নার্স এবং চিকিৎসক চেয়ে স্বাস্থ্য ভবনকে চিঠি দিল বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল।
অনেকেই বলছেন, করোনার চতুর্থ স্ফীতি শুরু হয়েছে রাজ্যে। দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। এই পরিস্থিতিতে বাড়তি চিকিৎসক এবং নার্স চেয়ে স্বাস্থ্য ভবনকে চিঠি দিল বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল।
আইডি হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ মিলিয়ে গত জুন মাসে ১৮ জন চিকিৎসক চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। করোনার স্ফীতির কথা মাথায় রেখে আবার ৪ জুলাই অপর একটি চিঠিতে ১৫জন নার্স এবং ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার’ বিশেষজ্ঞ চাওয়া হয়েছে। রাজ্যে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা এবং রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা— দু’জনকেই এ বিষয়ে জানানো হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। তবে পাশাপাশিই হাসপাতাল সূত্রে আরও বলা হচ্ছে, চিকিৎসক চেয়ে জুন এবং জুলাই মাসে চিঠি দেওয়া হলেও এখনও চিকিৎসক পাওয়ার বিষয়ে কোনও ‘সদুত্তর’ মেলেনি।
রাজ্যে সংক্রামক রোগ চিকিৎসার ‘উৎকর্ষকেন্দ্র’ হিসেবে পরিচিত বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল। করোনায় সংক্রমিত গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অন্যতম সেরা কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে এই হাসপাতাল। আইডি হাসপাতালের অধ্যক্ষ অণিমা হালদারের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “রাজ্যে করোনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিন হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। সাম্প্রতিক কোভিড স্ফীতির জন্য নতুন ওয়ার্ডও চালু করা হয়েছে। এই অবস্থায় রোগীদের সুষ্ঠু পরিষেবা দিতে আরও চিকিৎসক, সিনিয়র রেসিডেন্ট বা মেডিক্যাল অফিসার জরুরি। আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসক ঘাটতি তো রয়েইছে। তাই স্বাস্থ্য ভবনের কাছে চিকিৎসক চেয়ে আবেদন করেছি।”
রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। কী করা যায় দেখা হচ্ছে।” প্রসঙ্গত, আইডি হাসপাতাল সূত্রের খবর, সেখানে আসতে চেয়ে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক আবেদন করেছিলেন কর্তৃপক্ষের কাছে। সেই আবেদনপত্রও হাসপাতালের তরফে স্বাস্থ্য ভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।আইডি হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, বুধবারেও ২০ জনের বেশি রোগী ক্রিটিক্যাল কেয়ারে ভর্তি ছিলেন। সেই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কিন্তু ওই বিভাগে পর্যাপ্ত লোক নেই। ওই চিকিৎসকের কথায়, “কয়েকজন চিকিৎসক ডিটেলমেন্টে রয়েছেন এই বিভাগের জন্য। সাকুল্যে চার বা পাঁচ জন। সেই নিয়েই নিত্যদিন জোড়াতালি দিয়ে চালাতে হচ্ছে।”
হাসপাতাল সূত্রের খবর— মেডিসিন, বক্ষ, শিশু, মাইক্রোবায়োলজি, রেডিয়োলজি, প্যাথলজি বিভাগের জন্য সিনিয়র রেসিডেন্ট বা মেডিক্যাল অফিসার চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আইডি হাসপাতালে ৩০টি মেডিক্যাল অফিসারের পদ থাকলেও তার ৫০ শতাংশই খালি রয়েছে বলে জানান এক চিকিৎসক। সিনিয়র রেসিডেন্টের স্থায়ী পদ নেই। এক চিকিৎসক জানান, করোনার ‘ডেল্টা’ রূপের বাড়াবাড়ির সময় হাসপাতালে ১৪ জন সিনিয়র রেসিডেন্ট ছিলেন। যাঁরা ছিলেন, গত কয়েক মাসে তাঁদের কারও বদলির নির্দেশ এসেছে আবার কেউ কেউ উচ্চশিক্ষার জন্য অন্যত্র চলে গিয়েছেন। এর মধ্যে দুই সিনিয়র রেসিডেন্টের অন্যত্র বদলির নির্দেশ এলেও তাঁদের আইডি হাসপাতাল থেকে এখনও ছাড়া হয়নি বলে একটি সূত্রে খবর। এই অবস্থায় করোনার জন্য ওয়ার্ড আরও বাড়াতে হলে আরও চিকিৎসক দরকার বলেই মনে করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আইডি হাসপাতালে করোনার ছি’টি ওয়ার্ড ছাড়াও ডায়েরিয়া রোগীদের জন্য দু’টি ওয়ার্ড রয়েছে। পাশাপাশি, ডেঙ্গি নিয়েও ভর্তি রয়েছেন এক রোগী। অন্যান্য সংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীদেরও চিকিৎসা চলছে। ফলে রোগীর চাপ বাড়ছে ক্রমশ। এখন অপেক্ষা স্বাস্থ্য ভবন কখন নতুন চিকিৎসক পাঠায়।