বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। ফাইল চিত্র।
এজলাস অবরোধ এবং বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার অভিযোগে গত সপ্তাহে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। তার প্রতিবাদে সোমবার কালা দিবস পালন করল তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের একাংশ। হাই কোর্ট চত্বরে তাঁরা মিছিলও করেন। পাল্টা মিছিল করেন বিজেপিপন্থী আইনজীবীরাও। তাঁদের বক্তব্য, সুষ্ঠুভাবে বিচারের কাজ চলুক। সেখানে কোনও বাধা যেন না আসে।
বিচারপতি মান্থার কয়েকটি নির্দেশের বিরুদ্ধে গত সোমবার আদালতের ১৩ নম্বর কক্ষের দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের একাংশের বিরুদ্ধে। বিচারপতির এজলাস অবরোধ এবং বয়কটের ফলে অন্য আইনজীবীরা বিচারে অংশ নিতে পারেননি। থমকে যায় বিচারের কাজ। এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে আদালত অবমাননার মামলা করেন বিচারপতি মান্থা। পরে এই মামলাটির বিচার করতে ৩ বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ গঠন করেন হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। বিচারপতি মান্থার ওই নির্দেশের প্রতিবাদে গত শুক্রবার কালা দিবস পালনের ডাক দিয়েছিল রাজ্য বার কাউন্সিল। সেই মতো সোমবার দুপুরে আইনজীবীদের একাংশ কালো ব্যাজ পরে প্রতিবাদ করেন। রাজ্য সরকারের আইনজীবী সঞ্জয় বর্ধন বলেন, “আন্দোলনের অধিকার সবার রয়েছে। আইনজীবীদেরও থাকা উচিত। যা ঘটেছে তাতে পূর্ণ সমর্থন নেই। কোথায় কোনও সমস্যা থাকলে আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলা যেত। একটা অংশ বিষয়টিকে হাতিয়ার করেছে এবং অপপ্রচার চলছে।
বিচারপতি মান্থার আদালত অবমাননার রুল জারি করা নিয়ে তৃণমূলপন্থী আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকার বলেন, “বিচারপতি আমাদের কাছে অভিভাবকের মতো। আমরা কোনও ভুল করে থাকলে তিনি নিশ্চয়ই তা সংশোধন করে দেবেন। কিন্তু তাই বলে আদালত অবমাননার রুল জারি করা সমর্থনযোগ্য নয়।” পক্ষান্তরে বিজেপি সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে লোকনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, বিচারবিভাগকে ভয় পাওয়ানো হচ্ছে। বিচারবিভাগ স্বাধীন ভাবে কাজ করুক, এটাই আমরা চাই।”
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহ থেকেই কলকাতা হাই কোর্ট চত্বরে চলছে আইনজীবীদের একাংশের বিক্ষোভ। যা এক সময় হাতাহাতির পর্যায়েও পৌঁছয়। পরে বিচারপতি মান্থার এজলাস বয়কটের ডাক দেন বার কাউন্সিলের সদস্যদের একাংশ। ফলে বিচারপতি মান্থার এজলাসে আইনজীবীদের অনুপস্থিতির কারণে থমকে যায় বহু মামলার বিচারপ্রক্রিয়া। ভারতীয় বার কাউন্সিল সেই ঘটনার নিন্দা করে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে। গত বৃহস্পতিবার সেই সাংবাদিক বৈঠকে কলকাতার বার কাউন্সিলের সদস্যদের আচরণকে ‘অভব্যতা’ বলেও মন্তব্য করেন ভারতীয় বার কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলেছিলেন, ‘‘বার এই ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করে না। আমরা মনে করি, যাঁরা এ সব করেছেন, তাঁদের প্র্যাকটিস করার অনুমতি পাওয়া উচিত নয়। আরও দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল, যে বার কাউন্সিল আইনজীবীদের শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে শেখায়, ভদ্র, বিনয়ী এবং সংযত আচরণ করতে শেখায়, তারই সদস্যরা এমন করেছেন।’’