ছবি পিটিআই।
কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল শ্রেণির মানুষের জন্য নির্বাচনী ইস্তাহারে একগুচ্ছ ঘোষণা কর বামফ্রন্ট। খসড়া ইস্তাহার প্রকাশ করে ওয়েবসাইটে তা দিয়ে দেওয়া হল মতামত সংগ্রহের জন্য। মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংযোজন বা সংশোধন সেরে ইস্তাহার চূড়ান্ত হবে।
রাজ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর জন্য পুরসভা ও পঞ্চায়েত স্তর থেকে শুরু করে রাজ্য স্তর পর্যন্ত কী ভাবে পরিকল্পনা করা হবে, তার কথা উল্লেখ রয়েছে খসড়া ইস্তাহারে। তারই পাশাপাশি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত মানুষের সুরাহার জন্য কিছু পদক্ষেপের কথা বলেছে বামফ্রন্ট। তার মধ্যে রয়েছে প্রবাসী বা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য রাজ্যে পৃথক দফতর চালু এবং বিশেষ সুরক্ষা প্রকল্প, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি মাসে ২১ হাজার টাকা, ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিলে সরকারি ভর্তুকি, বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের মাসে ২৫০০ টাকা ভাতা ও সস্তায় রেশন, দরিদ্র অংশের জন্য দু’টাকা কিলো দরে চাল বা আটা প্রতি মাসে ৩৫ কেজি করে প্রতি পরিবারে সরবরাহ করা-সহ বেশ কিছু ঘোষণা। শিক্ষা ক্ষেত্রে বাজেটের অন্তত ২০% বরাদ্দ করা এবং অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক ও সরকারের দিক থেকে বাধ্যতামূলক করার কথাও বলেছে বামফ্রন্ট।
ক্ষমতায় এলে বামফ্রন্ট বা জোটের সরকার কী করতে চায়, তার ব্যাখ্যা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কী করা হবে না, সেই ঘোষণাও রয়েছে খসড়া ইস্তাহারে। তার মধ্যে স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে এ রাজ্যে কেন্দ্রের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) বা এনপিআর কার্যকর হতে না দেওয়ার। বামফ্রন্টের বক্তব্য, ‘বৈষম্যমূলক নাগরিকত্বের ধারণা রাজ্যে কার্যকর করা হবে না’। উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন এবং ১৯৭১ সালের পরে আসা নাগরিকদের পুনর্বাসনের বিষয়টিতে ‘যথাযথ গুরুত্ব’ দেওয়ার কথা বলেছে বামেরা। তার জন্য কেন্দ্রের কাছেও প্রয়োজনীয় দাবি জানানো হবে। কেন্দ্রীয় কৃষি আইন তো বটেই, জাতীয় শিক্ষা নীতিও এ রাজ্যে কার্যকর করা হবে না বলে ঘোষণা করা হয়েছে বাম ইস্তাহারে।
কেন্দ্রের সংগৃহীত মোট রাজস্বের ৫০ ভাগ রাজ্যকে দেওয়ার এবং জিএসটি বাবদ রাজ্যের প্রাপ্য মেটানোর ক্ষেত্রে টালবাহানা বন্ধ করার দাবি তোলা হয়েছে ইস্তাহারে। রাজ্যে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বন্ধ বা বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে যেমন স্পষ্ট অবস্থানের কথা বলা হয়েছে, তেমনই গঙ্গা ও পদ্মার ভাঙন রোধ, সুন্দরবনের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার ভাঙন রোধে ও পরিবেশ রক্ষায়, কলকাতা-হলদিয়া বন্দরের নাব্যতা বৃদ্ধি, দার্জিলিঙের পার্বত্য এলাকায় বিনিয়োগে কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় ভর্তুকি আদায়ে রাজ্য সরকারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগের উল্লেখ রয়েছে। অন্য দিকে, প্রতিবন্ধীদের স্বার্থরক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন-১৭ কার্যকর করা, নারী নির্যাতন ও গার্হস্থ্য হিংসা প্রতিরোধে ওয়ার্ড, বরো বা ব্লক স্তরে সহায়তা কেন্দ্র গড়া, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের (এলজিবিটি) অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস রয়েছে ইস্তাহারে।
সংযুক্ত মোর্চার অন্য দুই শরিক কংগ্রেস এবং আইএসএফ-কে বাম ইস্তাহারের খসড়া পাঠানো হয়েছে। মত চাওয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষেরও। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর বক্তব্য, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের সব গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের প্রতি আমাদের আবেদন, আপনাদের গুরুত্বপূর্ণঁ মত পাঠান আগামী ২০ মার্চের মধ্যে। মানুষের মত নিয়েই আমরা আগামী সরকারের কর্মসূচি ঘোষণা করতে চাই।’’