বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত অশান্তির অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।
বুধবার বিকেলে মেদিনীপুরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে তৃণমূল প্রার্থীর সুজয় হাজরার পোলিং এজেন্টকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। তা নিয়ে বুথের বাইরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে বচসায় জড়ান প্রার্থী। পরে মাইকিং করে এলাকা খালি করে দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী।
রাজ্যের ৬ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়ল ৬৯.২৯ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে তালড্যাংরায় এবং সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে নৈহাটিতে।
বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোন বিধানসভায় কত ভোট পড়ল?
সিতাইয়ে ভোট পড়েছে ৬৬.৩৫ শতাংশ।
মাদারিহাটে ভোট পড়েছে ৬৬.৩৫ শতাংশ।
নৈহাটিতে ভোট পড়েছে ৬২.১০ শতাংশ।
হাড়োয়ায় ভোট পড়েছে ৭৩.৯৫ শতাংশ।
মেদিনীপুরে ভোট পড়েছে ৭১.৮৫ শতাংশ।
তালড্যাংরায় ভোট পড়েছে ৭৫.২০ শতাংশ।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, দুপুর ৩টে পর্যন্ত গড় ভোটদানের হার ৫৯.৯৮ শতাংশ। বুধবার বাংলার ছয় আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, তালড্যাংরায় এখনও পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৬৫ শতাংশ। বাকি পাঁচ আসনের মধ্যে সিতাইয়ে ভোটদানের হার ৫৮ শতাংশ। এ ছাড়াও মাদারিহাট, নৈহাটি, হাড়োয়া এবং মেদিনীপুরে যথাক্রমে ভোট পড়েছে ৫৭.৯৮ শতাংশ, ৫২.৪ শতাংশ, ৬৩.১১ শতাংশ এবং ৬১.৫৪ শতাংশ।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, বাংলার ছয় আসনে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোট পড়ল গড়ে ৪৫.৫৯ শতাংশ। সিতাই, মাদারিহাট, তালড্যাংরা, মেদিনীপুর, নৈহাটি এবং হাড়োয়াতে ভোটদানের হার যথাক্রমে ৪৫ শতাংশ, ৪৬.১৮ শতাংশ, ৪৮ শতাংশ, ৪৬.২৪ শতাংশ, ৩৯.৭৫ শতাংশ এবং ৪৭.১ শতাংশ।
মাদারিহাটের বিজেপি প্রার্থী রাহুল লোহারের গাড়িতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠল। জানা গিয়েছে, মাদারিহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মুজনাই গ্রামে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন রাহুল। সে সময়ই তৃণমূল কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। তাঁর গাড়ি আটকানো হয়। অভিযোগ, তখনই তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। তৃণমূলের দাবি, গত পাঁচ বছরে বিজেপির সাংসদ তথা প্রাক্তন বিধায়ক মনোজ টিগ্গার দেখা মেলেনি। এলাকায় কোনও উন্নয়নও হয়নি। রাহুলকে ‘গো ব্যাক’ স্লোগানও শুনতে হয়।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, সকাল ১১টা পর্যন্ত বাংলার ছয় কেন্দ্রে ৩০.০৩ শতাংশ ভোট পড়ল। এখনও পর্যন্ত ভোটদানের হারে এগিয়ে তালড্যাংরা। সেখানে ভোট পড়েছে গড়ে ৩২ শতাংশ। এ ছাড়াও নৈহাটি, সিতাই, মাদারিহাট, মেদিনীপুর, হাড়োয়াতে ভোটদানের হার যথাক্রমে ২৫.১৭ শতাংশ, ২৯ শতাংশ, ৩১.৮৬ শতাংশ, ৩০.২৫ শতাংশ এবং ৩১.২ শতাংশ।
