালীবাবুর বাজারে ছবিটা ছিল কম-বেশি একই। হরগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন প্রবেশপথ শনিবার থেকে গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। সে সব সরিয়েই এলাকার লোকজন দোকানে ঢুকে পড়েন।
তবে বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশি তৎপরতা বাড়তেই রাস্তা এবং বাজার ফাঁকা হতে শুরু করে। মল্লিকফটক, হাওড়া ময়দান চত্বরে কড়া হাতে পরিস্থিতি সামাল দেয় পুলিশ। বেলা বাড়তে গলির মুখগুলি ফের আটকে দেওয়া হয় গার্ডরেল দিয়ে।
উত্তর হাওড়ার যে এলাকাগুলিতে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা হয়েছে, এ দিন সেখানে ভিড়ের প্রসঙ্গে ডিসি (উত্তর) প্রবীণ প্রকাশ বলেন, ‘‘আমরা বাজারগুলির সামনে মাইকে প্রচার চালাচ্ছি। নির্দিষ্ট এলাকায় বাড়ি বাড়ি কাঁচা আনাজ এবং খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও মানুষ শুনছেন না। হরগঞ্জ বাজার লাগোয়া এলাকাগুলিতে সোমবার থেকে হোম ডেলিভারি চালু হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে হয়।’’
ওই এলাকাগুলিতে কী ভাবে বাড়ি বাড়ি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে, এ দিন তার মহড়া দেয় পুরসভা, পুলিশ এবং অনলাইনে খাবার সরবরাহ করার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা। হাওড়া পুরসভার কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘এ দিন আমরা বেশ কিছু অর্ডার নিয়েছি। কী ভাবে তা পৌঁছে দেওয়া যাবে, সে ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে— সব কিছুই দেখা হয়েছে। সোমবার থেকে পুরোদমে এই পরিষেবা চালু করতে পারব। এর জন্য পুরসভা একটি টোল-ফ্রি নম্বর চালু করেছে। নম্বরটি হল ১৮০০-১২১-৫০০০০০।’’
পুর কমিশনার জানান, হরগঞ্জ বাজার জীবাণুমুক্ত করার জন্য বন্ধ করা হয়েছিল। তার পরে কী হয়েছে, তা জেলা প্রশাসন বলতে পারবে। জেলাশাসককে এ নিয়ে বারবার ফোন করা হলেও তিনি তোলেননি।
অন্য দিকে, লকডাউনের জেরে বিপদে পড়া মানুষকে সাহায্য করতে ট্যাক্সির উপরে কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাওড়া সিটি পুলিশ। হাওড়ার ডিসি (ট্র্যাফিক) অর্ণব বিশ্বাস বলেন, ‘‘সিটি পুলিশের ট্র্যাফিক দফতরের ফেসবুক পেজে একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। আপৎকালীন প্রয়োজনে ওই নম্বরে তথ্য-সহ ফোন করলে বাড়িতে ট্যাক্সি পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’