ধূপগুড়ি উপনির্বাচন জেতার পর উৎসব শাসক শিবিরে। —ফাইল চিত্র।
শান্তিতেই মিটেছিল ভোটগ্রহণ। ফলঘোষণা হল শুক্রবার। বিজেপির হাত থেকে ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্র এক প্রকার ছিনিয়ে নিল শাসক তৃণমূল। শুক্রবার গণনার শুরু থেকেই টান টান উত্তেজনা ছিল ধূপগুড়িতে। গত বিধানসভা নির্বাচনের ফল ধরে রেখে বিজেপির ‘রায়’ জিতবেন, না কি তা যাবে তৃণমূলের ‘রায়ের’ হাতে? তা নিয়ে জোর আলোচনা চলছিল। কিন্তু শেষ হাসি হাসল তৃণমূল। বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায়কে ৪,৩০৯ ভোটে হারিয়ে জয় নিশ্চিত করলেন শাসকদলের নির্মলচন্দ্র রায়।
ধূপগুড়িতে শুক্রবার সকালের লড়াইটা শুরু হয়েছিল সমানে সমানে। পোস্টাল ব্যালট এবং প্রথম কয়েক রাউন্ডের গণনায় এগিয়ে ছিলেন বিজেপির তাপসী। তবে এর পর আস্তে আস্তে খেলা ঘুরতে থাকে। ভোটের নিরিখে বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে ধীরে ধীরে ব্যবধান কমতে থাকে তৃণমূল প্রার্থীর। চলতে থাকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তবে পঞ্চম রাউন্ডের পর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি শাসকদলকে। একে একে প্রতিটি রাউন্ডেই বিজেপিকে চাপে রেখে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। সব রাউন্ডের গণনা শেষে দেখা যায়, তাপসীকে চার হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন নির্মলচন্দ্র। শাসকদলের ‘রায়’-এই সায় দিয়েছে জনতা। এর পর শুরু হয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের আবির খেলার ধুম। হাতে হাতে মিষ্টি বিতরণ। সারা ধূপগুড়ি জুড়ে উৎসবের মেজাজে মাতেন শাসকদলের কর্মী-সমর্থকেরা।
প্রসঙ্গত, গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে একটি উপনির্বাচনেও জয় পায়নি বিজেপি। বিধানসভা ভোটে জেতা জোড়া আসন দিনহাটা এবং শান্তিপুরে উপনির্বাচনে হেরে যায় তারা। ফলে দলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ধূপগুড়ি। অন্য দিকে, একের পর এক উপনির্বাচনে জিতলেও শেষটিতে হারতে হয়েছিল তৃণমূলকে। সাগরদিঘিতে জিতেছিল কংগ্রেস। পরে বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস অবশ্য তৃণমূলে যোগ দিলেও শাসকদলের ভোটে হারার ক্ষত রয়েই গিয়েছে। সেই ক্ষতে খানিক প্রলেপ লাগিয়ে ধূপগুড়ি জিতে নিল তৃণমূল।
ধূপগুড়ির জয় নিয়ে বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি বলেন, ‘‘ধূপগুড়ির নির্বাচন ঐতিহাসিক নির্বাচন ছিল। বিজেপিকে হারিয়ে ওই আসনে তৃণমূল জিতেছে। ধূপগুড়ির মানুষকে অনেক ধন্যবাদ। সারা দেশেই জোট ‘ইন্ডিয়া’ ভাল ফল করেছে।’’
দলীয় প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায় জয়ী হতেই ধূপগুড়ির দিকে দিকে আবির খেলায় মাতলেন শাসক তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। শুরু হল মিষ্টি বিতরণ। গান গেয়ে জয় উদ্যাপন করলেন তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব।
তৃণমূলের প্রার্থীর জয়ের পর সমাজমাধ্যম ‘এক্স (সাবেক টুইটার)’ হ্যান্ডলে পোস্ট করে ধূপগুড়ির মানুষ এবং তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের ধন্যবাদ জানালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, ‘‘ঘৃণা এবং ধর্মান্ধতার রাজনীতির বদলে উন্নয়নের রাজনীতি গ্রহণ করার জন্য ধূপগুড়ির মানুষকে ধন্যবাদ। অক্লান্ত পরিশ্রম করে জনগণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য তৃণমূল কর্মীদের স্যালুট জানাই। আমরা ধূপগুড়ির উন্নয়ন নিশ্চিত করার চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখব না। জয় বাংলা।’’
বিজেপির হাত থেকে ধূপগুড়ি ছিনিয়ে নিল শাসকদল তৃণমূল। উপনির্বাচনের গণনা শেষে বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায়কে ৪,৩০৯ ভোটে হারিয়ে জয়ী হলেন তৃণমূলের প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়।
শেষ হল ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের সপ্তম রাউন্ডের গণনা। ভোটের ব্যবধান কমলেও সপ্তম রাউন্ডের গণনা শেষে এগিয়ে শাসক তৃণমূলই। বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায়ের থেকে ২,৯৩১ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়। ষষ্ঠ রাউন্ড শেষে তৃণমূল এগিয়ে ছিল ৩৭৭৩ ভোটে।
ষষ্ঠ রাউন্ডের শেষেও বিজেপিকে পিছনে রেখে এগিয়ে রয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র। ষষ্ঠ রাউন্ডের গণনার পর তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৬২,৬০২। গেরুয়া শিবিরের তাপসী পেয়েছেন ৫৮,৮২৯টি ভোট। অর্থাৎ, ৩৭৭৩ ভোটে এগিয়ে তৃণমূল।