ইভিএমের দু’টি বোতামে সেলোটেপ লাগানোর অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল কোচবিহারের সিতাইয়ের একটি বুথে। সেখানকার বিজেপি প্রার্থী দীপক রায়ের অভিযোগ, হোকদাহ আদাবাড়ী এসএসকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথের ইভিএমের প্রথম দু’টি বোতামে সেলোটেপ লাগানো ছিল। প্রিসাইডিং অফিসার-সহ ভোটকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘গাফিলতি’র কথা জানালেন বিজেপি প্রার্থী। তিনি নিজেই বুথে ঢুকে ইভিএম থেকে সেলোটেপ খুলে আনেন। ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুথের মধ্যেই অশান্তি শুরু হয়। প্রিসাইডিং অফিসারের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন দীপক। তবে তৃণমূলের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ চলছিল। বিজেপি প্রার্থী এসে সেখানে ঝামেলার সৃষ্টি করেন। তাঁর বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলল তৃণমূল। অন্য দিকে, সিতাইয়ের আরও এক বুথের ইভিএমের বোতামে আঠা দিয়ে কাগজ সাঁটানোর অভিযোগ তুললেন দীপক।
রাজ্যের ছয় বিধানসভার উপনির্বাচনে বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। বেশ কিছু অভিযোগ জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনে। কমিশন সূত্রে খবর, সকাল ৯টা পর্যন্ত মোট ৪১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। দলগত ভাবে বিজেপির পক্ষ থেকেই ১৬টি অভিযোগ গিয়েছে কমিশনে।
ভোটের মধ্যেই মেদিনীপুরের শালবনির সাতপাটিতে আক্রান্ত বিজেপির মণ্ডল সভাপতি বাবলু ঘোষ। অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত গুন্ডাবাহিনীই তাঁর উপর হামলা চালিয়েছে। আহত অবস্থায় ওই বিজেপি নেতাকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, বাবলু দলীয় পোলিং এজেন্টকে বুথে বসাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সে সময়ই শাসক দলের কয়েক জন তাঁকে ঘিরে ধরেন। শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে বচসা। তার মধ্যেই বাবলুকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
নৈহাটিতে চলছে ভোটগ্রহণ। সেই আবহেই নৈহাটির কাছে জগদ্দলে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল। এক জন আহত হয়েছেন বলে খবর।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, সকাল ৯টা পর্যন্ত বাংলার ছয় আসনের মধ্যে ভোটদানের হারে এগিয়ে বাঁকুড়ার তালড্যাংরা। ওই বিধানসভা আসনে ভোট পড়েছে ১৮ শতাংশ। এ ছাড়া নৈহাটিতে ১৪.৫১ শতাংশ, হাড়োয়ায় ১৪.৮, মেদিনীপুরে ১৪.৩৬ এবং মাদারিহাটে ১৫ শতাংশ ভোট পড়ল। এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে সিতাইয়ে (১২ শতাংশ)।
ভোট শুরু হতেই উত্তেজনা ছড়াল হাড়োয়ার সদরপুর ২০০ নম্বর বুথে। বুধের মধ্যেই বিজেপি প্রার্থী বিমল দাসের সঙ্গে বচসায় জড়ালেন তৃণমূলের বুথ এজেন্ট। বিমলের দাবি, দরজার পাশের ইভিএম মেশিন ঘুরিয়ে দিতে হবে। আপত্তি জানান ওই বুথের তৃণমূলের এজেন্ট। তখনই দু’পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়ে যায়। শুধু বুথের ভেতরে নয়, বাইরেও উত্তেজনা ছড়ায়। দু’দলের কর্মী-সমর্থকেরা জড়ো হয় বুথের বাইরে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। জটলা সরিয়ে দেয় তারা।
ভোট শুরুর আগেই নৈহাটিতে উত্তেজনা ছড়াল। অভিযোগ, নৈহাটির ৬৩ নম্বর বুথে বিজেপি এজেন্টকে বসতে দেওয়া হয়নি। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। খবর পেয়ে ওই বুথে পৌঁছন নৈহাটির বিজেপি প্রার্থী রূপক মিত্র। তিনি গিয়েই নিজের দলের এজেন্টকে বুথে বসান। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলই আমার এজেন্টকে বুথে ঢুকতে দেয়নি। আমি এসে তাঁকে বুথে ভেতর বসাই। কমিশনের কাছে বিষয়টি জানাব।’’ যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
