ধর্মঘটের সমর্থনে ধর্মতলায় যুব কংগ্রেস ও ছাত্র পরিষদের বিক্ষোভ এবং পুলিশের হাতে গ্রেফতার। নিজস্ব চিত্র।
দিনের ছবি দেখলে, ধর্মঘট আঁচড় কাটতে পারেনি। জেলায় জেলায় কিছু মিশ্র সাড়া মিললেও কলকাতায় ধর্মঘটে তেমন কোনও সাড়া নেই। কিন্তু দিনের ছবি ছাপিয়ে নির্বাচনের আগে দূরের ছবি দেখতে চাইছে বামেরা। নবান্ন অভিযান এবং তার উপরে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে হরতাল উপলক্ষে গোটা রাজ্যে সংগঠনকে রাস্তায় নামিয়ে বিধানসভা ভোটের আগে সংগঠনের চাকায় তেল মাখানো গেল বলেই মনে করছে তারা। সঙ্গে বাড়তি পাওনা বলতে, ধর্মঘটে সাংগঠনিক লড়াইয়ে জোট-সঙ্গী কংগ্রেসকে পাশে পাওয়া।
ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ১২ ঘণ্টার নোটিসে এ বারের হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছিল। সাম্প্রতিক কালে বামেরা যত ধর্মঘট ডেকেছে, তার প্রতিটিই বহু আগে থেকে ঘোষিত ও নির্ধারিত। এমন তাৎক্ষণিক ধর্মঘট ‘সফল’ করতে শুক্রবার রাজ্যের নানা প্রান্তে রেল ও সড়ক অবরোধ করতে দেখা গিয়েছে বাম কর্মী-সমর্থকদের। কোথাও কোথাও ‘দাদাগিরি’ করে জবরদস্তি দোকানপাট বন্ধ করানোর অভিযোগও উঠেছে। জোর খাটানোর ঘটনাকে ‘অবাঞ্ছিত’ আখ্যা দিয়ে বাম নেতারা বলেছেন, তাঁরা গায়ের জোরে ধর্মঘট করা বা ধর্মঘট ভাঙা কোনওটাই সমর্থন করেন না। ‘বিছিন্ন’ ঘটনা ছাড়া ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে বলেই দাবি করেছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। তাঁর দাবি, বাস-ট্রেন চললেও যাত্রীসংখ্যা কম ছিল, অফিস-কাছারিতেও হাজিরা ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় কম।
শাসক দল তৃণমূলের তরফে তাপস রায় বিমানবাবুদের কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘বন্ধ ও বন্ধ্যা রাজনীতি থেকে সিপিএম বেরোতে পারল না! বাংলার মানুষ এই গাজোয়ারি প্রত্যাখ্যান করেছেন তবু তারা শিখল না। নির্বাচনের আগে সিপিএম ও কংগ্রেস ভুলে গিয়েছে, বাম জমানায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, লাঠির থেকে বন্দুকই বেশি ব্যবহার করেছে। এ বারেও ওরা প্রত্যাখ্যাত হবে।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আবার একই সঙ্গে বাম ও তৃণমূলকে বিঁধেছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘কোথায় ধর্মঘট? দিদিমণি সিপিএমকে ডেকে এনে লাঠি মেরে জোর করে প্রাসঙ্গিক করার চেষ্টা করছেন বিজেপির ভোট কাটার উদ্দেশ্যে! তাই সিপিএম ধর্মঘট ডেকেছিল। কিন্তু মানুষ এখন বন্ধের রাজনীতি থেকে বেরোতে চাইছেন।’’
ধর্মঘটকে সামনে রেখে সংগঠনের প্রচেষ্টার দিকেই নজর দিয়েছেন বিমানবাবুরা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সকাল থেকে পথে নেমেছিলেন বাম, সহযোগী দলসমূহ ও কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশ বহু জায়গায় ধর্মঘট সমর্থনকারীদের গ্রেফতার করেছে, অনেক জায়গায় লাঠি চালিয়ে, বলপ্রয়োগ করে অবস্থানকারীদের আহত করেছে। কিন্তু ছাত্র-যুবদের উপরে পুলিশি নৃশংসতার প্রতিবাদ হয়েছে সর্বত্র।’’ কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে এসে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও বলেছেন, ‘‘অনেকেই বলছেন, বামেদের আর কী বাকি আছে? আমরা বলছি, বাকি আছে ভবিষ্যৎ! তরুণ প্রজন্মই ভবিষ্যৎ গড়ার কাজ করবে।’’
নবান্ন অভিযানের দিনের ঘটনার জেরে বাম যুব ও ছাত্র নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক কঠোর ধারায় মামলা রুজু করছে পুলিশ। সিপিএমের মহম্মদ সেলিম, বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেসের নেতা আব্দুল মান্নান, সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যেরা পাল্টা বলেছেন, তৃণমূলের ‘দলদাস’ প্রশাসনের সঙ্গে ‘হিসেব’ বুঝে নেওয়া হবে। ধর্মঘটের সমর্থনে এ দিন বাম নেতা বিমানবাবু, সূর্যকান্ত মিশ্র, সেলিম, মনোজ ভট্টাচার্যদের সঙ্গে এন্টালি থেকে কলেজ স্ট্রিট পর্যন্ত মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন কংগ্রেসের মান্নান, প্রদীপবাবু, অমিতাভ চক্রবর্তী, সুমন পালেরা। অন্য দিকে, পুলিশি আচরণের প্রতিবাদে যুব কংগ্রেস ও ছাত্র পরিষদ ধর্মতলায় অবরোধ করলে লাঠি চালিয়ে তা তুলে দেয় পুলিশ। দুই সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শাদাব খান, সৌরভ প্রসাদ-সহ কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার করা হয়।
তবে যৌথ মিছিলে এ দিন বিড়ম্বনাতেও পড়তে হয়েছে বাম ও কংগ্রেস নেতাদের। শিয়ালদহে সুরেন্দ্রনাথ কলেজের কাছে কিছু দোকানের শাটার জোর করে বন্ধ করার চেষ্টা করেন মিছিলের শেষের দিকে থাকা কিছু আইএনটিইউসি সমর্থক, ভাঙচুর করা হয় গাড়িতেও। এগিয়ে যান কিছু বাম সমর্থকও। খবর পেয়ে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী, কংগ্রেসের অমিতাভবাবুরা ছুটে এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। সুজনবাবু বলেন, অতি উত্তেজনায় কেউ এমন কাজ করে থাকলেও তা সমর্থনযোগ্য নয়।