বাম কংগ্রেস মিছিল।—নিজস্ব চিত্র।
কলকাতায় এসে তাঁদের বাংলা দখলের লক্ষ্য বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন অমিত শাহ। দাবি করেছিলেন, পাঁচ বছর সময় দিলে ‘সোনার বাংলা’ গড়ে দেবেন। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পথে নেমে শাহকে জবাব দিল বাম ও কংগ্রেস।
দিল্লিতে হিংসার প্রতিবাদ ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের ব্যর্থতার অভিযোগ সামনে রেখে সোমবার একসঙ্গে রাস্তায় নেমেছিল বাম ও সহযোগী মিলে ১৭ দল এবং কংগ্রেস। সেই মিছিল থেকেই এক দিকে যেমন দিল্লি-কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে তদন্ত কমিটি গঠন ও শাহের ইস্তফার দাবি উঠেছে, তেমনই বাংলায় সঙ্ঘ-বিজেপির ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি’কে এক ইঞ্চি জমিও না ছাড়ার ডাক দেওয়া হয়েছে। শাহের সফরের দিন রবিবার বিজেপির মিছিল থেকে ‘গোলি মারো’ স্লোগানের প্রসঙ্গ তুলেই সরব হয়েছেন বাম ও কংগ্রেস নেতারা। সেই সঙ্গেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘দ্বিচারিতা’র অভিযোগও ফের তুলেছেন তাঁরা।
রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে শুরু হয়ে মহাজাতি সদনের সামনে এ দিন শেষ হয় বাম ও কংগ্রেসের পতাকাহীন মিছিল। নির্মল চন্দ্র স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট, বিধান সরণি, বিবেকানন্দ রোড হয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে মহাজাতি সদন পর্যন্ত দীর্ঘ পথের মিছিলে কিছুটা হেঁটে বাকি রাস্তা হুডখোলা জিপে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র, আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক বিশ্বনাথ চৌধুরী প্রমুখ। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র-সহ অন্য বামও কংগ্রেস নেতারা অবশ্য আগাগোড়াই হেঁটেছেন। এক দিন মিছিল করেই যে দায়িত্ব শেষ নয়, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
মিছিল শেষে সভা।—নিজস্ব চিত্র।
মিছিল শেষে সূর্যবাবু বলেন, ‘‘আমরা কেন নরেন্দ্র মোদী বা অমিত শাহকে ‘গো ব্যাক’ বলেছি, এখন বোঝা যাচ্ছে। এটা কোনও ব্যক্তির ব্যাপার নয়, ওঁরা একটা রাজনীতির প্রতীক। ওঁদের হাত ধরে কলকাতায় ‘গোলি মারো’ স্লোগান এসে পড়েছে। আমরা চ্যালেঞ্জ করছি, বাংলায় এই রাজনীতি চলবে না!’’ সেই সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, ‘‘দিল্লিকে শ্মশানে পরিণত করেছেন যিনি, তিনি বলছেন সোনার বাংলা গড়বেন!’’ সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘গুজরাতের মানুষ বিজেপিকে ২৫ বছর দিয়েছেন। মোদী নিজেও মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তার পরেও ট্রাম্পের সফরে অনুন্নয়ন এবং দারিদ্র ঢাকতে পাঁচিল তুলতে হয়! তাঁরা বলছেন, পাঁচ বছরে সোনার বাংলা গড়ে দেবেন!’’
বাম কংগ্রেস মিছিল।—নিজস্ব চিত্র।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেনবাবুর বক্তব্য, ‘‘কে কটা আসন পাব, তার জন্য মিছিল করছি না। রাস্তায় নেমেছি বাংলার রাজনীতি ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য।’’ রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিএএ, এনআরসি, এনপিআর-এর বিরোধিতা করলেও অন্য কোনও সংগঠনের প্রতিবাদে কেন পুলিশ ও শাসক দল বাধা দিচ্ছে, সেই প্রশ্ন তোলেন বাম ও কংগ্রেস নেতারা। ‘বাংলার গর্ব মমতা’ কর্মসূচি সূচনা করতে গিয়ে এ দিনই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সিপিএম ও কংগ্রেস ‘ঘোলা জলে মাছ’ ধরছে। সেলিমের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘আমরা না হয় ঘোলা জলে মাছ ধরছি। কিন্তু জলটা ঘোলা করল কে? আপনি! বাংলায় ১৯৯৯ সালে বিজেপির সঙ্গে জোট, গুজরাত দাঙ্গার পরেও কেন্দ্রে এনডিএ সরকারের মন্ত্রী কে ছিল?’’ আর সোমেনবাবুর মন্তব্য, ‘‘এ রাজ্যে সরকার ও শাসক দলের নেত্রী নিজের ঢাক নিজেই পেটাচ্ছেন! কর্মসূচির নাম শুনে সেই পুরনো ছড়াটা মনে পড়ছে— নিজে যারে বড় বলে বড় সে-ই নয়, লোকে যারে বড় বলে বড় সে-ই হয়!’’