পঞ্চম রাউন্ডের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষেও এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়। পঞ্চম রাউন্ডের গণনা শেষে তিনি পেয়েছেন ৫০,৪৪১টি ভোট। তাঁর থেকে ৯৬২ ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায়। তিনি পেয়েছেন ৪৯,৪৭৯টি ভোট। অন্য দিকে, সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায় পেয়েছেন ৫,৫৯০টি ভোট।
ধূপগুড়িতে পঞ্চম রাউন্ডের গণনা শেষে এগিয়েই রয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়। ভোটের নিরিখে পিছিয়ে বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায়। বহু ভোটে পিছিয়ে কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায়।
ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের চতুর্থ রাউন্ড শেষে বিজেপি এবং সিপিএমের থেকে এগিয়ে শাসকদলের প্রার্থী নির্মলচন্দ্র। চতুর্থ রাউন্ড শেষে তাঁর প্রাপ্ত ভোটে ৩৯, ০৯৬। অন্য দিকে, বিজেপি প্রার্থী তাপসী পেয়েছেন ৩৮, ৭৩৬।
ধূপগুড়িতে চলছে টান টান লড়াই। চতুর্থ রাউন্ডের গণনা শেষে এ বার আরও খানিকটা এগিয়ে গিয়েছেন শাসকদলের প্রার্থী। তৃতীয় রাউন্ডের শেষে বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায়ের থেকে একশোর কিছু বেশি ভোটে এগিয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়। কিন্তু চতুর্থ রাউন্ড শেষে তিনি এগিয়ে ৩৬০ ভোটে।
ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে দ্বিতীয় রাউন্ডের গণনা শেষেও এগিয়ে বিজেপি। দ্বিতীয় রাউন্ড শেষে বিজেপি প্রার্থী তাপসীর প্রাপ্ত ভোট ১৮,১৬৫। অন্য দিকে, তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র পেয়েছেন ১৭,১৪৭টি ভোট। অর্থাৎ বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ১,০১৮ ভোটে।
ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে টান টান লড়াই। পোস্টাল ব্যালট গণনায় তৃণমূল এবং কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থীর তুলনায় এগিয়ে গেলেন বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায়। তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়ের থেকে প্রায় ১৬০০ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। প্রথম রাউন্ড শেষে তাপসী পেয়েছেন ৮ হাজার ৮৯৯টি ভোট।
ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের ভোটগণনায় এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থী। প্রাথমিক গণনার হিসাবে কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায় এবং বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায়ের থেকে এগিয়ে রয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী অধ্যাপক নির্মলচন্দ্র রায়।
শুক্রবার সকাল ৮টায় শুরু হল ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ভোট গণনা। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জলপাইগুড়ি দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে গণনা চলছে।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়ন্ত রায় জলপাইগুড়ি আসনে ১,৮৪,০০৪ ভোটে জেতেন। ধূপগুড়ি বিধানসভাতেও এগিয়ে ছিল বিজেপি। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জেতে ৪,৩৫৫ ভোটে। দলের ভোটপ্রাপ্তির হার ছিল ৪৫.৬৫ শতাংশ। আর তৃণমূল পেয়েছিল ৪৩.৭৫ শতাংশ। অনেক পিছিয়ে থাকা সিপিএম পেয়েছিল ৫.৭৩ শতাংশ ভোট। কিন্তু সদ্য শেষ হওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই অঙ্ক আর এক নেই। জেলা পরিষদ স্তরে তৃণমূল পেয়েছে ৪৭.৬০ শতাংশ ভোট। সেখানে বিজেপি পেয়েছে ৩৯.২০ শতাংশ আর বাম-কংগ্রেস জোটের দখলে ১২.১০ শতাংশ ভোট। এটা থেকে একটা সহজ অঙ্কে আসা যায় যে, তৃণমূলের ভোট কিছুটা বৃদ্ধির পাশাপাশি রামের ভোট অনেকটাই বামে এসেছে। এই ক্ষয় মেরামতি কি বিজেপি উপনির্বাচনে করতে পারবে?
এই উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী অধ্যাপক নির্মলচন্দ্র রায়। কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী তথা প্রাক্তন শিক্ষক ঈশ্বরচন্দ্র। আর বিজেপি প্রার্থী করেছে কাশ্মীরে নিহত জওয়ানের স্ত্রী তাপসী রায়কে।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে জয়ী হন বিজেপির বিষ্ণুপদ রায়। তাঁর মৃত্যুতেই এই উপনির্বাচন। পাহাড় লাগোয়া ধূপগুড়ি বিধানসভায় লড়াই এ বার ত্রিমুখী। তিন জনই রায়। তিন জনই রাজবংশী। কারণ এই আসনের ভোটারদের বড় অংশই রাজবংশী। সেই অঙ্ক মাথায় রেখেই বরাবর সব দল প্রার্থী দেয় এখানে। ১৯৭৭ সাল থেকেই বিধানসভায় রাজবংশী প্রতিনিধি পাঠিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলার এই আসন।