হাজিরা বহাল রাখতে ছুটি বাতিলই অস্ত্র

ক্ষমতায় আসার পর থেকে যাবতীয় ধর্মঘটের মোকাবিলায় কোমর বেঁধে নামতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল সরকারকে। এ বারেও ৩০ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত ধর্মঘটের দিন বিরোধীদের ডাকা সাধারণ ধর্মঘট ব্যর্থ করতে সর্বশক্তি নিয়েই নামছে তারা। ওই দিন বাংলা যাতে সচল থাকে, তার জন্য একই সঙ্গে হুমকি আর হাজিরার আয়োজন চলছে পুরোদমে। হাজিরার আয়োজন মানে পরিবহণ সচল রেখে কর্মীদের কর্মস্থলে উপস্থিতির বন্দোবস্ত করা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৬
Share:

ক্ষমতায় আসার পর থেকে যাবতীয় ধর্মঘটের মোকাবিলায় কোমর বেঁধে নামতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল সরকারকে। এ বারেও ৩০ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত ধর্মঘটের দিন বিরোধীদের ডাকা সাধারণ ধর্মঘট ব্যর্থ করতে সর্বশক্তি নিয়েই নামছে তারা। ওই দিন বাংলা যাতে সচল থাকে, তার জন্য একই সঙ্গে হুমকি আর হাজিরার আয়োজন চলছে পুরোদমে। হাজিরার আয়োজন মানে পরিবহণ সচল রেখে কর্মীদের কর্মস্থলে উপস্থিতির বন্দোবস্ত করা। সেই জন্য ইতিমধ্যেই ৩০ এপ্রিল পরিবহণ নিগমগুলিতে সব ছুটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তি জারি না-হলেও আজ, মঙ্গলবার রাজ্য সরকারি কর্মীদেরও ওই দিন ছুটি বাতিল করা হবে বলে নবান্ন সূত্রের খবর। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার ধর্মঘটের বিরোধী। কাজেই ধর্মঘটের বিরোধিতা করে যেমন প্রতি বার সার্কুলার বেরোয়, এ বারেও বেরোবে। সব কর্মীকে ওই দিন কাজে আসার নির্দেশও দেওয়া হবে।’’

Advertisement

আর হুমকি মানে ধর্মঘটের দিন গরহাজিরার মোকাবিলায় বেতনে কোপ বা চাকরিতে ছেদ টানার হুঁশিয়ারি। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এ রাজ্যে যত বার ধর্মঘট হয়েছে, প্রতি বারেই সরকারি কর্মচারীদের কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ২০১২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি, বামপন্থী দলগুলির ডাকা ধর্মঘটের দিন সরকারি কর্মচারীরা কাজে যোগ না-দিলে ‘ব্রেক অফ সার্ভিস’ বা চাকরিতে ছেদ টানার হুমকিও দেন মুখ্যমন্ত্রী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ধর্মঘটের দিন অনুপস্থিত কর্মচারীদের শুধু এক দিনের বেতনই (‘ডায়েজ নন’) কেটে নিয়েছিল সরকার। এ বারেও একই ভাবে বিরোধীদের ধর্মঘটের দিন সরকারি কর্মীরা কাজে যোগ না-দিলে এক দিনের মাইনে কাটা হতে পারে বলে সোমবার নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।

হাজিরা নিশ্চিত করার ব্যাপারে শাসক দল প্রভাবিত সরকারি কর্মী সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের নেতাদের এ দিন বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে। এতটাই যে, ওই সংগঠনের নেতা সৌম্য বিশ্বাস ও সঞ্জীব পালেরা জানান, এ বার ধর্মঘট ব্যর্থ করতে তাঁরা ওই দিন অফিসে আসবেন। তবে আগের দিন রাত জাগার দরকার হবে না। দুই নেতাই বলেন, ‘‘প্রশাসনের উপরে আমাদের আস্থা আছে। এ রাজ্যে বাম শব্দটাই মুছে গিয়েছে। কর্মচারীদের কাজে যোগ দিতে কোনও অসুবিধাই হবে না।’’

Advertisement

বিরোধী পক্ষও বসে নেই। ধর্মঘট সমর্থন করতে তারা প্রচারে নামবে বলে জানিয়েছে সিপিএম প্রভাবিত সরকারি কর্মী সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটি। বিজেপি প্রভাবিত কর্মী সংগঠন সরকারি কর্মচারী পরিষদ ইতিমধ্যেই ধর্মঘট সমর্থন করেছে। তাদের নেতা সঙ্কেত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠনের কেউই ৩০ এপ্রিল কাজে আসবেন না। আর ধর্মঘটে আমাদের ভূমিকা কী হবে, আলোচনার পরে জানিয়ে সেটা দেওয়া হবে।’’ প্রস্তাবিত ধর্মঘটে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে আইএনটিইউসি অনুমোদিত কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ-ও। তাদের নেতা মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরভোটে অনেক সরকারি কর্মচারীও আক্রান্ত হয়েছেন। তাই নৈতিক ভাবে আমরা এই ধর্মঘট সমর্থন করছি।’’ একই সঙ্গে পরিবহণ ধর্মঘট থাকায় কর্মচারীরা একান্তই যদি কাজে যোগ দিতে না-পারেন, তাতে তাঁদের এক দিনের বেতন না-কাটারও আর্জি জানিয়ে রেখেছেন মলয়বাবু।

প্রস্তাবিত ধর্মঘটের দিন কাজের জায়গায় পৌঁছতে সাধারণ মানুষের যাতে কোনও অসুবিধা না-হয়, সেই জন্য সরকারের তরফে সরকারি এবং বেসরকারি— সব ধরনের পরিবহণই চালু রাখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (সিএসটিসি) সূত্রের খবর, অন্য দিন সিএসটিসি-তে এক-একটি শিফটে গড়ে ৪০০ বাস চলে। ৩০ এপ্রিল তা বাড়িয়ে ৪৫০ করা হবে। একই ভাবে ক্যালকাটা ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি) এবং পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহণ নিগম (ডব্লিউবিএসটিসি)-ও সে-দিন অতিরিক্ত বাস চালাবে। ৩০ তারিখে রাস্তায় অটো এবং ট্যাক্সিও যাতে পর্যাপ্ত সংখ্যায় থাকে, তার ব্যবস্থা করার জন্য ইতিমধ্যেই শাসক দলের তরফে তাদের শ্রমিক সংগঠনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কলকাতায় পুরভোটের দিন পরীক্ষা থাকায় সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রী এবং তাঁদের অভিভাবকদের চিন্তার অন্ত ছিল না। একই ভাবে বিরোধী শিবির ৩০ এপ্রিল ধর্মঘট ডাকায় ওই দিন নির্ধারিত পরীক্ষা কী ভাবে হবে বা আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। ওই দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্ট থ্রি-র পরিবেশবিদ্যার পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ওই দিন পরীক্ষা হবে কি না, তা জানিয়ে দেওয়া হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই ওই দিনের পরীক্ষাগুলির পরিবর্তিত সূচি জানিয়ে দিয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শাখার পরীক্ষা আছে বৃহস্পতিবার। সেটা হবে কি না, এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement