ফাইল চিত্র
রাজ্যে লগ্নির খরা কি কাটতে চলছে!
কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ মাসে রাজ্যে ৬০৩৬ কোটি টাকার লগ্নি বাস্তবায়িত হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পরে যেটা রেকর্ড। কারণ, গত সাত বছরে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুয়ায়ী রাজ্যে কোনও এক বছরে বাস্তবায়িত লগ্নির পরিমাণ ৫০০০ কোটি ছাড়ায়নি। এ বার তার উল্টো চিত্র। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রথম পাঁচ মাসেই বাংলায় ১৭টি প্রকল্পে বিনিয়োগ হয়েছে ৬০৩৬ কোটি টাকা। বছর শেষে তা ১০ হাজার কোটি ছাড়াতে পারে বলে রাজ্যের শিল্প দফতরের আশা।
এই কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যানে রাজ্যের শিল্পকর্তারা খুশি হলেও তাঁদের দাবি, লগ্নির পরিমাণ আরও অনেক বেশি। কারণ, ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পের ক্ষেত্রে রাজ্যের স্থান দেশের প্রথম সারিতে। সেই পরিসংখ্যান ধরলে এখনকার লগ্নি-পরিস্থিতি আরও অনেক ভাল। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যানে ক্ষুদ্র শিল্পের কথা বলা থাকে না। মূলত বৃহৎ শিল্পের লগ্নি চিত্রই তুলে ধরে মন্ত্রক। দেশের লগ্নি-পরিস্থিতি যাচাইয়ের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে প্রকাশিত এই পরিসংখ্যানের গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, বিভিন্ন রাজ্য বরাবরই লগ্নির প্রস্তাব নিয়ে আকাশছোঁয়া দাবি করে। জমি, পরিকাঠামো, ব্যাঙ্কঋণের ব্যবস্থা হওয়ার পরে কোনও সংস্থা যখন বাণিজ্য মন্ত্রকে লগ্নির লিখিত প্রস্তাব জমা দেয়, ওই মন্ত্রক তখনই তা প্রকাশ করে। বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর পরে সংস্থার লগ্নি বাস্তবায়িত হয়েছে বলে জানায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রক।
বাস্তবে ৬১টি সংস্থা ৫২০৪ কোটি বিনিয়োগের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রকে আবেদন করে
মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, ২০১৫ সালে বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনে দু’লক্ষ ৪৩ হাজার কোটি টাকার লগ্নি-প্রস্তাব এসেছিল বলে দাবি করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কিন্তু মন্ত্রকের কাছে লিখিত প্রস্তাব জমা পড়েছিল ৭০টি। তাতে বিনিয়োগ হওয়ার কথা ছিল ১৭,৬৬০ কোটি। ২০১৭ সালে শিল্প সম্মেলন থেকে দু’লক্ষ ৩৫ হাজার কোটির মউ সই হয়েছিল। বাস্তবে ৬১টি সংস্থা ৫২০৪ কোটি বিনিয়োগের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রকে আবেদন করেছিল। রাজ্যের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, শিল্প সম্মেলনে বৃহৎ শিল্প থেকে সরকারি পরিকাঠামো, ক্ষুদ্র শিল্প থেকে তথ্য প্রযুক্তি— সব কিছুর তথ্য দেওয়া হয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকে জমা পড়া লিখিত প্রস্তাবের সঙ্গে মউ সইয়ের পরিসংখ্যান তুলনীয় নয়।
কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক কর্তাদের বক্তব্য, এমনিতে পশ্চিমবঙ্গে গড়ে পাঁচ হাজার কোটির লিখিত লগ্নি-প্রস্তাবও জমা পড়ে না। সেখানে এ বছর ইতিমধ্যেই ৬০০০ কোটির বিনিয়োগ আসা উল্লেখযোগ্য ঘটনা। পূর্ব ভারতে লগ্নির চিত্র বদলালে দেশের সুষম বিকাশ হবে। মন্ত্রকের খবর, মে পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে ১৮,৯৭৮ কোটি, গুজরাতে ১৬,২২৪ কোটি এবং উত্তরপ্রদেশে ১১,০৯০ কোটি টাকার বিনিয়োগ বাস্তবায়িত হয়েছে। এর পরেই বাংলার স্থান। স্পঞ্জ আয়রন, ইস্পাত, গাড়ির সরঞ্জাম, প্লাস্টিক এবং হোসিয়ারি শিল্পের হাত ধরেই এসেছে এই বিনিয়োগ।
‘‘লগ্নির পথ সরলীকরণের ক্ষেত্রে আমরা অনেকটাই এগিয়েছি। আগ্রহী শিল্পপতিদের সহায়তা দিতে প্রশাসন সর্বদা সক্রিয়। ফলে পুরনো ভাবমূর্তি কাটিয়ে উঠছে রাজ্য। গত সাত বছরে নীতি সংস্কারে যে-সব পদক্ষেপ করা হয়েছে, তার ফল মিলতে শুরু করেছে,’’ বলেন নবান্নের এক কর্তা।