সিতাই হাই স্কুলে আদর্শ ভোটগ্রহণ কেন্দ্র করা হয়েছে। কিন্তু সেই বুথে কোনও পোলিং এজেন্ট না থাকার অভিযোগ উঠল। ফলে ভোটগ্রহণ শুরুর আগে ভোটকর্মীরাই পোলিং এজেন্ট ছাড়াই মকপোল পর্ব সেরেছেন।
সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের এক বুথে পাহারায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। —নিজস্ব চিত্র।
সিতাই
তৃণমূল: সঙ্গীতা রায়
বিজেপি: দীপক রায়
কংগ্রেস: হরিহর রায়
বামফ্রন্ট: অরুণকুমার বর্মা (ফরওয়ার্ড ব্লক)
মাদারিহাট
তৃণমূল: জয়প্রকাশ টোপ্পো
বিজেপি: রাহুল লোহার
কংগ্রেস: বিকাশ চম্প্র মারি
বামফ্রন্ট: পদ্ম ওঁরাও (আরএসপি)
মেদিনীপুর
তৃণমূল: সুজয় হাজরা
বিজেপি: শুভজিৎ রায়
কংগ্রেস: শ্যামল কুমার ঘোষ
বামফ্রন্ট: মণিকুন্তল খামরুই (সিপিআই)
তালড্যাংরা
তৃণমূল: ফাল্গুনী সিংহবাবু
বিজেপি: অন্যন্যা রায় চক্রবর্তী
কংগ্রেস: তুষারকান্তি সন্নিগ্রহী
বামফ্রন্ট: দেবকান্ত মহান্তি (সিপিএম)
হাড়োয়া
তৃণমূল: শেখ রবিউল ইসলাম
বিজেপি: বিমল দাস
কংগ্রেস: হাবিব রাজা চৌধুরী
আইএসএফ: পিয়ারুল ইসলাম (বাম সমর্থিত)
নৈহাটি
তৃণমূল: সনৎ দে
বিজেপি: রূপক মিত্র
কংগ্রেস: পরেশনাথ সরকার
বামফ্রন্ট: দেবজ্যোতি মজুমদার (সিপিএমএল-(লিবারেশন))
সকাল ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরু হল রাজ্যের ছয় বিধানসভা আসনে।
বুধবার পশ্চিমবঙ্গের ছয় বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন— সিতাই, মাদারিহাট, তালড্যাংরা, মেদিনীপুর, নৈহাটি এবং হাড়োয়া। লড়াইয়ে রয়েছে তৃণমূল এবং বিজেপি। অন্য দিকে, এ বারের নির্বাচনে কংগ্রেস এবং বামেদের মধ্যে জোট না হওয়ায় দুই দলই লড়ছে আলাদা আলাদা। হাড়োয়া আসনটি আবার বামেরা ছেড়েছে আইএসএফ-কে।
নৈহাটির প্রাক্তন বিধায়ক পার্থ ভৌমিক এখন সাংসদ হয়েছেন। গত লোকসভা ভোটে ব্যারাকপুর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। ফলে নৈহাটির বিধায়ক পদ ফাঁকা হয়েছে। হাড়োয়ার প্রাক্তন বিধায়ক হাজি নুরুল সদ্য প্রয়াত হয়েছেন। তিনি গত লোকসভা ভোটে বসিরহাট থেকে জিতেছিলেন। জয়ের কয়েক মাস পরেই প্রয়াত হন নুরুল। সিতাইয়ের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়া বর্তমানে কোচবিহারের সাংসদ। তালড্যাংরার প্রাক্তন বিধায়ক অরূপ চক্রবর্তী এখন বাঁকুড়ার সাংসদ হয়েছেন। মেদিনীপুরেও একই ভাবে জুন মালিয়া সাংসদ হওয়ায় বিধায়কের পদ ফাঁকা হয়ে রয়েছে। মাদারিহাটে বিজেপির প্রাক্তন বিধায়ক মনোজ টিগ্গা বর্তমানে আলিপুরদুয়ারের সাংসদ। এই ছ’টি বিধানসভা আসনের মধ্যে পাঁচটিই ছিল তৃণমূলের দখলে। একমাত্র মাদারিহাট ছিল বিজেপির। এ বারের ভোটে কোন শিবির ক’টি আসন পায়, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে।
উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটতে না পারে, সেই কারণে আঁটসাঁট নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। মোট ১০৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে ছয় আসনের বিভিন্ন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে। তার মধ্যে সিতাইয়ে ১৮, মাদারিহাটে ১৮, নৈহাটিতে ১৩, হাড়োয়ায় ১৮, মেদিনীপুরে ১৯ এবং তালড্যাংরায় ২২ কোম্পানি বাহিনী থাকবে। কমিশন সূত্রে খবর, ১০৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যে ১০২ কোম্পানি থাকবে বুথের দায়িত্বে আর বাকি ৬ কোম্পানি পাহারা দেবে স্ট্রংরুম।