স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র চিকিৎসকেরা শামিল প্রতিবাদে। ছবি: সারমিন বেগম।
জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থানে বিক্ষোভে এসে নির্যাতিতার মা বলেন, “আমার ছেলেমেয়েরা আজ রাস্তায়, তাই বাড়িতে থাকতে পারিনি, ছুটে এসেছি এখানে। প্রশাসন তোমাদের কোথায় দাঁড় করিয়েছে? মুখ্যমন্ত্রী উৎসবে যোগ দিতে বলছেন, আমার কাছে এটাই উৎসব।”
বিক্ষোভস্থলে উপস্থিত হয়ে নির্যাতিতার দাদা বলেন, “ প্রশাসন কী লুকোতে চাইছে? জবাব দিতে হবে।” আন্দোলনকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা যত দিন না বিচার পাচ্ছি তত দিন আমাদের পাশে থাকুন।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন আরজি কর-কাণ্ডে নির্যাতিতার কাকিমা। তিনি বলেন, “টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কি না সেই প্রমাণ চাইছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন পরিবার ক্ষতিপূরণ চেয়েছে। উনি সেই প্রমাণ দিতে পারবেন?”
স্বাস্থ্য ভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে থাকতে বিক্ষোভস্থলে উপস্থিত হয়েছেন নির্যাতিতার পরিবারে লোকেরা। বিক্ষোভস্থল থেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নির্যাতিতার বাবা বলেন, “আশা করছি প্রশাসনে শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। তোমরা একটু ধৈর্য্য রাখো। তোমরা বাধ্য হয়েছ এই আন্দোলন করেছ। আশা করছি আমরা বিচার পাব।”
স্বাস্থ্যভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান বিক্ষোভে আসছেন নির্যাতিতার বাবা-মা।
স্বাস্থ্যভবনের কাছে এখনও চলছে চিকিৎসকদের অবস্থান। অনেকেই গিটার বাজিয়ে গানও গাইছেন।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করা হবে। সারা রাত চলবে অবস্থান বিক্ষোভ।
আন্দোলনকারীদের দাবি, নবান্ন থেকে সরকারি ভাবে মেল আসেনি। এসেছে স্বাস্থ্য সচিবের থেকে। বৈঠকের সদর্থক ইচ্ছা থাকলে এ ভাবে মেল করা হত না বলে দাবি। তাঁদের আরও দাবি, ‘‘আলোচনার পথ সব সময় খোলা। আন্দোলনের ৩২ দিনে পর আমরা স্বাস্থ্য ভবনে বসে রয়েছি, তখন এ ভাবে মেল করে ডাকা হয়েছে, যাতে আন্দোলনের স্পিরিট নষ্ট হয়েছে।’’ তারা এ-ও জানিয়েছে, ভবিষ্যতে গেলে ১০ জনের দল যাবে না। সব মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিদল যাবে।
আন্দোলনকারীরা জানান, প্রতিনিধি দলের সদস্য সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এটা ‘অপমানজনক’। তাঁরা বলেন, ‘‘এর পরেও রাজ্য সরকার যদি সদর্থক বার্তা দেয়, আমাদের পাঁচটা দাবি মেটানো হবে, সমস্যার সমাধান হবে বলে বার্তা পাই, তা হলে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা ভেবে দেখতে পারি।’’
জুনিয়র চিকিৎসকেরা বলেন, ‘‘এর আগে লালবাজারে গিয়ে পুলিশ কমিশনারের হাতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাইলে তিনি ইস্তফা দেবেন। কিন্তু সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন তিনি ইস্তফা নেননি, কাজ চালাতে অসুবিধা হবে। এ বার যে ভাষায় মেল এল, স্বাস্থ্যসচিবের অ্যাকাউন্ট থেকে এই মেল আসা অপমানজনক।’’
আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘‘আমাদের পাঁচটি দাবি-সহ রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা (ডিএইচএস) এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা (ডিএমই)-র ইস্তফার দাবি করেছিলাম। আশ্চর্যজনক ভাবে দেখলাম, স্বাস্থ্যসচিবের অ্যাকাউন্ট থেকে মেল করা হয়েছে। আমাদের জানানো হয়েছে, আমাদের ১০ জনের প্রতিনিধি দল নবান্নে যেতে পারে। আমরা চাইছিলাম, সরকার সদর্থক বার্তা দিক। কিন্তু স্বাস্থ্যসচিবের থেকে যে মেল এল, তা সদর্থক বলে দেখছি না।’’
আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা স্লোগান দিচ্ছেন, ‘‘ন্যায় বিচার পাচ্ছি না, উৎসবে আর ফিরছি না।’’
স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান। — নিজস্ব চিত্র।
আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘‘যাঁর (স্বাস্থ্যসচিব) বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনিই মেল করেছেন আমাদের। এটা অপমানজনক। আন্দোলনের স্পিরিট নষ্ট হচ্ছে। তা ছাড়া আমাদের দাবি মেটেনি। তাই যাব না।’’
চন্দ্রিমা জানিয়েছেন, সাড়ে ৭টা পর্যন্ত মেলের জবাব বা আন্দোলনকারীদের কোনও প্রতিনিধিদল না আসায় নবান্ন ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর অপেক্ষা এবং তাঁর নবান্ন ছেড়ে যাওয়ার কথা সংবাদমাধ্যমের কাছে জানান অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ একটি মেল পাঠানো হয় আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাছে। মেলটি পাঠান রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। তাঁদের নবান্নে আলোচনার জন্য ডেকে পাঠানো হয়।
মোট ছয় দফা দাবিতে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ভবন অভিযান শুরু করেন জুুনিয়র ডাক্তারেরা। যে পাঁচ দফা দাবির কথা তুলেছেন, সেগুলি হল— প্রথম, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করা, অপরাধের উদ্দেশ্য সামনে আনা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। দ্বিতীয়, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচার। তৃতীয়, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে ‘ব্যর্থ প্রমাণিত’ কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফা। চতুর্থ, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। পঞ্চম, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভয়মুক্ত পরিবেশ গড়া এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করা। পাঁচ দফা দাবির পাশাপাশি, রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা (ডিএইচএস) এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা (ডিএমই)-র ইস্তফাও চেয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।