শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। —ফাইল চিত্র ।
কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর আইন ব্যবস্থার উপর আস্থা রয়েছে। কিন্তু কয়েক জন বিচারপতি যে ভাবে কথা বলেন, তাতে মনে হয় সরকারের বিরুদ্ধে বার্তা দিচ্ছেন।’’ ব্রাত্য বলেন, ‘‘অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, রঞ্জন গগৈদের মতো মানুষকে দেখে কে বিচারপতি আর কে রাজনৈতিক নেতা, তা নিয়ে দেশের মানুষ বিভ্রান্ত।’’
ওএমআর নিয়ে নীতি বদলের দায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। মন্তব্য করলেন তৃণমূল নেতা কুণাল। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা অন্যায় করেছেন, দায় তাঁদের। দল পার্থকে বলেনি এই সব কাজ করতে। দল বলে দেয়নি অমুকের সঙ্গে প্রেম করুন, তমুকের বাড়িতে টাকা রাখুন। তিনি নিজ দায়িত্বে করেছেন। দল এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। দলের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে কী লাভ?’’
এখন থেকে যে এসএসসি পরীক্ষা হবে, তার ওএমআর ১০ বছর সংরক্ষিত রাখা হবে। সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য।
বিজেপির কথাতেই সব কিছু হচ্ছে কি? কুণালের পর প্রশ্ন তুললেন ব্রাত্যও। তিনি বলেন, ‘‘এই ছেলেমেয়েগুলিকে বলির পাঁঠা ভাবছে বিজেপি। এদের জন্য কোনও দরদ নেই ওদের। দরদ আছে শুধু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, যোগ্যদের জন্য তিনি যতদূর যাওয়ার যাবেন। ৮ শতাংশ অযোগ্য, যোগ্য ৯২ শতাংশ।’’
আদালত ধরে নিচ্ছে ‘সুপারনিউমেরারি’ পদ তৈরি করে অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। মন্তব্য করলেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এর আগে আদালত একবারও আমাদের জিজ্ঞাসা করেনি যে কেন ওই পদ তৈরি করা হল। আমরা যদি ‘অপরাধী’ হই, তা হলে আমাদেরও আত্মপক্ষ সমর্থনের জায়গা থাকা উচিত। আদালতের ধরে নেওয়া থেকে রায় শোনানো হচ্ছে।’’
ব্রাত্য বলেন, ‘সুপারনিউমেরারি’ পদ নিয়ে অনেক চর্চা চলছে। কিন্তু ‘সুপারনিউমেরারি’ পদ তৈরি করা হলেও সরকার চাকরি দিতে পারেনি। একটিই চাকরি দেওয়া হয়েছিল। এক জনকেই ‘সুপারনিউমেরারি’ পদে চাকরি দেওয়া হয়েছিল প্রাক্তন বিচারপতি তথা বিজেপির তমলুক কেন্দ্রের প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়। এখন তিনি দুর্নীতি হয়েছে বলে বলছেন। কিন্তু নিজে ‘সুপারনিউমেরারি’ পদ থেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সরকার একটাও চাকরি নিজে থেকে দেয়নি।’’
এসএসসির ২৬ হাজার নিয়োগ বাতিল প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বলেন, ‘‘আগে থেকে আগাম ঘোষণা করে চাকরি যাওয়ার কথা বলেছিল বিজেপি। বিরোধী দলনেতা এবং ওন্দার বিজেপি বিধায়ককে উল্লাস করতে দেখা গিয়েছে এ নিয়ে। এত মানুষের চাকরি চলে গেল, যেন কত আনন্দের কথা! অযোগ্যদের চিহ্নিত করে এসএসসির তরফে তালিকা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন এসএসসির চেয়ারম্যান। তার মানে যোগ্যদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু হাই কোর্ট প্যানেল বাতিল করায় অযোগ্যদের সঙ্গে যোগ্যদেরও চাকরি গিয়েছে। এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে রাজ্য সরকার। পুরো বিষয়টি এখন বিচারাধীন।’’
কুণাল আরও বলেন, ‘‘যাঁরা অযোগ্য বা যাঁদের চাকরি নিয়ে প্রশ্ন আছে, তাঁদের নিয়ে তদন্ত হোক। সেই সব নাম এসএসসি প্রকাশ্যে এনেছে। তা হলে বাকিদের চাকরি খেয়ে কি ন্যায়বিচার হল?’’
কুণাল বলেন, ‘‘যাঁদের দোষ নেই তাঁদেরও একই বন্ধনীভুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। অবিচার করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। রাজ্য সরকার, এসএসসি সুপ্রিম কোর্টে। তবে রাজ্যের বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএমের চরিত্রও সামনে এসেছে। চাকরি চলে যাওয়ার আনন্দে উল্লাস করছে ওরা। বিজেপি বলে দিচ্ছে আগে, তার পর কোর্টে চাকরি যাচ্ছে।’’ বিজেপির অফিস থেকে টাইপ করে কি আদালতে অর্ডার যাচ্ছে? প্রশ্ন তুললেন তৃণমূল নেতা।
২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ বাতিলের রায় নিয়ে বিজেপিকে দুষলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি চাকরি দেয়নি। অথচ চাকরি যাওয়ায় পৈশাচিক উল্লাস করা হচ্ছে। নিয়োগ নিয়ে কিছু ভুল কাজ হয়েছিল। যাঁরা শাস্তি পাওয়ার পাক। জট খোলার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু বিজেপি রাজনীতি করছে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘কত জন যোগ্য প্রার্থীর চাকরি নেওয়া হয়েছে। প্যানেলে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদেরও চাকরি গিয়েছে। যাঁদের কোনও গোলমাল নেই, তাঁদের চাকরি খাচ্ছে কোর্ট। এটা অবিচার। কেউ কেউ বলছে আবার একটা মামলা আসছে, আরও চাকরি যাবে।’’
হাই কোর্টের চাকরি বাতিলের নির্দেশের বিরুদ্ধে বুধবারই সুপ্রিম কোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন (এসএলপি) দাখিল করেছে এসএসসি। উচ্চ আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে গিয়েছে রাজ্য সরকারও। শীর্ষ আদালতে পৃথক ভাবে মামলা করেছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর, এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
সোমবার স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর অধীনে ২৫,৭৫৩টি চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। ওই দিনই এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার জানিয়েছিলেন, হাই কোর্টের এই রায়ে তিনি খুশি নন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘পাঁচ হাজার জনের বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তার জন্য ২৬ হাজার জনের কেন চাকরি বাতিল হবে?’’ আরও জানিয়েছিলেন, আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।