—প্রতীকী ছবি।
পাঁচ বছরের মধ্যে ছবিটা যে এ ভাবে বদলে যাবে, ভাবতে পারেননি তৃণমূল কর্মীরা। গত গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনেও কোদালের বাট, উইকেট নিয়ে ঠিক একই ভঙ্গিতে বিরোধীদের উপরে চড়াও হয়েছিলেন শাসক দলের কর্মীরা। শনিবার সেই উইকেট, কোদালের বাটে পতাকা বেঁধে শাসক দলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া করলেন বাম-কংগ্রেসের কর্মীরা। যেন রণক্ষেত্রের চেহারা নিল ডোমকলের ব্লক অফিস চত্বর।
ডোমকলের রাস্তায় এই উত্তেজনা, মারপিট এমনকি গুলি-বোমাও নতুন নয়। বরং নির্বাচন, বিশেষ করে পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে এলেই শিউরে ওঠে ডোমকল। মনে পড়ে যায়, ২০০৩ সালে ও ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ডোমকল সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে উঠেছিল। ২০০৩ সালে আক্রমণের অভিযোগ ছিল তৎকালীন শাসক বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে। যদিও কংগ্রেসও পাল্টা আক্রমণ করে কোথাও কোথাও। আবার, ২০০৮ সালে মার খেয়েছিল প্রধানত বামফ্রন্টই। কংগ্রেস তুলনায় কম আক্রান্ত হয়। সব মিলিয়ে সে বছর মারা যান ১৪ জন। এলাকাবাসীর মতে, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। এ দিন দেখা গেল শাসক দল তৃণমূল সকালে একতরফা আধিপত্য দেখালেও বেলা বাড়তে বাম ও কংগ্রেসের কর্মীরা পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন।
সীমান্ত লাগোয়া ডোমকলের বাসিন্দাদের বক্তব্য, যে-ই আক্রমণ করুক এবং যে দলই আক্রান্ত হোক, ভোট এলেই ভয়ে প্রাণ কাঁপছে সাধারণ মানুষের। ব্যাহত হচ্ছে জনজীবন। শুধু ডোমকল নয়, নির্বাচনের দিন ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই জেলার আর এক প্রান্ত কান্দিতে খুন হয়েছেন কংগ্রেস কর্মী ফুলচাঁদ শেখ। সালারে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ১১ জন আহত হয়েছেন। মনোনয়নের প্রথম দিনে রানিনগরে সংঘর্ষ হয়েছে তৃণমূলের সঙ্গে বিরোধীদের।
প্রশ্ন উঠেছে, মুর্শিদাবাদ ও ডোমকলে ভোট এলেই সন্ত্রাসের ‘ঐতিহ্য’ থাকলেও কেন পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না? পুলিশের দাবি, বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে। কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্র যে এখনও অনেকের হাতে রয়ে গিয়েছে তার প্রমাণ বাসিরকে গ্রেফতারই। বাসিন্দাদের বক্তব্য, বোমা তৈরি হচ্ছে জেলাতেই, আগ্নেয়াস্ত্র আসছে বাইরে থেকে। জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করছি।’’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অসীম খানের হাতেই এ দিন ধরা পড়েন বাসির। অসীম পরে বলেন, ‘‘কোথা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র আসছে, কী ভাবে আসছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’’
জেলা সিপিএমের সম্পাদক জামির মোল্লা বলছেন, ‘‘আমরা কার্যত বারুদের স্তূপে বসে রয়েছি।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি শাওনি সিংহ রায় বলেন, ‘‘কিছু মুষ্টিমেয় লোক থাকে, যারা উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করে। রং না দেখে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পুলিশ ব্যবস্থাও নিচ্ছে।’’
এক সময় ডোমকলে এত বোমা পড়ত যে বাসিন্দারাই এলাকার নাম দিয়েছিলেন ‘বোমকল’। এ বার পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন পর্বেই যা অবস্থা, তাতে চিন্তার মেঘ ঘন হচ্ছে।