ভিনরাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিক—নিজস্ব চিত্র
দু’মাস আগে বউ-বাচ্চা নিয়ে গুজরাতের সুরাতে দর্জির কাজে গিয়েছিলেন ভাঙড় ২ ব্লকের চকমরিচা গ্রামের বাসিন্দা নাসির খাঁ। ফেব্রুয়ারি মাসে ভাঙড় ২ ব্লকের ছেলেগোয়ালিয়া গ্রামের কারিবুল ঘরামি রাঁচিতে কাজে যান। লকডাউনের কারণে তাঁরা সেখানেই আটকে পড়েছেন।কেউই বাড়ি ফিরতে পারছেন না। তাঁদের অভিযোগ, সেখানে সরকারি ভাবে খাওয়া- দাওয়ার কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। ব্লক এলাকার চিনেপুকুর গ্রামের খয়রুল মোল্লা ঝাড়খণ্ডে কাজে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে আটকে পড়েছিলেন। পরে কোনওক্রমে সেখান থেকে আনাজের গাড়ি করে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন।
শুক্রবার টেলিফোনে নাসির খাঁ বলেন, “এখানে দর্জির কাজ করতে এসে লকডাউনে ফেঁসে গিয়েছি। দর্জির কাজ করে গত দু’মাসে সামান্য কিছু রোজগার করেছিলাম। এখন সেই টাকা পয়সা সব শেষ। দু’বেলা- দু’মুঠো খাবারও জুটছে না।
বউ বাচ্চা নিয়ে কোনও ভাবে বেঁচে আছি। প্রশাসনের তরফ থেকে এখানে কেউ আমাদের খবর নিচ্ছে না। রাস্তায় দাঁড়াতে পারছি না। মাঝে মধ্যে এই এলাকায় বাইরে থেকে খাবার বিলি করতে আসে। কোনও কোনও দিন সেখান থেকে কিছুটা খাবার জোটে। প্রশাসন যদি সহযোগিতা করে তা হলে আমরা বাড়ি ফিরতে চাই।”
কারিবুল ঘরামিও এ দিন টেলিফোনে বলেন, “এখানে একটি বেসরকারি সংস্থার লিফট অপারেটরের কাজ করতে এসেছিলাম। এখন যা পরিস্থিতি কোনও কাজ নেই। বাড়িতে ফিরতে পারছি না। কোনও টাকা পয়সাও নেই। কোম্পানির পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ওটুকুই সম্বল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের কোনও খবর নেওয়া হচ্ছে না। কী ভাবে বাড়ি ফিরব, বুঝতে পারছি না।”
ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে আটকে পড়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার এ রকম বহু শ্রমিক। ভিন রাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে সমন্বয় সাধন করছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্রমিকরা যে সমস্ত রাজ্যে আটকে আছেন, সেখানের প্রশাসন, সাব-কালেক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট রাজ্যের প্রশাসনের সহযোগিতায় জেলার আটকে পড়া শ্রমিকদের জন্য খাদ্য, ওষুধ ও থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে। জেলা কন্ট্রোল রুম থেকে নিয়মিত আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আটকে পড়া শ্রমিকরা যাতে কোনওভাবেই তাদের মনোবল না হারান, সে জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। প্রশিক্ষিত কাউন্সেলাররা (সমাজকল্যাণ ও হাসপাতাল থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) তাঁদের টেলি কাউন্সেলিং করছেন।
দিনে দু’টি শিফটে তাঁদের টেলি কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। জেলা কন্ট্রোলরুম থেকে আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়মিত ফোনে কথা বলছেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা।
প্রশাসনের হিসেবে, ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে লকডাউনের জেরে আটকে পড়েছেন এই জেলার প্রায় ৭৫০০ শ্রমিক। এই শ্রমিকদের অনেকেই বাড়ি ফিরতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। নিয়মিত তাঁরা তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। ভিন রাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে তাঁদের পরিবারেরও যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভিন রাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় সাধন করার ফলে তাঁরা আশ্বস্ত বোধ করছেন বলে প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসন জেলা কন্ট্রোল রুম ২৪ ঘণ্টা খোলা রেখে তাঁদের সম্পর্কে বিশদে তথ্য সংগ্রহ করছে। তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভিন রাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি জেলা প্রশাসন। বিভিন্ন ব্লক অফিসগুলিকে এবং জেলার শ্রম দফতরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা থেকে ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়া শ্রমিকদের তথ্য জোগাড় করার জন্য।
এ বিষয়ে জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, “ভিন রাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে এবং তাঁদের পরিবারের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করেছি। তাঁদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যের প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে আটকে পড়া শ্রমিকদের খাবার, ওষুধ এবং থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।”