ESI

নিয়মের গেরো, ইএসআই সুবিধা পেতে কেন্দ্রকে চিঠি

ইএসআই হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে না-পেরে প্রেমের সহকর্মী নন্দকিশোর দাস মারা গিয়েছেন, অভিযোগ পরিবারের।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২০ ০২:৪৬
Share:

ইএসআই হাসপাতাল, ফাইল চিত্র

গত জানুয়ারিতে বুকে ‘স্টেন্ট’ বসেছে বন্ধ গোন্দলপাড়া জুটমিলের শ্রমিক প্রেম ঠাকুরের। ইএসআই-এর সুবিধা পাননি। আত্মীয়-বন্ধুদের কাছে হাত পাততে হয়েছে। মাসে ১২০০ টাকার ওষুধ লাগে। এ ক্ষেত্রেও ভরসা আত্মীয়েরা।

Advertisement

ইএসআই হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে না-পেরে প্রেমের সহকর্মী নন্দকিশোর দাস মারা গিয়েছেন, অভিযোগ পরিবারের।

শ্রীকৃষ্ণ পালের বুকে পেসমেকার রয়েছে। দৈনিক ওষুধ লাগে। কিন্তু ইএসআই পাশে নেই বলে তাঁর অভিযোগ। একাত্তর বছরের মানুষটি সাহাগঞ্জের বন্ধ ডানলপ কারখানার অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক।

Advertisement

এমন উদাহরণ কম নেই। নিয়মের গেরোয় বহু শ্রমিক ইএসআইয়ের (এমপ্লয়িজ় স্টেট ইনসিওরেন্স) সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে, রোগব্যাধি হলে চরম সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাঁদের। আর এই করোনা-আবহে তাঁদের প্রাপ্য চিকিৎসা পরিষেবা যাতে চালু করা হয়, সেই দাবিতে সরব হয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সব শ্রমিক যাতে ইএসআই পরিষেবা পান, সেই দাবিতে কেন্দ্রীয় শ্রমম‌ন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন এআইইউটিইউসি-র সর্বভারতীয় সভাপতি তথা ইএসআই কর্পোরেশনের সদস্য শঙ্কর সাহা।

শঙ্করবাবু বলেন, ‘‘নথিবদ্ধ সব শ্রমিক এবং তাঁদের পরিবারের লোকজনের করোনা-সহ সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রমিকদের এই সংক্রান্ত টাকা জমা না পড়লেও তা করতে হবে। না হলে ইএসআই তার সামাজিক দায়বদ্ধতা পূরণে ব্যর্থ হবে।’’

ইএসআইয়ের সুবিধা কী ভাবে মেলে?

ইএসআই সূত্রে জানা গিয়েছে, কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের বেতনের নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা তাদের তহবিলে জমা পড়ে। সেই সঙ্গে কারখানা কর্তৃপক্ষও শ্রমিকের খাতে নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ জমা দেন। এর বিনিময়েই ওই শ্রমিক এবং তাঁর পরিবারের লোকজন ইএসআই হাসপাতালে নিখরচায় চিকিৎসা পান। সুপার-স্পেশ্যালিটির সুবিধাযুক্ত বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে ইএসআই-এর গাঁটছড়া রয়েছে। ইএসআই-তে সম্ভব না হলে ওই সব হাসপাতালে শ্রমিকদের পাঠানো হয়। কিন্তু ছ’মাস শ্রমিকের ইএসআই বাবদ টাকা (শ্রমিকদের কথায় ‘চাঁদা’) জমা না-পড়লে চিকিৎসার সুবিধা মেনে না। আবার কর্মজীবনের শেষ চার বছর ওই টাকা জমা না পড়লে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকও ওই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হ‌ন।

শ্রমিকদের অভিযোগ, এই নিয়মের গেরোয় ইএসআই ব্যবস্থা তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রেই কার্যকর হয় না। অনেক সময়েই কারখানা বা জুটমিল বন্ধ থাকে দীর্ঘদিন। তখন ইএসআই-তে টাকা জমা পড়ে না। গোন্দলপাড়া চটকল যেমন প্রায় দু’বছর বন্ধ। প্রেম বলেন, ‘‘দু’বছর আগে হার্টের রোগ ধরা পড়ায় কলকাতার মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালে চিকিৎসা হয়। দেড় মাস পরে ফের গেলে বলা হয়, ‘চাঁদা’ জমা না পড়ায় আর চিকিৎসা মিলবে না। আমি ১৯৯৯ সাল থেকে জুটমিলে কাজ করছি। এত দিন আমার টাকা ইএসআই তহবিলে জমা পড়ল। তার কোনও মূল্য নেই! কী অদ্ভুত নিয়ম!’’

এই প্রশ্নই তুলছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা ওই দলের শ্রমিক সংগঠ‌ন টিইউসিসি নেতা রাজেশ জয়সোয়ারা। তিনিও ওই চটকলের শ্রমিক। তাঁর কথায়, ‘‘বিনাদোষে কেন বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে?’’ বাঁশবেড়িয়া স্টেশন রোডের বাসিন্দা শ্রীকৃষ্ণ পাল দীর্ঘদিন ডানলপ কারখানায় কাজ করেছেন। ২০০৭ সালে অবসর নেন। তিনি বলেন, ‘‘২০০৪ সালে আমার বুকে পেসমেকার বসে। ২০১৪ সালে বদল করতে হয়। কারখানা বন্ধ থাকায় ‘চাঁদা’ জমা পড়েনি বলে ইএসআই-এর সুবিধা পাইনি। প্রতি মাসে ওষুধে প্রায় হাজার টাকা খরচ। কোনও রকমে চলছে। গুজরাতের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকেরা এই সুবিধা পাচ্ছেন। আমরা কেন পাব না?’’

বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন‌ ধরে আন্দোলন করছে ‘অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কল্যাণ সমিতি’ নামে চন্দননগরের একটি সংগঠন। তাদের তরফে বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলে‌ন, ‘‘শ্রমিকের চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ করা নির্মমতার পরিচয়। কারখানা চলবে কিনা, তা শ্রমিকের উপরে নির্ভর করে না। তাঁদের বঞ্চিত করা হবে কেন? বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করতে চেয়ে আমরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি।’’

এআইইউটিইউসি নেতা দিলীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজ্যে পাঁচটি চটকল বন্ধ। আরও বহু কল-কারখানা বন্ধ। অসংখ্য শ্রমিক বিপাকে পড়েছেন। ‘চাঁদা’ জমা পড়ার কাগুজে নিয়ম-কানুন এই কঠিন পরিস্থিতিতে বিবেচ্য হওয়া উচিত নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement