নিজাম প্যালেসে সাংবাদিক সম্মেলনে মুকুল রায়। সোমবার।— নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চমীতেই বিসর্জনের বাদ্যি বাজিয়ে দিলেন মুকুল রায়।
সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দিলেন, অবশেষে তিনি তৃণমূল ছেড়েই দিচ্ছেন। যার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে আজ সোমবারই দলের কার্যকরী সমিতির সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে মেল পাঠিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ। পুজোর পর দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও ইস্তফা দেবেন। পাশাপাশি রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবেও পদত্যাগ করবেন তিনি। কেন দল ছাড়বেন, নতুন কোনও দল গড়ছেন কি না, বিজেপিতে যোগ দেবেন কি না, সে বিষয়ে এখনও ধোঁয়াশাই রেখে দিলেন মুকুল। শুধু বললেন, ‘‘কেন তৃণমূল ছাড়লাম, কেন পদত্যাগ করলাম, আজ কিছু বলছি না। যে দিন রাজ্যসভার পদ থেকে পদত্যাগ করব, সে দিন সবিস্তার সব জানাব।’’
এর পরই এ দিন দুপুরে দলের তরফে সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, মুকুল রায়কে ৬ বছরের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড করা হল। দলে থেকে দলকে দুর্বল করার চেষ্টা করছিলেন বলেই মুকুলের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: সরকারি নিরাপত্তা ছাড়লেন মুকুল
রবিবার কুণাল ঘোষের দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন মুকুল রায়। ওই দিন তিনি জানিয়েছিলেন, অচিরেই ‘বড় সিদ্ধান্ত’-এর কথা ঘোষণা করবেন। এর পরেই তৃণমূলের তরফে জানা যায়, সোমবার দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুকুল সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করা হবে। কিন্তু, মুকুল সেই ‘ঘোষণা’র অপেক্ষায় না থেকে তার আগেই সকাল ১১টা নাগাদ নিজাম প্যালেসে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েদিলেন, তিনি দল ছাড়ছেনই।
আরও পড়ুন: আরও গুরুত্ব কমলো মুকুলের, গেল সহ-সভাপতি পদও
১৯৯৭ সালে তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই দলের অন্যতম প্রধান সৈনিক মুকুল। দলে কার্যত ‘দ্বিতীয়’ হয়ে উঠেছিলেন একটা সময়ে। কিন্তু, সারদা, নারদা-র জল যত ঘোলা হয়েছে ততই দল তথা দলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বেড়েছে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, মমতার সঙ্গে দূরত্ব যত বেড়েছে, মুকুলের ঘনিষ্ঠতা ততই বেড়েছে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে। তৃণমূলের অন্দরে মুকুল ক্রমেই গুরুত্ব হারাচ্ছিলেন। প্রতি দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছিল, দল তাঁকে ধীরে ধীরে ‘ব্রাত্য’ করে ফেলছে। সংসদীয় কমিটি হোক বা দলীয় সহ-সভাপতির পদ— সব কিছু থেকেই তাঁকে সরানো হয়। এত দিন মুকুল দলের প্রাথমিক সদস্যের পাশাপাশি কার্যকরী সমিতির এক জন সদস্য ছিলেন। সেই সঙ্গে রাজ্যসভার সাংসদও। আগামী বছরের ২ এপ্রিল শেষ হচ্ছে সেই মেয়াদ। কিন্তু, সেই মেয়াদ ফুরনোর আগেই তৃণমূল থেকে কার্যত ঝরে পড়লেন মুকুল।