বামফ্রন্ট ও সহযোগী ১৫ দলের অবস্থান কর্মসূচিতে সূর্য্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিম নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সঙ্কীর্ণতা ছেড়ে বৃহত্তর ঐক্যের ডাক উঠে এল সিপিএম-সহ ১৫ দলের মঞ্চ থেকে। বাম নেতাদের বক্তব্য, কেন্দ্রের সরকার পরির্তনের লড়াই অনেক বড়। সেই লড়াইকে জোরদার করে সাফল্য পেলে রাজ্যের লড়াই সহজ হবে, অসহনীয় পরিস্থিতিতে মানুষ ঐক্যবদ্ধ লড়াই চাইছেন। সেই প্রয়োজন বুঝে নেতাদেরও একজোট হতে হবে।
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের পরে এই প্রথম বামফ্রন্টের বাইরে বৃহত্তর মঞ্চের ডাকে পথে নেমে কর্মসূচি হল। পেট্রল, ডিজ়েল, রান্নার গ্যাস-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে ২৫ মে থেকে দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিল বাম দলগুলি। এ রাজ্যের ক্ষেত্রে তার সঙ্গেই যোগ হয়েছিল নিয়োগ-দুর্নীতি এবং নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ। জেলায় জেলায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচির পরে মঙ্গলবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় ভাবে ধর্না-অবস্থানের ডাক দেওয়া হয়েছিল ১৫টি দলের তরফে। অবস্থানের আগে কলকাতা পুরসভা থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল হয় কলকাতা জেলা সিপিএমের উদ্যোগে। আর অবস্থান কর্মসূচির পরে রানি রারসণি থেকে জানবাজার পর্যন্ত মশাল মিছিল করেন মহিলা সংগঠনগুলির নেত্রী-সমর্থকেরা।
বামপন্থী মহিলাদের মশাল মিছিল নিজস্ব চিত্র।
অবস্থান-মঞ্চে এ দিন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘ফুড, ফুয়েল এবং ফিনান্স— এই তিন ‘এফ’ তুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর হাতে। ভুগছেন সাধারণ মানুষ। আর এই যখন অবস্থা, তখন হইচই বাধানো হচ্ছে জ্ঞানবাপী নিয়ে। আসলে এরা জ্ঞানপাপী! মানুষের নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’’ মানুষের ঐক্য গড়তে নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বলেন সেলিম। একই বার্তা দিয়ে সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের ওই কথা আমরা সবাই বলি যে, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে। কিন্তু আগে তো ডাক দিতে হবে! অন্যদের কথাও শুনতে হবে। দরকারে চেয়ার ছেড়ে দিতে হবে। আমাদের বৃত্তটা আরও বড় করতে হবে।’’ বিধানসভা ভোটের সময়কার দ্বন্দ্ব সরিয়ে বামফ্রন্টের বাইরের বাম ও অন্য দলগুলির সঙ্গে সমন্বয়ের কথাই সূর্যবাবু বলেছেন বলে বাম সূত্রের ব্যাখ্যা।
অবস্থানে বক্তা ছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআইয়ের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, আরএসপি-র মনোজ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের হাফিজ আলম সৈরানি, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের কার্তিক পাল, সিআরএলআই-এর অসীম চট্টোপাধ্যায় (কাকা), ভারতের সাম্যবাদী দলের বর্ণালী মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। সূর্যবাবুদের সুরেই পিডিএসের রাজ্য সম্পাদক অনুরাধা পূততুণ্ড বলেন, ‘‘আমরা কখনও একসঙ্গে আছি, কখনও একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ছি, এটা মানুষ পছন্দ করছেন না। কেন্দ্র ও রাজ্যে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে সব সঙ্কীর্ণতা সরিয়ে আমাদের বাম, গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তুলতে হবে।’’ ধর্না-অবস্থানে তরুণ প্রজন্মের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।