প্রাথমিকে পাশ-ফেল প্রথা চালু হলে স্কুলছুট বাড়তে পারে। আর সেই সুযোগে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) পরিচালিত স্কুল ওই সব পড়ুয়াদের ‘নিজেদের পথে’ চালিত করতে পারে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন বাম শিক্ষক সংগঠন। শুক্রবার বিকাশ ভবনে স্কুল স্তরে পাশ-ফেল প্রথা ফেরানো হবে কিনা, তা নিয়ে আলোচনায় শিক্ষামন্ত্রীকে এ কথা জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।
কেন এই আশঙ্কা?
বাম শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-এর সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের ব্যাখ্যা, পাশ-ফেল ফিরলে স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়বে। যাদের ভর্তি নেওয়ায় আগ্রহ দেখাবে আরএসএস পরিচালিত সরকারি অনুমোদনহীন স্কুলগুলি। কারণ, ওদের স্কুলে পাশ-ফেল বলে কিছু নেই।
শিক্ষামন্ত্রীর সামনে আর এক বাম শিক্ষক সংগঠন বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির স্বপন মণ্ডলের যুক্তি ছিল, ‘‘আরএসএস স্কুলছুট পড়ুয়াদের ভর্তি নিয়ে ‘নিজেদের পথে’ পরিচালিত করবে। নৈতিকতা ও পাঠ্যপুস্তকের শিক্ষার বদলে ধর্ম এবং অস্ত্রশিক্ষা দেবে।’’
স্বপনবাবুর দাবি, শিক্ষামন্ত্রী আধিকারিকদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে বলেছেন। পাশাপাশি, এ রকম কোনও অভিযোগ পেলে তাঁর দফতরে জানানোর অনুরোধ করেছেন।
বামেদের এই আশঙ্কাকে অবশ্য ‘অমূলক’ বলে মনে করেন আরএসএস নেতৃবৃন্দ। সংগঠনের মুখপাত্র জিষ্ণু বসুর কথায়, ‘‘এ রাজ্যে সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের পরিকাঠামোর যা হাল, তাতে এমনিতেই অভিভাবকেরা সেখানে না গিয়ে আরএসএস পরিচালিত স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করতে চাইছেন। এর জন্য স্কুলছুট কোনও কারণ হবে না।’’
আরএসএস-এর স্কুলগুলি নিয়ে সন্তুষ্ট নয় সরকারও। গত মার্চে বিধানসভায় আরএসএস-এর স্কুল নিয়ে এক আলোচনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। পার্থবাবু সে দিন বলেছিলেন, ‘‘এই সব স্কুলগুলির কাজকর্মের উপর কড়া নজর রাখছে সরকার। আমরা বিভাজনের রাজনীতি মেনে নেব না।’’
এই বৈঠকে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় রীতিমত ক্ষুব্ধ পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। শনিবার, সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, ‘‘এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের ব্রাত্য করে রাখাটা অপমান।’’ তিনি জানান, প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাশ-ফেল রাখাটা শিক্ষাবিজ্ঞানগত ভাবে অনুচিত বলে মনে করে সমিতি। এর ফলে শিক্ষাজীবনের শুরুতেই ফেল করার আতঙ্ক স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়াবে।