সোমবার সকাল ১০টায় শ্যামনগরের কাছে বি বা দী বাগ-কৃষ্ণনগর লোকালে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
আশঙ্কা ছিল। বাস্তবেও সোমবার, সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালানোর নির্দেশিকা কথার কথা হয়েই থাকল। বাদুড়ঝোলা ভিড় নিয়ে লোকাল ট্রেন ছুটল বিভিন্ন শাখায়। ট্রেন থামতেই হুড়মুড়িয়ে সিট দখলের লড়াই, ভিড়ের চোটে ট্রেন ছেড়ে দেওয়া— মিলেছে এমন ছবি। দুপুরে ভিড় কমলেও, দূরত্ব-বিধি মানার তাগিদ ছিল না। বহু যাত্রীকে মাস্ক ছাড়া ট্রেনে চড়তে দেখা গিয়েছে। রেলের তরফে নজরদারি দেখা গিয়েছে মাত্র কয়েকটি স্টেশনে।
শিয়ালদহ নর্থ, সাউথ এবং মেন শাখা মিলে এ দিন ৯০০-র বেশি শহরতলির লোকাল ট্রেন চলেছে। হাওড়া শাখায় ট্রেনের সংখ্যা ছিল ৪৮০-র বেশি। প্রাক্ করোনা-পরিস্থিতিতে শিয়ালদহে দৈনিক ৯১৩টি এবং হাওড়ায় ৪৮৮টি ট্রেন চলত। চেষ্টা করা হচ্ছে আজ, মঙ্গলবার থেকে ওই সংখ্যায় ট্রেন চালাতে।
উত্তরে বনগাঁ, হাসনাবাদ থেকে দক্ষিণে ক্যানিং, নামখানা, ডায়মন্ড হারবার— দুই ২৪ পরগনায় সোমবার সকালের দিকে চলা লোকালে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। বিরাটি, বেলঘরিয়া, বালিগঞ্জ-সহ বহু স্টেশনে ভিড়ের কারণে উঠতে না পেরে বহু যাত্রীকে ট্রেন ছেড়ে দিতেও দেখা যায়।
কোথায় কত লোকাল ট্রেন
দক্ষিণ-পূর্ব রেল তাদের খড়্গপুর শাখার ১৯১টি ট্রেনের মধ্যে পূর্ব ঘোষণা মতো এ দিন ৪৮টি ট্রেন চালিয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, স্পেশাল ট্রেন সব স্টেশনে থামত। এ দিন লোকালগুলি অনেক স্টেশনে দাঁড়ায়নি। সব ট্রেন থামাতে হবে, এই দাবিতে হাওড়ার নলপুর স্টেশনে সকাল ১০টা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরোধ হয়। একই দাবিতে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ব্যান্ডেল-কাটোয়া শাখার ইসলামপাড়া হল্ট স্টেশনেও অবরোধ করেন যাত্রীরা। অবরোধের জেরে অম্বিকা কালনা, ধাত্রীগ্রাম স্টেশনে দাঁড়িয়ে যায় লোকাল ট্রেন। অম্বিকা কালনা স্টেশনে অসুস্থ হয়ে পড়েন দাঁইহাটের এক যাত্রী। তাঁকে ভর্তি করানো হয় কালনা হাসপাতালে। বর্ধমান স্টেশনে শিশুদের নিয়ে যাতায়াতেও সচেতনতা দেখা যায়নি।
সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ফুলেশ্বর স্টেশনে ডাউন পাঁশকুড়া লোকালে উঠতে ঝাঁপিয়ে পড়ে জনতা। অধিকাংশের মুখে মাস্ক ছিল না। ভিড়ে অনেকে উঠতে পারেননি। রেল পুলিশ ছিল দর্শক। ১০টা ১০ মিনিটের পরের ট্রেন ছিল দুপুর ২টোয়। খড়্গপুর ডিভিশনের প্রতিটি লোকালেই উপচে পড়া ভিড় ছিল। ডিভিশনের সদর, খড়্গপুর স্টেশনে থাকা ট্রেনগুলিতে ভরে যায় ১০০ শতাংশের বেশি আসন। ‘খড়্গপুর-মেদিনীপুর-হাওড়া ডেলি-প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক জয় দত্ত বলেন, ‘‘কম সংখ্যক ট্রেন চালিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে রেল।’’ যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, সচেতনতা প্রচারে রেল কর্তৃপক্ষের ন্যূনতম উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
তবে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া, দাঁইহাটে টিকিট কাউন্টারের কাছে, ট্রেনের কামরায় রেলের তরফে সচেতনতা প্রচার হয়েছে। শিয়ালদহ স্টেশনে এবং আসানসোল ডিভিশনে মাস্কহীন যাত্রীদের থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। দুর্গাপুর স্টেশনে করোনা-বিধি ‘ভাঙায়’ পাঁচ জন যাত্রীকে আটক করা হয়। পরে সতর্ক করে ছাড়া হয়।
পূূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, “আমরা যাত্রীদের সচেতন করছি। কিন্তু তাঁদের মনে রাখতে হবে, অতিমারি-পরিস্থিতি কাটেনি। খুব প্রয়োজন ছাড়া, কেউ যেন অযথা ট্রেনে সফর না করেন।’’