মণিপুর নিয়ে বামফ্রন্টের অবস্থান-বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকারের পরিকল্পিত মদতেই মণিপুরে গোষ্ঠী সংঘর্ষ ও হিংসার তাণ্ডব চলতে দেওয়া হচ্ছে বলে সরব হল বামফ্রন্ট। মণিপুরের মানুষের প্রতি সংহতি জানাতে এবং সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে বামফ্রন্ট সোমবার শহরে অবস্থান-বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল। এ রাজ্যে নারী নিগ্রগের নানা ঘটনার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদের কথা বলেছেন বাম নেতৃত্ব। তবে অন্য ঘটনার সঙ্গে তুলনা টেনে মণিপুরের হিংসা ও নারী নির্যাতনকে যে লঘু করা যায় না, সে কথাই বারবার উঠে এসেছে তাঁদের মুখে। মণিপুরের ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভে নেমেছে কংগ্রেসও। তৃণমূল কংগ্রেসের ‘আজাদ হিন্দ’ সংগঠনের ডাকে মিছিল হয়েছে একই দিনে।
মৌলালিতে এ দিন বামেদের অবস্থান-বিক্ষোভে ছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, দলের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তী, আরএসপি-র মনোজ ভট্টাচার্য, তপন হোড়, সিপিআইয়ের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, আরসিপিআইয়ের মিহির বাইন প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে নিশানা করে বাম নেতারা বলেন, মণিপুরে সরকারি মদতে ‘হিংসার চাষ’ হতে দিয়ে বিজেপি গোটা দেশকে বিপজ্জনক দিকে ঠেলে দিয়েছে। সেলিমের বক্তব্য, ‘‘আমরা সকলের অধিকারের জন্য মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে লড়াইয়ের কথা বলি। কিন্তু আরএসএস-বিজেপি সব জনগোষ্ঠীকে টুকরো টুকরো করে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আজাদির স্লোগান দিয়েছিল বলে ওরা তাদের ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’ বলেছিল। মনিপুরে কি জেএনইউ-এর ছাত্র-ছাত্রীরা গিয়ে টুকরো টুকরো করছে?’’ বিজেপির ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের কাজে মানুষের হতাশা বাড়ছে বলে বাম নেতাদের দাবি। সেলিমের মন্তব্য, ‘‘সংবিধানের শাসন ভেঙে পড়েছে। ডেমোক্রেসি নয়, এটা মবোক্রেসি চলছে। ভারতকে প্রতিদিন টেনে নীচে নামাচ্ছে বিজেপি।’’
ওই সভায় বিমানবাবু বলেছেন, ‘বাংলার বুকেও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। সেগুলোও নিন্দনীয়। কিন্তু মণিপুরে জাতি দাঙ্গা এবং মা-বোনেদের উপরে বিদ্বেষমূলক নির্যাতনের সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা চলে না।’’ শহরের অন্য দিকে পথে নেমে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, মণিপুর নিয়ে সংসদের ভিতরে-বাইরে সর্বত্র তাঁদের প্রতিবাদ চলবে।
মণিপুর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এ দিন রাজভবনের সামনে বিক্ষোভ ছিল মহিলা কংগ্রেসের। বিক্ষোভ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের ধস্তাধস্তি বাধে। জেলা কংগ্রেস কমিটিগুলির ডাকে আজ, মঙ্গলবারও প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে কংগ্রেস। মণিপুরে আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়া এবং নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে আজই গান্ধী মূর্তির কাছে বিক্ষোভ-অবস্থানের ডাক দিয়েছে আম আদমি পার্টির (আপ) রাজ্য শাখা। অন্য দিকে, পঞ্চায়েত ভোটকে ঘিরে হিংসায় কংগ্রেসের ৭ জন-সহ ৫৭ জনের মৃত্যুর প্রতিবাদে এ দিন ইন্দিরা গান্ধীর মূর্তির নীচে দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের ডাকে অবস্থান-বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন প্রদীপ প্রসাদ, স্বপন রায়চৌধুরী, তপন আগরওয়াল, সুমন রায়চৌধুরী, জ়াহিদ হোসেনেরা।